Advertisement
E-Paper

এক ঘণ্টা তাড়া করে ‘ম্যাটাডোর গ্যাং’ ধরল পুলিশ

শিলিগুড়ি ও লাগোয়া এলাকার পুলিশের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে একাধিক ‘ম্যাটাডোর-গ্যাং’। রাত নামলেই শহর ও লাগোয়া এলাকায় হানা দেয় ওই গ্যাং। একেকটি দলে থাকে ৪-৫ জন। সকলেরই বয়স ১৮ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। বাহন একটি সদ্য কেনা নম্বর প্লেট বিহীন ম্যাটাডোর। রাত নামলেই দলটি হানা দিয়ে বাড়ি কিংবা দোকানের সামনে অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে থাকা বাইক ম্যাটাডরে তুলে উধাও হয়। গ্রামের দিকে হানা দিয়ে গরু চুরি করছে তারা।

কিশোর সাহা

শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০১৪ ০১:০৭

শিলিগুড়ি ও লাগোয়া এলাকার পুলিশের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে একাধিক ‘ম্যাটাডোর-গ্যাং’। রাত নামলেই শহর ও লাগোয়া এলাকায় হানা দেয় ওই গ্যাং। একেকটি দলে থাকে ৪-৫ জন। সকলেরই বয়স ১৮ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। বাহন একটি সদ্য কেনা নম্বর প্লেট বিহীন ম্যাটাডোর। রাত নামলেই দলটি হানা দিয়ে বাড়ি কিংবা দোকানের সামনে অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে থাকা বাইক ম্যাটাডরে তুলে উধাও হয়। গ্রামের দিকে হানা দিয়ে গরু চুরি করছে তারা। চোরাই মাল পাচারের আগে গাড়ির সামনে ‘অন ডিউটি’ বোর্ড, কখনও ‘প্রেস’ লিখেও পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিয়ে চলে যাচ্ছে কোচবিহারের বাংলাদেশ সীমান্তে। রাতারাতি চোরাই মাল চুপিসাড়ে সীমান্ত পেরিয়ে চলে যাচ্ছে বলে পুলিশের সন্দেহ।

একাধিকবার তাড়া করেও ওই চক্রের কাউকে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে পুলিশ। কারণ, ওই ‘ম্যাটাডোরে’ রাখা থাকে প্রচুর পাথর ও আধলা ইঁট। পুলিশ পিছু নিলেই তা ছুঁড়তে ছুঁড়তে গলিপথে ঢুকে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে পালায় চোরেরা। তাতে অবশ্য পুলিশ হাল ছাড়েনি। শুক্রবার রাত ২টো থেকে প্রায় ৩ টে পর্যন্ত তাড়া করে এমনই একটি ‘ম্যাটাডোর-গ্যাং’-কে বমাল ধরেছে পুলিশ। গ্রেফতার হয়েছে সন্দেহভাজন চার জন। উদ্ধার হয়েছে দুটি গরু।

এতে কিছুটা হলেও স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার জগমোহন। তিনি ধৃতদের জেরা করে ওই চোর চক্রের সঙ্গে যুক্ত বাকিদের হদিস করার নির্দেশ দিয়েছেন। পুলিশ ধৃতদের শনিবার শিলিগুড়ি আদালতে হাজির করায়। আদালত ধৃতদের তিন দিনের জন্য পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে। পুলিশ জানায়, ধৃতদের নাম কুদ্দুস হক, সিকন্দর আলি, মণিরুল মিয়াঁ ও বাংরু মিয়া।ঁ সকলেরই বাড়ি দিনহাটা এলাকায়। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, ধৃতরা প্রায় এক মাস ধরে প্রায়ই শিলিগুড়িতে ঢুকে বাইক কিংবা গরু চুরি করেছে। ওই ধরনের আরও অন্তত ১০টি চক্র শিলিগুড়ি ও লাগোয়া এলাকায় সক্রিয় বলে পুলিশের সন্দেহ। ধৃতদের জেরা করে সেই ব্যাপারে বেশ কিছু তথ্যও মিলেছে বলে পুলিশের দাবি।

পুলিশ সূত্রের খবর, চলতি বছরের গোড়ায় ম্যাটাডোর-গ্যাংয়ের ব্যাপারে পুলিশ কিছু তথ্য পায়। সেই সময়ে পর পর কয়েকটি বাইক চুরির ঘটনা ঘটে। বাড়ি কিংবা দোকানের সামনে থেকে বাইক চুরি যাওয়ার মিনিট পাঁচেকের মধ্যে ১০০ নম্বরে ডায়াল করে অভিযোগ জানালে পুলিশ চারদিকের রাস্তা আটকে তল্লাশিতে নামে। বাইক আটকে পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু, চোরাই বাইকের হদিস মেলেনি। ইতিমধ্যে মাটিগাড়া ও লাগোয়া এলাকায় বেশ কিছু গরুও চুরি হয়। তদন্তে নেমে পুলিশ খবর পায়, আগে যে ভাবে ‘মাস্টার কি’ দিয়ে বাইক চুরি করে তা চালিয়ে পালাত চোরেরা সেই কায়দা ইদানীং পাল্টে ফেলেছে চোরেরা। চোর চক্রটি এখন পুলিশের চোখ এড়াতে আলতো করে বাইক ম্যাটাডোরে তুলে নিচ্ছে। একেকটি এক রাতে ৩টি বাইক তুলে নিচ্ছে। কখনও ৪টি গরু নিয়ে উধাও হচ্ছে।

পুলিশ সূত্রেই জানা গিয়েছে, বাংলাদেশে চোরাই বাইকের ইঞ্জিন ভুটভুটিতে ব্যবহার হয়। একেকটি বাইক পিছু কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা পায় চোরেরা। প্রমাণ আকারের গরু পিছু মেলে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। ফলে, এক রাতেই ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকার কারবার হয়ে বলে পুলিশের সন্দেহ। এতে পুলিশের নজর এড়ানোও সুবিধে হয়।

প্রাথমিক খোঁজখবরের পরে পুলিশ তল্লাশিতে নেমে গত জুলাই মাসে ৩ দফায় সন্দেহভাজন ম্যাটাডোর গ্যাংকে তাড়া করে। কিন্তু, প্রতিটি ক্ষেত্রেই বৃষ্টির মতো ইট-পাথর ছুড়ে পালিয়েছে দুষ্কৃতীরা। পুলিশের গাড়ি ভেঙেছে। পুলিশকর্মীও জখম হয়েছেন। শুক্রবার রাতেও তেমন হয়েছিল। রাত দু’টো নাগাদ মাটিগাড়া এলাকায় ম্যাটাডরটি দেখে সন্দেহ হওয়ায় পুলিশ দাঁনাতে বলে। কিন্তু, গাড়িটি তীব্র গতিতে জাতীয় সড়ক ধরে ভক্তিনগর থানার দিকে ছোটে। পুলিশও পিছু নেয়। অলিগলি হয়ে গাড়িটি ইস্টার্ন বাইপাস দিয়ে জলপাইগুড়ির দিকে রওনা হয়। ওই সময় পুলিশ কাছাকাছি গেলে ইট-পাথর বৃষ্টি শুরু হয়। কিন্তু পদস্থ কর্তারা আগাম নিষেধ করায় পুলিশ গুলি চালায়নি। ইতিমধ্যে মাটিগাড়া থানা থেকে এনজেপি ফাঁড়িতে যোগাযোগ করে বাইপাসের রেলগেটটি নামিয়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। সেই মতো রেলগেট নামালে ম্যাটাডরটি থমকে যায়। কারণ, রেলগেটের দু’পাশে নয়ানজুলি রয়েছে। ওই সময়ে পুলিশের বিশাল বাহিনী ঘিরে ধরে চার জনকে গ্রেফতার করে।

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ এটাও জেনেছে, গাড়ির মালিক বিষয়টি জানতেন না। গাড়িটি কেনার পরে তা চালকের বাড়িতেই রাখার অনুমতি দেন তিনি। সে জন্য দিনভর মালিকের হয়ে ভাড়া খাটানোর পরে রাতে ওই চালক চোর চক্রে যুক্ত হয় বলে পুলিশের দাবি। এর পরে পুলিশের তরফে ছোট গাড়ির মালিকদের সতর্ক করা সেই সঙ্গে রাতের বেলায় এলাকায় ফাঁকা ছোট মালবাহী গাড়ি (পিক-আপ ভ্যান) সন্দেহজনক ভাবে ঘোরাফেরা করতে দেখলেই ১০০ নম্বরে ফোন করে পুলিশকে খবর দেওয়ার অনুরোধ করেছেন কর্তৃপক্ষ।

myatadora gang arrested chase by police kishore saha
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy