শিলিগুড়ির হাসমি চকে বিজেপির সভায় দলের জেলা সভাপতি। —নিজস্ব চিত্র।
প্রায় আড়াই কোটি টাকা দুর্নীতির মামলায় যাঁর বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই সাসপেন্ড হওয়া রেজিস্ট্রার দিলীপ সরকারের সঙ্গে উত্তরবঙ্গ মন্ত্রী গৌতম দেব বৈঠকে বসবেন কেন, সেই প্রশ্ন তুলল বিজেপির দার্জিলিং শাখা। বৃহস্পতিবার শিলিগুড়ির হাসমি চকে দলীয় সভায় বিজেপির দার্জিলিং জেলা সভাপতি রথীন বসু ওই প্রশ্ন তুলেছেন।
রথীনবাবুর বক্তব্য, “সিবিআইয়ের ডিরেক্টর রঞ্জিত সিংহের বাড়িতে কারা দেখা করেছিলেন তা নিয়ে তৃণমূল সরব হয়েছে। টু-জি স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্তের সঙ্গে সিবিআই ডিরেক্টর দেখা করেছেন, এই অভিযোগেও হইচই করছে তৃণমূল। অথচ শিলিগুড়িতে মুখ্যমন্ত্রীর শাখা সচিবালয় উত্তরকন্যায় দেখা যাচ্ছে, আর্থিক দুর্নীতির মামলায় পুলিশ চার্জশিট দিয়েছে যাঁর বিরুদ্ধে সেই সাসপেন্ড হওয়া রেজিস্ট্রারের সঙ্গে গৌতম দেব দেখা করছেন। এতে তো অনেকেই তদন্ত প্রভাবিত হওয়ার আশঙ্কা করতে পারেন।”
এর পরেই রথীনবাবু জানান, যে হেতু ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দার্জিলিং আদালত তো বটেই, দ্বিতীয় একটি মামলা সুপ্রিম কোর্টেও চলছে। ফলে, কোনও অবস্থায় রাজ্যের বিরুদ্ধে যাতে মামলা প্রভাবিত করার অভিযোগ না ওঠাই বাঞ্ছনীয় বলে মনে করেন বিজেপির জেলা সভাপতি। যদিও উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতমবাবু এবং দিলীপবাবু, দু’জনেই বিষয়টি একেবারেই ‘সৌজন্যমূলক সাক্ষাৎ’ বলে দাবি করেছেন।
এই অবস্থায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরেও নানা প্রশ্ন দানা বাঁধছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক ও অফিসাররা জানান, বহু টালবাহানার পরে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপ ওই দুর্নীতি মামলার চার্জশিট হয়। এর পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দিলীপবাবুকে সাসপেন্ড করেন। অফিসার-শিক্ষকদের একাংশের আশঙ্কা, উত্তরবঙ্গের অন্যতম প্রভাবশালী মন্ত্রী গৌতমবাবুর সঙ্গে দিলীপবাবুর সৌজন্য সাক্ষাৎ হলেও তার নানা ব্যাখ্যা হতে পারে। কারণ, ওই দুর্নীতির মামলাটি এখনও বিচারাধীন। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক প্রবীণ শিক্ষক-কর্মী জানান, অতীতে বিভাগীয় শাস্তির মুখে পড়া একজন কর্মীকে একজন প্রাক্তন উপাচার্যের ঘরে দীর্ঘ সময় বৈঠক করা নিয়ে তুমুল বিতর্ক হয়েছিল। ওই বৈঠকের সময়ে বাইরে লালবাতি জ্বালানো হয়েছিল বলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মীদের একাংশ দাবি করেন। সে জন্য এ ক্ষেত্রেও বিতর্ক ক্রমশ দানা বাঁধছে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকেই মনে করেন।
প্রসঙ্গত, বুধবার উত্তরকন্যায় উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন দিলীপবাবু। এর পরেই বিশ্ববিদ্যালয় সহ নানা মহলে হইচই পড়ে যায়। কারণ, বাম আমলে দিলীপবাবুর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে পুলিশে অভিযোগ দায়ের হলেও চার্জশিট পেশ হয়নি। রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতাসীন হওয়ার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে পুলিশ দ্রুত চার্জশিট পেশ করে। এ দিন মন্ত্রী গৌতমবাবু বলেন, “মনে রাখতে হবে কোনও দুর্নীতি বা অনিয়মের সঙ্গে রাজ্যের বর্তমান সরকার কোনও আপস করে না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy