Advertisement
E-Paper

এইমস হাতছাড়া হওয়ায় ক্ষোভ উত্তরবঙ্গে, বনধের ডাক

শুধু রায়গঞ্জ নয়। এইমসের ধাঁচের হাসপাতাল হাতছাড়া হয়ে যাওয়ায় হতাশা ও ক্ষোভ দানা বাঁধছে, গোটা উত্তরবঙ্গে। রায়গঞ্জেই এই হাসপাতাল গড়ার দাবিতে সোমবার স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সংগঠনের ডাকা ২৪ ঘণ্টার উত্তর দিনাজপুর বন্ধকে একজোট হয়ে সমর্থন করছে বামফ্রন্ট, কংগ্রেস এবং বিজেপি-ও। বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস জানিয়েছে, রায়গঞ্জে এই হাসপাতালের দাবিতে পথে নেমে আন্দোলন করবে তারা। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য সরাসরি বন্ধ বিরোধিতার রাস্তাতেই হাঁটবে।

গৌর আচার্য

শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০১৪ ০৩:৪৬

শুধু রায়গঞ্জ নয়। এইমসের ধাঁচের হাসপাতাল হাতছাড়া হয়ে যাওয়ায় হতাশা ও ক্ষোভ দানা বাঁধছে, গোটা উত্তরবঙ্গে। রায়গঞ্জেই এই হাসপাতাল গড়ার দাবিতে সোমবার স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সংগঠনের ডাকা ২৪ ঘণ্টার উত্তর দিনাজপুর বন্ধকে একজোট হয়ে সমর্থন করছে বামফ্রন্ট, কংগ্রেস এবং বিজেপি-ও। বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস জানিয়েছে, রায়গঞ্জে এই হাসপাতালের দাবিতে পথে নেমে আন্দোলন করবে তারা। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য সরাসরি বন্ধ বিরোধিতার রাস্তাতেই হাঁটবে।

সরকারি সূত্রের খবর, শুক্রবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তরফে রাজ্য সরকারের প্রস্তাব মতো কেন্দ্রীয় সরকার নদিয়ার কল্যাণীতেই এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরি করতে সম্মত হওয়ার বার্তা দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রের ওই মনোভাবের কথা চাউর হতেই কল্যাণীতে খুশির হাওয়া। কিন্তু কেন্দ্রের আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রায়গঞ্জেই ওই হাসপাতাল তৈরির দাবিতে শনিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত তৃণমূল ছাড়া অন্য সব রাজনৈতিক দল, নানা বেসরকারি সংগঠনের পক্ষ থেকে ধারাবাহিক আন্দোলনের রূপরেখা তৈরির প্রস্তুতি শুরু হয়। তারপরেই রায়গঞ্জকে ‘বঞ্চিত’ করার অভিযোগে সোমবার জেলা বন্ধের ডাক দেয় স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সংগঠন পশ্চিম দিনাজপুর চেম্বার অফ কমার্স। ওই সংগঠনের সদস্যরা এদিন দুপুর থেকে রায়গঞ্জ শহরের বিভিন্ন এলাকায় একাধিক পথসভা ও বিক্ষোভ মিছিল করে ধর্মঘটকে সমর্থনের দাবি জানান।

সংগঠনের জেলা সম্পাদক জয়ন্ত সোম জানান, জরুরি পরিষেবা বন্ধের আওতার বাইরে রাখা হবে। কিন্তু তিনি বলেন, “দূরপাল্লার বাস ও ট্রেনকে ছাড় দেওয়া হবে না।” রায়গঞ্জের উপর দিয়েই গিয়েছে জাতীয় সড়ক। তা দিয়ে দূরপাল্লার বাস যাতায়াত করে।

জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা রায়গঞ্জের বিধায়ক মোহিত সেনগুপ্ত জানান, বন্ধ সমর্থন তো করা হবেই, কংগ্রেস রাস্তায় নেমেও ধারাবাহিক আন্দোলন করবে। দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দিতে এইদিন রায়গঞ্জেই গিয়েছিলেন বামফ্রন্টের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু। তিনিও বলেন, “রায়গঞ্জে এইমসের ধাঁচের হাসপাতালের দাবিতে পথে নেমে আন্দোলন করবে বামফ্রন্ট।” তাঁর অভিযোগ, বিজেপি ও তৃণমূলের গোপন আঁতাতের ফলেই এই হাসপাতাল রায়গঞ্জের বদলে কল্যাণীতে তৈরি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। একই কথা বলেন রায়গঞ্জের সাংসদ সিপিএমের মহম্মদ সেলিমও। বিজেপি-র জেলা সাধারণ সম্পাদক শঙ্কর চক্রবর্তী অবশ্য দাবি করেছেন, রাজ্য এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরির জন্য কল্যাণীতে জমি দিতে চেয়েছে বলেই কেন্দ্র সেখানে হাসপাতাল তৈরিতে সম্মতি দিয়েছে, কিন্তু জেলার স্বার্থে সোমবারের বন্ধকে সমর্থন জানানো হবে।

এই অবস্থায় কিছুটা বেকায়দায় তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব। জেলা তৃণমূল সভাপতি অমল আচার্যের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী রায়গঞ্জে এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল গড়ার বিরোধী নন, কিন্তু চাষিদের জমি দেওয়ার ব্যাপারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন জেলাশাসকের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। তাঁর প্রশ্ন, কিন্তু চেম্বার অফ কমার্স চাষিদের দিয়ে সেই কাজটা করাতে পারল না কেন? তিনি বলেন, “দেশ ও রাজ্যের স্বার্থবিরোধী বনধ আমরা সমর্থন করি না। তাই এই বন্ধ ব্যর্থ করতে আমরা যা যা করার সবই করব।”

তবে শুধু রায়গঞ্জই নয়। এইমসের ধাঁচের হাসপাতাল হাতছাড়া হওয়ায় ক্ষুব্ধ উত্তরবঙ্গও। রাজ্যের প্রাক্তন পুরমন্ত্রী তথা সিপিএমের অশোক ভট্টাচার্য জানান, উত্তরবঙ্গ ফের বঞ্চনার শিকার হল। জলপাইগুড়ির সার্কিট বেঞ্চ, কোচবিহার বিমানবন্দর, রায়গঞ্জের এইমস এবং উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজকে এইমসের ধাঁচে করা হলেই উত্তরবঙ্গের চেহারা পাল্টে যেত। তাঁর বক্তব্য, “বাম আমলে শুরু হওয়া প্রক্রিয়াগুলি একটিও কিছু হল না। উল্টে এইমস চলে গেল।” উত্তরবঙ্গের ব্যবসায়ীদের সংগঠন ফোসিনের সম্পাদক বিশ্বজিৎ দাসের কথায়, এই হাসপাতাল উত্তরবঙ্গের বাইরে চলে যাওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দারা তো বটেই, নমনি অসম, বাংলাদেশ, সিকিমের লোকজনও বঞ্চিত হলেন।

২০০৯-এ ৮২৩ কোটি টাকা বরাদ্দে রায়গঞ্জে এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রের ইউপিএ-১ সরকার। রায়গঞ্জের পানিশালায় জেলা প্রশাসনের চিহ্নিত করা ১০০ একর জমি ঘুরে দেখে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। বিধানসভা ভোট ঘোষণা হওয়ায় জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া থমকে যায়। তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতাসীন হলে রায়গঞ্জে এইমসের দাবিতে ফের আন্দোলনে নামে কংগ্রেস। প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ দীপা দাশমুন্সির নেতৃত্বে চাষিরা কলকাতার মহাকরণে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে লিখিত ভাবে স্বেচ্ছায় জমি দেওয়ার কথা জানানোর চেষ্টা করেন। মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের সঙ্গে দেখা করেননি বলে অভিযোগ। পানিশালা এলাকার বাসিন্দা দুই চাষি ইকতেকার আলি ও রফিক আলি বলেন, “ঠিকঠাক ক্ষতিপূরণ পেলে আমরা ৯০ জন চাষি হাসপাতাল তৈরির জন্য জমি দিতে রাজি। সব মিলিয়ে সেই জমির পরিমাণ দেড়শো একর। হাসপাতাল তো এখানেই হতে পারত।”

call for strike aims hospital aims raiganj gour acharya
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy