Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
নকশালবাড়ি

এসএসবি-জনতা সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধ পাঁচ

গরু পাচারকারীদের খোঁজে সশস্ত্র সীমা বলের (এসএসবি) তল্লাশির সময়ে জওয়ান ও স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের মধ্যে সংঘর্ষে উত্তাল হয়ে উঠল নকশালবাড়ি। সোমবার সন্ধ্যায় শিলিগুড়ি থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে নকশালবাড়ির কিলারাম-পাগলাবস্তিতে এই সংঘর্ষের সময় এলাকার ৫ বাসিন্দা গুলিবিদ্ধ হন। তাঁদের মধ্যে শিবকুমার রায় (২৫) রাতে হাসপাতালে মারা যান।

নকশালবাড়িতে ভাঙচুর হওয়া বিডিও-র গাড়ি। বৃহস্পতিবার। —নিজস্ব চিত্র

নকশালবাড়িতে ভাঙচুর হওয়া বিডিও-র গাড়ি। বৃহস্পতিবার। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:৩৮
Share: Save:

গরু পাচারকারীদের খোঁজে সশস্ত্র সীমা বলের (এসএসবি) তল্লাশির সময়ে জওয়ান ও স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের মধ্যে সংঘর্ষে উত্তাল হয়ে উঠল নকশালবাড়ি। সোমবার সন্ধ্যায় শিলিগুড়ি থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে নকশালবাড়ির কিলারাম-পাগলাবস্তিতে এই সংঘর্ষের সময় এলাকার ৫ বাসিন্দা গুলিবিদ্ধ হন। তাঁদের মধ্যে শিবকুমার রায় (২৫) রাতে হাসপাতালে মারা যান।

উত্তেজিত জনতা পরে বিডিও ও পুলিশের গাড়ি সহ একাধিক গাড়ি ভাঙচুর করে। থানা ঘেরাও করা হয়। ভাঙচুর হয়েছে থানার ভিতরেও। পুলিশকর্মীরা তখন ‘লুকিয়ে’ পড়েছিলেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি। যদিও দার্জিলিঙের পুলিশ সুপার অখিলেশ চতুর্বেদী জানিয়েছেন, থানায় কোনও গণ্ডগোল হয়নি।

শিবকুমার ওরফে সুকোমলের বাড়ি নকশালবাড়ির শান্তিনগরে। পেশায় গাড়ির চালক শিবকুমার ঘটনার সময় খেত থেকে গাড়িতে আলু তুলতে সেখানে গিয়েছিলেন। এ ছাড়াও গুলিবিদ্ধ হয়েছেন মিরজান খাতুন, মহম্মদ সুলতান, মহম্মদ খালিদ এবং মহম্মদ সাজিদ। মিরজান ও সুলতান জখম অবস্থায় মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন। তাঁদের হাতে ও পায়ে গুলি লেগেছে। মিরজান খেতে আলু তুলছিলেন। সুলতান গোলমাল দেখতে গিয়েছিলেন। ১২ বছরের কিশোর খালিদ এবং সাজিদের পা ঘেঁষে গুলি চলে গিয়েছে। রাতে নকশালবাড়ি হাসপাতাল থেকে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ সূত্রের খবর, ভারত-নেপাল সীমান্তের বড় মণিরাম এলাকার তারাবাড়িতে এসএসবি-র একটি চৌকি রয়েছে। এর পাশেই তোতারাম, কালুয়া এবং কিলারাম-পাগলাবস্তি। এলাকার বাসিন্দাদের অনেকেই হাটে হাটে গরুর ব্যবসা করেন। এসএসবি-র অফিসারদের দাবি, ওই এলাকায় মাঝে মধ্যে গরু পাচারকারীরা আশ্রয় নেয়। ওই দিন বিকেল ৫টা নাগাদ এসএসবি জওয়ানেরা গরু উদ্ধার করে লাগোয়া ক্যাম্পে আনার পরেই স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ হামলা করেন।

এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, এসএসবি জওয়ানেরা বাড়ি বাড়ি ঢুকে লোকজনকে মারধর করে গরুগুলি বার করে নিয়ে যাচ্ছিল। খেতে হাল দেওয়ার বলদও বাদ দেওয়া হয়নি। বাসিন্দারা তার প্রতিরোধ করতেই জওয়ানদের সঙ্গে তাঁদের গোলমাল শুরু হয়। বাসিন্দাদের দাবি, ক্যাম্পের সামনেই জওয়ানেরা লাঠি চালায়। তারপরে বিনা প্ররোচনায় গুলি চালিয়েছে। তখন থানার একাধিকবার ফোন করা হলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ওসি-র কোনও খোঁজ মিলছিল না। পরে থানায় এসএসবি জওয়ানেরা ঢুকেছে শুনে উত্তেজিত জনতা সেখানে ঢুকে মারমুখী হয়ে ওঠে। থানার সামনে থাকা পুলিশের গাড়ি, বাস, ট্রাক-সহ একাধিক গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। ঘটনাস্থল দিয়ে যাচ্ছিল বিডিও-র গাড়ি। তা-ও ভাঙচুর করা হয়েছে। কিছু দোকানও ভাঙচুর করে বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। বিডিও কিংশুক মাইতি বলেন, “গাড়ির চালক দফতরের কাজ সেরে ফিরছিলেন। ওঁকে নামিয়ে নিগ্রহের পর গাড়িটি ভাঙা হয়েছে।”

নকশালবাড়িতে সংঘর্ষে মৃত বাসিন্দা।

তবে থানায় হামলার কথা অস্বীকার করেছেন দার্জিলিঙের পুলিশ সুপার। তিনি জানান, এসএসবি-র সঙ্গে ওই এলাকার বাসিন্দাদের গরু নিয়ে গোলমালে এসএসবি গুলি চালিয়েছে বলে শুনেছেন। তিনি বলেন, “রাস্তা অবরোধ করে কিছু গোলমালও হয়েছে। কিন্তু থানায় তো কিছু হয়নি।” পুলিশ সূত্রের খবর, কিছুদিন আগেই ওই থানার বর্তমান ওসি-র বদলির নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশ সুপার। পুলিশ সূত্রের খবর, এদিনের ঘটনার কথা শোনার পরে অন্য এক অফিসারকে থানার ওসি-র দায়িত্ব নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন এসপি।

এসএসবি-র শিলিগুড়ি ফ্রন্টিয়ারের তরফে এক পদস্থ কর্তা জানিয়েছেন, ওই এলাকা থেকে গরু পাচার করা হয়। এদিন গরু উদ্ধার করে লাগোয়া ক্যাম্পে এনে রাখা হয়েছিল। সেখানে কয়েকশো বাসিন্দা এসে হামলা করে। এসএসবি-র মহিলা কনস্টেবলদের গায়ে হাত দেওয়া হয়। বাইরে থেকে প্রথমে ঢিল, তার পরে গুলিও চলে। তার পরে জওয়ানেরা শূন্যে চার রাউন্ড গুলি চালান। বাইরে কারা কী ভাবে গুলিবিদ্ধ হলেন, তা তাঁরা জানেন না বলে ওই এসএসবি কর্তার দাবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

shot dead ssb ssb-public clash naxalbari
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE