Advertisement
০১ মে ২০২৪

আলু নিয়ে ক্ষোভে ফড়েদের তোপ প্রশাসনের

হিমঘরে আলু মজুতের পর্যাপ্ত জায়গা ফাঁকা রয়েছে বলে দাবি জলপাইগুড়িতে। তারপরেও বন্ড দেওয়া হচ্ছে না অভিযোগ তুলে কেন পথ অবরোধ করা হচ্ছে বলে প্রশ্ন উঠল ওই জেলার প্রশাসনিক মহলে। গত রবিবার এবং মঙ্গলবার ওই ইস্যুতে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধের কারণ অনুসন্ধানের পরে আন্দোলনকারীদের মধ্যে কতজন চাষি ছিলেন, তা নিয়েও সংশয়ে প্রশাসনের কর্তারা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ধূপগুড়ি শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০১৫ ০২:৩০
Share: Save:

হিমঘরে আলু মজুতের পর্যাপ্ত জায়গা ফাঁকা রয়েছে বলে দাবি জলপাইগুড়িতে। তারপরেও বন্ড দেওয়া হচ্ছে না অভিযোগ তুলে কেন পথ অবরোধ করা হচ্ছে বলে প্রশ্ন উঠল ওই জেলার প্রশাসনিক মহলে। গত রবিবার এবং মঙ্গলবার ওই ইস্যুতে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধের কারণ অনুসন্ধানের পরে আন্দোলনকারীদের মধ্যে কতজন চাষি ছিলেন, তা নিয়েও সংশয়ে প্রশাসনের কর্তারা।

হিমঘরে আলু মজুতের বন্ড না পেয়ে গত মঙ্গলবার ধূপগুড়ির চৌপথী এলাকায় ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ হয়। এর আগে গত রবিবার ঠাকুরপাট এলাকায় প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা জাতীয় সড়কে অবরোধ চলে। দু’টি ঘটনার পরে কৃষি বিপণন দফতরের কর্তারা হিমঘরে আলু মজুতের পরিস্থিতি অনুসন্ধানে নেমে জানতে পারেন, ধূপগুড়ির ৯টি হিমঘরে ২৭ লক্ষ আলুর প্যাকেট মজুত রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। ইতিমধ্যে ১৩ লক্ষ প্যাকেট মজুতের বন্ড বিলি হয়েছে। আরও ১৪ লক্ষ প্যাকেট মজুতের জায়গা ফাঁকা আছে।

প্রশাসনের একাংশের অভিযোগ, এত দিন ফড়েদের নিয়ন্ত্রণে থাকত হিমঘর, এবার কিষাণ ক্রেডিট কার্ড সহ বিভিন্ন পরিচয়পত্র দেখে বন্ড বিলি শুরু হতে বিপাকে পড়ে তাঁদের একাংশ গোলমাল পাকানোর চেষ্টা করছে। অন্যদিকে পরিবহণের সুবিধার কথা ভেবে কিছু হিমঘরে চাষিদের ভিড় বেশি থাকায় সমস্যা সৃষ্টির ছবিও উঠে এসেছে।

জলপাইগুড়ির মহকুমাশাসক সীমা হালদার বলেন, “আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি, হিমঘরে এখনও প্রচুর জায়গা ফাঁকা আছে। বন্ড নিয়ে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। আসলে এবার পরিচয়পত্র দেখে বন্ড বিলি শুরু হতে মধ্যসত্ত্বভোগীদের একাংশ উত্তেজনা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। আমরা সেটা হতে দেব না।” প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে একমত কৃষক সভার জলপাইগুড়ি জেলা কমিটির সহ সভাপতি সুভাষ রায়। কিষান খেত মজদুর তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি দুলাল দেবনাথ। তিনি বলেন, “কিষান ক্রেডিট কার্ড দেখে চাষিদের মধ্যে বন্ড বিলি শুরু হতে এতদিন যারা চাষি সেজে হিমঘর দখল করে রাখতেন, তারা সমস্যায় পড়ে উত্তেজনার সৃষ্টি করছে।”

উত্তরবঙ্গ হিমঘর মালিক সমিতির সম্পাদক প্রদীপ প্রসাদ জানান, প্রথম দিকে মাথা পিছু চারশো প্যাকেট আলু মজুতের বন্ড বিলি করা হয়। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে আলোচনার পড়ে কিষান ক্রেডিট কার্ড সহ বিভিন্ন নথি দেখে চাষিদের মাথা পিছু দু’শো ব্যাগ আলু মজুতের বন্ড বিলি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, “হিমঘরগুলিতে প্রচুর জায়গা ফাঁকা পড়ে আছে। কিছু ব্যক্তি অতিরিক্ত বন্ড সংগ্রহ করে কালোবাজারির চেষ্টা করছে। এবার সেই সুযোগ না থাকায় গোলমাল করছে।”

এ ছাড়াও চাষিরা বিশেষ কয়েকটি হিমঘরে বেশি ভিড় করায় জটিলতা বেড়েছে বলে মনে করেন মহকুমা প্রশাসনের এক কর্তা। তিনি জানান, এবার জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ার জেলায় আলু উত্‌পাদনের পরিমাণ ১০ লক্ষ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এ দিকে, ভাল ফলন হলেও তা মজুত রাখার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই মালদহের চাঁচলে। ফলে জমি থেকেই জলের দামে আলু বিক্রি করে দিতে বাধ্য হওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন মালদহের চাঁচল মহকুমার আলুচাষিরা। কয়েক বছর আগেই কৃষি বিপণন দফতরের তরফে এলাকায় আরও দু’টি হিমঘর তৈরির প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু ওই প্রস্তাব আপাতত হিমঘরে। চাষিদের অভিযোগ, চাঁচল মহকুমায় সামসিতে একটি হিমঘর রয়েছে। তাতে ঠাঁই নেই অবস্থা। ফলে ৩ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা। এই অবস্থায় ধানের মতোই সহায়ক মূল্যে আলু কেনা সহ মহকুমায় আরও একটি হিমঘর তৈরির দাবিতে সরব হয়েছেন চাষিরা।

কৃষি দফতরের মালদহের উপ অধিকর্তা অনন্তদেব মাইতি বলেন, “সহায়ক দামে আলু কেনার খবর এখনও নেই। এবার ফলন বেশি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কৃষি বিপণন দফতরের সঙ্গে কথা হয়েছে।”

• প্রশাসনের অভিযোগ, এত দিন ফড়েদের নিয়ন্ত্রণে থাকত হিমঘর,
এবার কিষাণ ক্রেডিট কার্ড-সহ বিভিন্ন পরিচয়পত্র দেখে বন্ড বিলি শুরু হতে
বিপাকে পড়ে তাঁদের একাংশ গোলমাল পাকানোর চেষ্টা করছে।

• এ ছাড়াও চাষিরা বিশেষ কয়েকটি হিমঘরে বেশি ভিড় করায়
জটিলতা বেড়েছে বলে মনে করছে প্রশাসন।

জেলা কৃষি বিপণন দফতরের এক আধিকারিক বলেন, সহায়ক দামে আলু কেনা হবে কি না সেটা রাজ্য সরকারের বিষয়। কিন্তু চাঁচল মহকুমায় বিশেষ করে সামসি এলাকায় প্রচুর আলু চাষ হয়। তাই ওই এলাকায় আরও দু’টি হিমঘরের প্রস্তাব পাঠানো আছে। কিন্তু সেগুলি কী অবস্থায় আছে জানি না। হিমঘর দু’টি হলে সমস্যা মিটত।

চাঁচল মহকুমায় এ বছর ৭ হাজার হেক্টরে আলু চাষ হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় ১ হাজার হেক্টর বেশি বলে মহকুমা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। এর মধ্যে রতুয়ার সামসি, শ্রীপুর আলুচাষের অন্যতম এলাকা। আগের বছর চড়া দামে বিক্রি হওয়ায় এ বার বহু চাষি আলু চাষে উত্‌সাহী হয়েছিলেন। তা ছাড়া অন্য বছরে হয় ধসা রোগে নয়তো বৃষ্টিতে আলুর ফলন মার খাওয়ার ঘটনা ঘটলেও এবার আবহাওয়া অনুকূল থাকায় ব্যাপক উত্‌পাদন হয়েছে। আলুর উত্‌পাদন এবার ১৮ হাজার মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাবে বলে কৃষি দফতর জানিয়েছে।

কৃষি বিপণন দফতর সূত্রের খবর, সামসি সমবায় হিমঘরে ১০ হাজার মেট্রিক টন আলু রাখা যায়। ওই পরিমাণ আলু যে শুধু মহকুমার চাষিরাই রাখার সুযোগ পান তা নয়। জেলার বিভিন্ন প্রান্তে হিমঘরের শেয়ারধারী চাষি ও সমবায় সমিতিগুলোর মাধ্যমেও সামসি হিমঘরে আলু রাখা হয়। ফলে এলাকার আলুচাষিদের সমস্যা রয়েছেই। মজুতের সমস্যায় তাই জমি থেকেই ৩০০ টাকা কুইন্ট্যাল দামে আলু বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন চাষিরা। ফলে খরচের টাকাও তাদের উঠে আসছে না বলে অভিযোগ।

চাঁচলের মহকুমাশাসক পোন্নমবলম এস বলেন, “এ বার প্রচুর ফলন হয়েছে। কীভাবে সমস্যা মিটবে, তা কৃষি দফতরকেই দেখতে হবে।”

রতুয়ার শ্রীপুর এলাকার পরিচিত আলু চাষি মহম্মদ সাজাহান এবার ৬ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছিলেন। বিঘা প্রতি ফলন হয়েছে গড়ে ৩০ থেকে ৩৫ কুইন্টাল। তিনি বলেন, “বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। এক বিঘা তিন হাজার টাকা করে লিজ নিয়ে চাষ করেছিলাম। মাঠে আলু বিক্রি হচ্ছে তিনশো টাকা কুইন্টাল দামে। ফলে বিঘায় ১৮ হাজার টাকা খরচ করে বড়জোর ১০ হাজার টাকা উঠে আসছে। এই অবস্থায় পথে বসা ছাড়া উপায় নেই।”

হরিশ্চন্দ্রপুরের নন্দীবাটী এলাকার আলু চাষি কামালুদ্দিন আহমেদ ১৫ বিঘায় আলু চাষ করেছিলেন। বোড়লের সাকরাতু দাস ঋণ নিয়ে ৩ বিঘায় চাষ করেছিলেন। তারা বলেন, “গত বছর ধসার পাশাপাশি খেত জলে ডুবে ফলন মার খেয়েছিল। যেটুকু ছিল তার চড়া দাম মেলায় খরচ প্রায় উঠে এসেছিল। লাভের আশায় তাই এবার বেশি করে চাষ করেছিলাম। কিন্তু ফলন ভালো হলেও এবছর মজুতের সমস্যায় পথে বসতে হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

dhupguri potato
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE