Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

আগুন দেখে ট্রেন রুখে পুরস্কৃত কর্মী

বড় অগ্নিকান্ডের থেকে তেলবাহী ট্রেন বাঁচানোর স্বীকৃতি হিসাবে পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে রেলকর্মী রুহিদাস পালকে। কোচবিহার জেলার ঘুমানিরহাট স্টেশনের আওতায় থাকা ৫৫ নম্বর লেভেল ক্রসিংয়ের গেটম্যান তিনি।

অরিন্দম সাহা
কোচবিহার শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৪ ০২:৩৩
Share: Save:

বড় অগ্নিকান্ডের থেকে তেলবাহী ট্রেন বাঁচানোর স্বীকৃতি হিসাবে পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে রেলকর্মী রুহিদাস পালকে। কোচবিহার জেলার ঘুমানিরহাট স্টেশনের আওতায় থাকা ৫৫ নম্বর লেভেল ক্রসিংয়ের গেটম্যান তিনি। সোমবার রাতে ঘুমানিরহাট-ফালাকাটা স্টেশনের মাঝে ওই রেলগেট পার হওয়ার সময় ডিজেলবাহী একটি ট্রেনের ট্যাঙ্কারের নিচে আগুনের ফুলকি বার হতে দেখেন ওই রেলকর্মী। তড়িঘড়ি ট্রেনের গার্ডকে লাল আলো দেখান তিনি। জরুরি ভিত্তিতে ট্রেনটিকে ক্রসিংয়ের কাছে দাঁড় করিয়ে দেন চালক। ঘোকসাডাঙ্গা থানার ওসি বিশ্বাশ্রয় সরকারের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছান। নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ কাটে রেলকর্মীদের।

দায়িত্ব পালনে ওই ‘নিষ্ঠা’র স্বীকৃতি হিসাবেই মঙ্গলবার ওই গেটম্যানকে ‘ম্যান অব দ্য মান্থ’ পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের আলিপুরদুয়ার ডিভিশন। ডিভিশনের প্রায় সাত হাজার কর্মীর মধ্যে ওই পুরস্কারপ্রাপ্তি অত্যন্ত মর্যাদার। ডিভিশন্যাল ম্যানেজার বীরেন্দ্র কুমার বলেন, “ওই রাতে কর্তব্য পালনে ওই কর্মী যে নিষ্ঠা দেখিয়েছেন, তা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য। শুরুতেই আগুনের ফুলকি বার হওয়ার ঘটনা ধরা না পড়লে বড় বিপদের আশঙ্কা ছিল।” তিনি জানান, ওই কর্মীর তত্‌পরতায় তা এড়ানো গিয়েছে। উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের জেনারেল ম্যানেজার আরএস ভিরদিও রেল কর্তাদের কাছে ওই কর্মীর সম্পর্কে খোঁজ নেন।

রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, অসম থেকে ওড়িশার ভুবনেশ্বরে রওনা হয়েছিল ডিজেলের ট্যাঙ্কার ভর্তি ওই ট্রেনটি। সোমবার রাত ১২টা নাগাদ ট্রেনটি গুমানিরহাট স্টেশনের পরে ৫৫ নম্বর রেলগেটে ঢোকে। সে সময় রুহিদাস পাল সেখানে ‘গেটম্যানের’ দায়িত্বে ছিলেন। রেলকর্মীরা জানান, সাধারণত এভাবে টানা কয়েক ঘণ্টা ট্রেনটি চলতে থাকলে বড়সড় অগ্নিকান্ডের আশঙ্কা থাকে। তাই বিষয়টি নজরে আসতেই এতটুকু দেরি না করে ট্রেনটিকে দাঁড় করানোর ‘সিগন্যাল’ দেখান রুহিদাসবাবু। রাতেই ট্রেনটিকে গুমানিরহাট স্টেশনে ফিরিয়ে আনা হয়।

রেলের কয়েকজন অফিসার জানান, ইঞ্জিনের পরের ট্যাঙ্কারটির একটি চাকার ‘রোলার জ্যাম’ হয়ে গিয়েছিল। ওই বিকল রোলারের ঘর্ষণে আগুন বার হতে থাকে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে। এমন ঘটনা অস্বাভাবিক নয়।

প্রতি মাসেই বড় দুর্ঘটনা এড়ানোয় ভূমিকা থেকে জনস্বার্থে ভাল কাজের নিরিখে রেলের বিভিন্ন ডিভিশনে ‘ম্যান অব দ্য মান্থ’ পুরস্কারের রেওয়াজ চালু রয়েছে। পুরস্কার হিসাবে নগদ এক হাজার টাকা, শংসাপত্র দেওয়া হয়। এছাড়া ডিভিশন সদরে নির্দিষ্ট বোর্ডে ওই কর্মীর কৃতিত্ব ছবি-সহ উল্লেখ করা হয়। সব থেকে বড় কথা সংশ্লিষ্ট কর্মীর ‘সার্ভিস বুকে’ও ওই কৃতিত্ব লেখা হয়। যা বিভাগীয় পদোন্নতির ক্ষেত্রেও সংশ্লিষ্ট কর্মীদের কিছুটা এগিয়ে রাখে।

রুহিদাসবাবু অবশ্য এখনই এসব নিয়ে এতটা ভাবতে নারাজ। রেলকর্তাদের তিনি শুধু সঠিকভাবে কাজ করার চেষ্টা করেছেন বলে জানিয়েছেন। রুহিদাসবাবু বলেন, “আগুনের ফুলকি দেখে বিপদের কথা ভেবে এতটুকু দেরি করতে চাইনি। আমি আমার কাজ করেছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

fire goods train reward ruhidas pal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE