মায়ের পিঠে চড়েই ভোটের লাইনে। বালুরঘাটের একটি বুথে অমিত মোহান্তের তোলা ছবি।
কোনও বুথে বোতাম টিপে দেখা যায় ভোট যন্ত্রে কোনও আলোই জ্বলছে না, আবার কোথাও একটি বোতাম টিপতেই সব ভোট প্রার্থীর নামের পাশের আলো জ্বলে উঠেছে। কোথাও মাঝপথে অসাড় হয়ে পড়েছে যন্ত্র, কোথাও শুরু থেকেই সাড়া মেলেনি। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন তথা ইভিএম নিয়ে এমনই একাধিক অভিযোগে কিছুটা বিঘ্নিত হল উত্তরবঙ্গের দ্বিতীয় দফার ভোট গ্রহণ।
বৃহস্পতিবার ইভিএম নিয়ে অভিযোগের জেরে পুর্ননির্বাচনের দাবি উঠেছে। ইটাহার ব্লকের বাগবাড়ি এলাকার ১০০ নম্বর বুথে এ দিন ভোট চলাকালীন ইভিএমে কারচুপির অভিযোগ তুলেছে বিজেপি, কংগ্রেস ও সিপিএম। সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ কয়েকজন ভোটার অভিযোগ করেন, ইভিএমের যে কোনও যন্ত্রের বোতাম টিপলেই একাধিক বোতামের পাশের আলো জ্বলছে। বিজেপির অভিযোগ, যে কোনও প্রার্থীকে ভোট দিলেই তৃণমূল প্রার্থীর নামের পাশের বোতামে আলো জ্বলছে। অন্য কোনও দল বা প্রার্থীকে ভোট দিলেও যন্ত্রে কারচুপি করায় তৃণমূল প্রার্থীর পক্ষে ভোট পড়ছে বলে বিজেপি অভিযোগ করে। ওই অভিযোগকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে সাময়িক ভাবে ভোটগ্রহণ বন্ধ হয়ে যায়। ততক্ষণে অবশ্য ২০৮ জনের ভোট গ্রহণ হয়ে গিয়েছে। বেলা ১২ টা নাগাদ নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে নতুন একটি ইভিএম মেশিন আনিয়ে ফের ভোটগ্রহণ শুরু করে। যদিও বিজেপি, কংগ্রেস ও সিপিএমের তরফে পুনর্নিবাচনের দাবি জানানো হয়েছে। প্রশাসনিক ভাবে ইটাহার উত্তর দিনাজপুরে হলেও, এলাকাটি বালুরঘাট লোকসভা কেন্দ্রের অর্ন্তগত। বিজেপির জেলা সভাপতি শুভ্র রায়চৌধুরী বলেন, “ভোটযন্ত্রে কারচুপি করে তৃণমূল প্রার্থীকে সুবিধে করে দেওয়া হয়েছে। ওই বুথে পুননির্বাচনের দাবি জানানো হয়েছে।” সিপিএমের ইটাহার জোনাল কমিটির নেতা হবিবুর রহমান ও জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক পবিত্র চন্দ জানান, তাঁরাও জেলাশাসককে ওই বুথে পুননির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন।
উত্তর দিনাজপুরের জেলাশাসক তথা জেলা নির্বাচনী আধিকারিক স্মিতা পান্ডে জানান, “ইভিএমে কারচুপির অভিযোগ ভিত্তিহীন। যান্ত্রিক ক্রুটি দেখা দিয়েছিল। পুননির্বাচন করার দাবির বিষয়ে কমিশনকে জানানো হয়েছে।”
একই ঘটনা ঘটেছে মালদহের বৈষ্ণবনগরের মুন্নাটোলা প্রাথমিক স্কুলের ১২ নম্বর বুথে। অভিযোগ, যে কোনও বোতাম টিপলেই ১ নম্বরে থাকা প্রার্থীর নামের পাশে আলো জ্বলে উঠেছে। অভিযোগ পেয়ে ভোটযন্ত্র বদলে দেয় প্রশাসন। ভোটযন্ত্রে একনম্বরে ছিল কংগ্রেস প্রার্থীর নাম। ওই কেন্দ্রে পুর্ননির্বাচনের দাবি তুলেছে তৃণমূল এবং সিপিএম। প্রশাসন জানিয়েছে, দাবির বিষয়ে কমিশনকে জানানো হয়েছে।
ভোটযন্ত্রের কারণে ভোটবিভ্রাট ঘটেছে অন্যত্রও। মালদহের চাঁচল মহকুমার খবরার দোগছ শিশু শিক্ষা কেন্দ্র, দুর্গাপুর প্রাথমিক শিক্ষা কেন্দ্র এবং কালীনগর প্রাথমিক স্কুলে ভোটযন্ত্রে ক্রুটির কারণে ভোটগ্রহণ বেশ কিছুক্ষণ বন্ধ থাকে। বালুরঘাট লোকসবা কেন্দ্রের তপনের একটি বুথ, কুশমন্ডির দু’টি বুথে ভোটযন্ত্র বিকল হয়ে যাওয়ায় বেশ কিছুক্ষণ ভোটগ্রহণ বন্ধ থাকে। বংশীহারিরর ১৩৬ নম্বর বুথেও বেশ কিছুক্ষণ ভোট বন্ধ থাকার পরে, ভোটযন্ত্র বদলে দেওয়া হয়েছে।
উত্তর দিনাজপুরের ইটাহার ব্লকেরই জয়হাট গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৯৯ নম্বর বুথে এ দিন সকালে ভোটগ্রহণ শুরু হতেই বুথের ভোটযন্ত্রটি খারাপ বলে জানা যায়। যন্ত্রটি মেরামত করে ভোটগ্রহণ শুরু করতে সকাল সাড়ে ৮টা বেজে যায়। কাপাসিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের মানাইনগর এলাকার ১৪৮ নম্বর বুথে ভোটারদের অভিযোগ, ভোটযন্ত্রের বোতাম টিপলেও মেশিনে ‘বিপ’ শব্দ হয়নি। বুথে ভোটগ্রহণ বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে কমিশনের বাছাই করা কারিগরি কর্মীরা ওই বুথে গিয়ে ভোটযন্ত্র মেরামত করে দেন। দেড় ঘণ্টা বন্ধ থাকার পরে সকাল ১০টা নাগাদ ফের ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয়।
ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই রায়গঞ্জ শহরের ৫টি, হেমতাবাদের, কালিয়াগঞ্জের একটি বুথেও ভোটযন্ত্রের জেরে ভোটগ্রহণে সমস্যা হয়। রাধিকাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ১১১ নম্বর, ইটাহার সদর এলাকার দু’টি বুথে ভোটযন্ত্রে বিভ্রাট দেখা দেওয়ায় এক থেকে দেড় ঘন্টা ভোটগ্রহণ বন্ধ থাকে। প্রতিটি বুথে ভোটযন্ত্র বদলে ফের ভোট নেওয়া শুরু হয়। ইসলামপুর, চাকুলিয়ার একটি করে এবং গোয়ালপোখরের চারটি বুথেও ভোটযন্ত্রের কারণে ভোটগ্রহণ কিছুক্ষণ বন্ধ থাকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy