Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

এটিএম জালিয়াতির চক্র সক্রিয় রায়গঞ্জে, গ্রাহক সচেতনতায় ব্যাঙ্ক

কলকাতার বাসিন্দা মিহির কুম্ভকার বিএসএনএলের উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরের জেনারেল ম্যানেজার। কলকাতার শেক্সপিয়র সরণিতে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে তাঁর অ্যাকাউন্ট রয়েছে। ২৫ এপ্রিল দুপুরে তাঁর কাছে একটি ফোন আসে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৪ ০১:৩২
Share: Save:

কলকাতার বাসিন্দা মিহির কুম্ভকার বিএসএনএলের উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরের জেনারেল ম্যানেজার। কলকাতার শেক্সপিয়র সরণিতে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে তাঁর অ্যাকাউন্ট রয়েছে। ২৫ এপ্রিল দুপুরে তাঁর কাছে একটি ফোন আসে। ওই ব্যাঙ্কের আধিকারিক পরিচয় দিয়ে জানানো হয়, তিনি আধার কার্ড এবং কেওয়াইসি-র তথ্য জমা দেননি। এ জন্য এটিএম কার্ডটি সক্রিয় নাও থাকলে পারে। তার কাছ থেকে কার্ডের নম্বর, পিন জানালে কিছুদিন তথ্য জমা দেওয়ার জন্য সময় দেওয়ার কথা বলা হয়। তিনি তা দিলে ওই দিনই বিকেলে ১৩ হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয়। অভিযোগের পর পুলিশ জানতে পারে, বিহার বা ঝাড়খণ্ডের কোনও এলাকা থেকে ওই টাকা নেওয়া হয়েছে।

রায়গঞ্জের জেলাশাসকের দফতরের কর্মী শিবেশ সিংহের অ্যাকাউন্ট রয়েছে কর্ণজোড়ায় একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে। গত ২৫ মার্চ তাঁকে একটি অজানা নম্বর থেকে টেলিফোন করে জানানো হয়, তাঁর এটিএমের মেয়াদ ফুরিয়েছে। নতুনভাবে তা সক্রিয় করার জন্য তাঁর কাছ থেকে অ্যাকাউন্ট নম্বর-সহ নানা তথ্য নেওয়া হয়। কিছুক্ষণ পর টেলিফোন করে একটি পিন নম্বর বলা হয়। নম্বরটি তাঁর আসল পিনের সঙ্গে যোগ করে যোগফল বলতে বলা হয়। নির্বাচনের কাজে ব্যস্ত থাকায় শিবেশবাবু তাই করেন। ওই দিন তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে অনলাইনে ১৩ হাজার টাকার শপিং করা হয়। পুলিশ পরে জানে তা করা হয়েছে, বেঙ্গালুরু থেকে।

রায়গঞ্জেরই উকিলপাড়ার বাসিন্দা শর্মিষ্ঠা সাহা। স্বামী মদনগোপালবাবুর ইটাহারে একটি পেট্রল পাম্প রয়েছে। শর্মিষ্ঠাদেবীর শহরের একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট রয়েছে। গত ২মে রায়গঞ্জ থানায় অভিযোগ করে তিনি জানিয়েছেন, পুরানো এটিএম কার্ড অচল হয়েছে বলে বদলে দেওয়ার কথা বলে পিন-সহ যাবতীয় তথ্য জেনে নেওয়া হয়। একইভাবে ওই দিনই মহিলার অ্যাকাউন্ট থেকে ২৮ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। কোথা থেকে তা তোলা হয়েছে তা এখন পুলিশ তদন্ত করে দেখছে।

পুলিশে অভিযোগ দায়ের হওয়া এই তিনটি ঘটনা ছাড়াও রায়গঞ্জ শহরের আরও কিছু বাসিন্দার কাছ এটিএম সক্রিয় করা, পুরানো কার্ড বদলানো, লটারি জেতা-সহ নানা অছিলায় থেকে এটিএমের তথ্য জানার চেষ্টা করেছে দুষ্কৃতীরা। যেমন রায়গঞ্জের তুলসিপাড়ার বাসিন্দা, স্কুল শিক্ষক দীপঙ্কর চাকি, রায়গঞ্জের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলর আদেশ মাহাতো বা দেবীনগর এলাকার বাসিন্দা পেশায় আরেক স্কুল শিক্ষক বিপ্লব সরকার। তবে তাঁরা সচেতন থাকায় ব্যর্থ হয়েছে দুষ্কৃতীরা। একের পর এক এটিএম-জালিয়াতি ঘটতে থাকায় উত্তর দিনাজপুরের পুলিশ-প্রশাসনের পাশাপাশি উদ্বিগ্ন ব্যাঙ্কগুলিও। ইতিমধ্যে গ্রাহকদের এসএমএস পাঠিয়ে, পোস্টার সেঁটে সচেতনতা বাড়ানোর কাজ শুরু করেছে ব্যাঙ্কগুলি।

উত্তর দিনাজপুরের পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি, “গত একমাসে তিনটি লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে। আরও কয়েকজনের কাছে টাকা হাতানোর চেষ্টা হয়েছে বলে শুনতে পাচ্ছি। আমরা তদন্ত শুরু করেছি। কাউকে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের কোনও তথ্য না দেওয়ার অনুরোধ করেছি।” পুলিশ সূত্রের খবর, যে সমস্ত নম্বর থেকে গ্রাহকদের ফোন বা এসএমএস করা হচ্ছে, সেই সব নম্বরগুলিতে বহু চেষ্টা করেও পাল্টা ফোন বা এসএমএস করা সম্ভব হচ্ছে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নম্বরগুলি জালিয়াতির পর নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে।

ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার রায়গঞ্জ শাখার ম্যানেজার বিরাজমান কেরকেট্টা এবং স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার কর্ণজোড়া শাখার ম্যানেজার শান্তনু চক্রবর্তী জানান, আমাদের শাখায় এখনও লিখিত অভিযোগ পড়েনি। কিন্তু মাঝেমধ্যে নানা অছিলায় এটিএম পিন জেনে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। গ্রাহকদের সব সময় সতর্ক থাকতে অনুরোধ করা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

atm fraud raigunj
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE