Advertisement
E-Paper

উড়ো চিঠির ত্রাসে ঘুম ছুটল গ্রামের

লাল খামে মোড়া ছ’টি উড়ো চিঠি রাতারাতি বদলে দিয়েছে গোটা গ্রামের চেহারা। সকাল থেকেই হাটের ব্যস্ততা, বেলা গড়ালে বোর্ড পেতে লুডো খেলা আর সন্ধ্যেয় চায়ের দোকানে আড্ডা। শুক্রবার সকালে গ্রামের ছ’টি অবস্থাপন্ন বাড়িতে ডাকাতির হুমকি চিঠি আসার পর, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বদলে গিয়েছে চেনা দৃশ্যগুলি। এ দিন ইংরেজবাজারের মদিয়ার বাধাগছ এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, পুরো গ্রামকে যেন আতঙ্ক গ্রাস করেছে।

অভিজিৎ সাহা

শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৫ ০১:০০
সন্দেহভাজনদের পোড়া মোটর বাইক। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়।

সন্দেহভাজনদের পোড়া মোটর বাইক। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়।

লাল খামে মোড়া ছ’টি উড়ো চিঠি রাতারাতি বদলে দিয়েছে গোটা গ্রামের চেহারা।

সকাল থেকেই হাটের ব্যস্ততা, বেলা গড়ালে বোর্ড পেতে লুডো খেলা আর সন্ধ্যেয় চায়ের দোকানে আড্ডা। শুক্রবার সকালে গ্রামের ছ’টি অবস্থাপন্ন বাড়িতে ডাকাতির হুমকি চিঠি আসার পর, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বদলে গিয়েছে চেনা দৃশ্যগুলি। এ দিন ইংরেজবাজারের মদিয়ার বাধাগছ এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, পুরো গ্রামকে যেন আতঙ্ক গ্রাস করেছে। দিনের আলোতেও রাস্তা সুনসান। বাড়ির জানলায় মহিলা আর কচিকাঁচাদের আতঙ্কিত মুখ। এলাকায় অচেনা লোক দেখলেই চারপাশে সন্দেহের চোখ। অপরিচিত বাইক আরোহী দেখলেই খবর চলে যাচ্ছে থানায়। বিকেল গড়ালেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে দোকানের ঝাঁপ। বিকেলের আগেই হাটের ভিড় উধাও। থানায় জানানোর পরে পুলিশ টহল বাড়ানোর আশ্বাস দিলেও, ভরসা রাখতে পারছেন না বাসিন্দারা। সন্ধ্যের পর থেকে মশাল জ্বালিয়ে হাতে লাঠি নিয়ে গ্রাম ঘুরে রাতভর পাহাড়া দিচ্ছেন তাঁরা। এই পরিস্থিতিতে আতঙ্ক বাড়িয়েছে শুক্রবার রাতের ঘটনা।

শুক্রবার রাত পাহাড়ার সময় সন্দেহভাজন তিন যুবককে দেখতে পেয়ে মারধর শুরু করেন বাসিন্দাদের একাংশ। রাতের অন্ধকারে আমবাগানের মধ্যে বাইকে চেপে তিন যুবক ডাকাতির উদ্দেশে ঘোরাফেরা করছিল বলে বাসিন্দাদের দাবি। তাদের মোটরবাইকটি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আসাদুল শেখ, সাদিকুল ইসলাম এবং রবিউল ইসলাম নামে ওই তিন যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে তিনটি দেশি বন্দুক, কার্তুজ, ছ’টি হাতবোমা উদ্ধার হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। ধৃতদের বাড়ি কালিয়াচক থানার পঞ্চানন্দপুর গ্রামে বলে জানা গিয়েছে। মালদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিষেক মোদী বলেন, “অস্ত্র সহ তিনজন দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রামবাসীদের চিঠি দেওয়ার পিছনে এদের হাত রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। টহলদারি চলছে।”

চিঠি পাঠিয়ে ডাকাতির হুমকি দেওয়ার ঘটনায় উদ্বেগে ছড়িয়েছে পুলিশের অন্দরেও। ডাকাতি করার মতলব থাকলে, আগে থেকে কেন হুমকি দেওয়া হল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে পুলিশকর্মীদের একাংশের মধ্যে। ডাকাতির হুমকি দিয়ে ওই গ্রামে আতঙ্ক ছড়িয়ে, সে দিকে নজর ঘুরিয়ে অন্য কোনও এলাকায় ডাকাতির ছকও কষা হতে পারে বলেও মনে করছেন অনেকে। হুমকি চিঠি দিয়ে ডাকাতি করার ঘটনাও সাম্প্রতিক অতীতে জেলায় হয়নি বলে জানা গিয়েছে।

গত শুক্রবার সকালে বাড়ির গেটের কাছে ঝুলতে থাকা খাম বন্দি চিঠিটি প্রথম খুলেছিলেন ইয়াসিন বিবি। তাঁর স্বামী ওয়াহেদ আলি আরপিএফ কর্মী। ইয়াসিন বিবি বলেন, “ছোট বেলায় বাবা-মায়ের কাছে রঘু ডাকাতের গল্প শুনেছিলাম। আমার বাড়িতেই চিঠি পড়ার পরে আতঙ্কে দু’চোখের পাতা এক করতে পারছি না।”

এদিন সকাল ১০টা নাগাদ গ্রামে গিয়ে দেখা গেল রাস্তা প্রায় সুনসান। রাতভর পাহাড়া দেওয়ার পরে গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দাই দুপুর পর্যন্ত ঘুমিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। শুধু তাই নয়, দিনের বেলাতেও বাড়ি ছেড়ে কাজে যেতে ভরসা পাচ্ছেন না বলে বাসিন্দাদের একাংশ দাবি করেছেন। গ্রামের বাসিন্দা জুয়েল, ফিরোজ আকবররা বলেন, “বাড়ি থেকে বের হওয়ার সাহসই পাচ্ছি না। দিনের বেলাতেও কেউই বাড়ি থেকে বেশি দূরে যাচ্ছে না। সব কাজকর্ম থমকে গিয়েছে।”

সপ্তাহখানেক আগে মানিকচকের এক রেশন ডিলারের বাড়িতে ঢুকে পরিবারের লোকেদের মারধর করে লুটপাঠ চালায় দুষ্কৃতীরা। জেলায় বিভিন্ন প্রান্তে যে ডাকাতির ঘটনা ঘটছে, তা নিয়েই এখন চর্চা চলছে আতঙ্কের বাধাগছ গ্রামে। গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ইউনিস মোমিন বলেন, “এই হুমকির চিঠি পেয়ে গ্রামের সবার ঘুম উড়ে গিয়েছে। এই গ্রামে ১৫জন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী এবং ১০জন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী রয়েছে। তাদের পড়াশুনার ক্ষতি হচ্ছে। ছেলেরা পড়া বাদ দিয়ে রাত জেগে গ্রামে ঘুরছে, আতঙ্কে পড়ায় মন বসাতে পারছে না। গ্রামে অস্থায়ী ভাবে পুলিশ ক্যাম্প বসানো হোক।”

চিঠি পেয়েছেন আতঙ্কিত তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য আজিমুদ্দিন শেখও। তিনি বলেন, “গ্রামের পুলিশ ক্যাম্প বসানোর দরকার রয়েছে। কারণ বিষয়টি হালকা ভাবে নেওয়া যায় না। বাসিন্দারা তিন জনকে ধরে ফেলায় আতঙ্ক আরও বেড়েছে।” ইংরেজবাজার পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান তথা তৃণমূলের জেলার কার্যকরী সভাপতি দুলাল সরকার বলেন, “সত্যি ঘটনাটি আতঙ্কের। পুলিশের উচিত ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে দেখা।” অস্থায়ী ক্যাম্প বসানোর দাবি নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে বলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানিয়েছেন।

abhijit saha english bazar robbery ghost letter
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy