মন্ডপ সজ্জার আতিশয্য নেই। বাহারি আলোর কেরামতি নেই। তালপাতায় লেখা পুঁথির মন্ত্রোচ্চারণ করে রীতি মেনে পুজোর আয়োজন হয়। মহাষ্টমীর সন্ধিপুজোয় জ্বালানো হবে ১০৮টি প্রদীপ। উপকরণ তালিকায় থাকছে গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, মানসাই, বানিয়াদহ নদীর জল। মহামায়াপাট চত্বরে আয়োজিত নিয়ম-নিষ্ঠার ওই পুজো বাসিন্দাদের একাংশের কাছে ‘বড়মা’র পুজো নামে পরিচিত। ওই পুজোর সঙ্গে দিনহাটার বাসিন্দাদের বাড়তি আবেগ জড়িয়ে রয়েছে। দেবীর উদ্দেশ্যে অঞ্জলি থেকে ভোগ দিতে দিতে তাই ভিড় উপচে পড়ে।
এবার ১২৪ তম বর্ষের ওই পুজোতেও বাসিন্দাদের মধ্যে এক উদ্দীপনার ছবি। সেই সঙ্গে পুজো প্রাঙ্গণ ফি বছরের মত দুই বাংলার বাসিন্দান্দের মিলন মঞ্চ হয়ে ওঠার প্রতীক্ষা। দিনহাটা মহামায়াপাট দুর্গাপুজো কমিটির সম্পাদক রামকৃষ্ণ সাহা বলেন, “প্রাচীন রীতি মেনে পুরো নিয়মনিষ্ঠার সঙ্গে পুজোর আয়োজন হয়েছে। ফি বছরের মত এবারেও পুজোর সময় বাংলাদেশের বাসিন্দাদের অনেকে এখানে আসেন। এবারেও সেই ধারা বজায় থাকবে বলে আশা করছি।”
পুজো উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, কোচবিহারের মহারাজাদের আমলে দিনহাটার মহামায়াপাটের দুর্গাপুজো শুরু হয়। পুজোর ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে লোকগাথাও। জনশ্রুতি রয়েছে, রাজাদের আমলে ডুয়ার্সের জয়ন্তী থেকে অধুনা বাংলাদেশের রঙপুর পর্যন্ত রেললাইন বসানোর কাজ চলছিল। সেই সময় মাটি খনন করতে গিয়ে শ্রমিকেরা গোলাকৃতি একটি পাথরের খণ্ড দেখতে পান। ওই প্রস্তরখণ্ড পেঁচিয়ে ফণা তুলে ছিল একটি সাপ। স্বপ্নাদেশ পেয়ে ওই প্রস্তর খণ্ডটিকেই দেবী মহামায়া রূপে প্রতিষ্ঠা করেন। শ্রমিকেরা শরতকালে ফের স্বপ্নাদেশে মহামায়াকেই দেবী দুর্গা রূপে ফের পুজোর আয়োজন করেন। এলাকার বাসিন্দারা প্রতিমার বিশালাকার ও পুজোর প্রাচীনত্বের জন্য ওই পুজো বাসিন্দাদের একাংশের কাছে ক্রমে ‘বড়মা’র পুজো নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। মহামায়াপাট দুর্গাপুজো কমিটির সহ সভাপতি জহরলাল সাহা বলেন, “পঞ্জিকার বিধান মেনে বড়মার পুজো হয়। বাসিন্দারা অঞ্জলি কিংবা দেবীর উদ্দেশে ভোগ, সন্দেশ দিতে এই পুজোকেই এক নম্বরে রাখেন। শুধু মহাষ্টমীতেই প্রায় ৫ হাজার সন্দেশের প্যাকেট জমা হয়। সব কিছুকে ছাপিয়ে যায় অসম ও ওপার বাংলার বাসিন্দাদের উপস্থিতি।”
উদ্যোক্তারা জানান, কাঁটাতারের বেড়া দুই বাংলার ভূখণ্ডকে দ্বিখন্ডিত করলেও মহামায়াপাটের দুর্গাপুজোর টান দু’পারের বাসিন্দাদের কাছে সমান। ফি বছর পাসপোর্ট, ভিসা করে বাংলাদেশের বহু বাসিন্দা ওই পুজোয় সামিল হতে দিনহাটায় আসেন। আত্মীয়-পরিজনদের বাড়িতে থেকে যাতায়াত করে পুজো অঙ্গনকে করে তোলেন দুই বাংলার বাসিন্দাদের মিলনমঞ্চের ছোট নিদর্শন। পুজো উপলক্ষে চারদিন ব্যাপী জমজমাট মেলা ওই মঞ্চের আকর্ষণ আরও বাড়িয়ে দেয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy