Advertisement
E-Paper

ঐতিহ্যের তাঁত থেমে যাচ্ছে গঙ্গারামপুরে

তিন দশক আগেও পুজোর তিন মাস আগে গঙ্গারামপুরের বসাকপাড়া, দত্তপাড়া, ভোদং পাড়া, স্কুলপাড়া হয়ে ইন্দ্রনারায়ণপুর কলোনির রাস্তায় হাঁটলে শোনা যেত মাকুর খটাখট শব্দ। কাছে গেলে দেখা যেত প্রায় ঘরে ঘরে তাঁত চলছে। নতুন শাড়ি-কাপড় তৈরির ব্যস্ততা ছিল তুঙ্গে।

অনুপরতন মোহান্ত

শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৪ ০২:৩৮
গঙ্গারামপুরে ক্রমশ কমছে এমন তাঁতের সংখ্যা। ছবিটি তুলেছেন অমিত মোহান্ত।

গঙ্গারামপুরে ক্রমশ কমছে এমন তাঁতের সংখ্যা। ছবিটি তুলেছেন অমিত মোহান্ত।

তিন দশক আগেও পুজোর তিন মাস আগে গঙ্গারামপুরের বসাকপাড়া, দত্তপাড়া, ভোদং পাড়া, স্কুলপাড়া হয়ে ইন্দ্রনারায়ণপুর কলোনির রাস্তায় হাঁটলে শোনা যেত মাকুর খটাখট শব্দ। কাছে গেলে দেখা যেত প্রায় ঘরে ঘরে তাঁত চলছে। নতুন শাড়ি-কাপড় তৈরির ব্যস্ততা ছিল তুঙ্গে। এখন ওই পাড়াগুলি কেমন যেন ঝিমিয়ে। পুজোর দু’মাসও বাকি নেই। কিন্তু, ওই সব এলাকায় গেলে এখন বিস্তর খোঁজাখুঁজি করলে তাঁতের দেখা মেলে।

দেশভাগের সময় মূলত পাবনা থেকে ছিন্নমূল হয়ে এসে গঙ্গারামপুরে যাঁরা বসত গড়েছিলেন, তাঁরাই ওই পেশাকে আকড়ে ধরে জীবিকার সন্ধান খুঁজে পান। গঙ্গারামপুরে হস্তচালিত তাঁতকে কেন্দ্র করে ঘরে ঘরে শাড়ি তৈরি হতে থাকে। অনুসারি হিসেবে চরকায় সুতো তৈরি থেকে রং, নকশা তৈরির মতো কাজেও বহু মানুষ যুক্ত হয়ে পড়েন। এক সময় গঙ্গারামপুরে অন্তত ২০ হাজার মানুষ তাঁতশিল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। প্রত্যন্ত এলাকার তাঁতশিল্পীরা বর্তমানে গঙ্গারামপুরে অধিকাংশ বাড়ির তাঁতে ঝুল জমা হয়েছে। বন্ধ হয়ে গিয়েছে একাধিক সমবায় সমিতি। শহরে হাজার তিনেক মানুষ কোনওমতে বাপ-ঠাকুর্দার আমলের তাঁতশিল্পকে টিকিয়ে রেখে খুঁড়িয়ে চলছেন। নদিয়ার শান্তিপুর, ফুলিয়ার তৈরি তাঁতবস্ত্রের মুন্সিয়ানার সঙ্গে টক্কর দেওয়া গঙ্গারামপুরের তাঁতশিল্পের আজ কেন দুর্দশা? বাম আমলে গঙ্গারামপুরের বাসিন্দা নারায়ণ বিশ্বাস দীর্ঘ সময় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প মন্ত্রী ছিলেন। তিনি কেন কিছু করতে পারেননি? নারায়ণবাবুর যুক্তি, “বাম আমলে এই শিল্পের উন্নতির চেষ্টা হয়েছিল। তাঁতের বাজার থেকে সমবায় সমিতির মাধ্যমে তাঁতবস্ত্র বিক্রির ব্যবস্থা হয়েছিল।” তা হলে সাফল্য মেলেনি কেন? নারায়ণবাবুর যুক্তি, “কেন্দ্রীয় সরকার সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে তাঁত শিল্পের উন্নতিতে উদ্যোগী হয়নি। ফলে, মিলের সস্তা শাড়ির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারেনি।”

এখন তৃণমূল জমানায় তাঁতের কারিগরেরা যে খুব আশার আলো দেখছেন তা নয়। তন্তুবায় সমবায় সমিতির একাধিক সদস্য জানান, কিছু দিন আগেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গঙ্গারামপুর সফরে জনসভায় আশ্বাস দেন, সিঙ্গাপুরে এলাকার তৈরি চটের ব্যাগ বিপণনের চেষ্টা করবেন। সেই সঙ্গে কেন গঙ্গারামপুরের সুপ্রাচীন ও ঐতিহ্যমণ্ডিত হস্তচালিত তাঁতে তৈরি সামগ্রীকে গুরুত্ব দিলেন না মুখ্যমন্ত্রী, তা নিয়েই সমবায় সমিতির সদস্যদের অনেকের মধ্যে চলছে নানা আলোচনা। কয়েকজন সদস্য বলেন, “কয়েক হাজার তাঁতশিল্পী কাজ হারিয়ে শ্রমিক হয়ে ভিন রাজ্যে চলে গিয়েছেন। যাঁরা রয়েছেন তাদের অধিকাংশ রিকশা চালিয়ে ও হকারি করছেন।” রাজ্যের পরিষদীয় সচিব তথা হরিরামপুরের তৃণমূল বিধায়ক বিপ্লব মিত্রের আশ্বাস, “গঙ্গারামপুরে ‘তাঁত-হাবের’ জন্য ৬৮ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। একই ছাতার নীচে থেকে তন্তুবায়ীরা আধুনিক কারিগরির সুবিধা নিয়ে শাড়ি তৈরি করতে পারবেন। তৈরি শাড়ি-কাপড় বিক্রির ঝুঁকিও শিল্পীদের থাকবে না।” গঙ্গারামপুরের তৃণমূল বিধায়ক সত্যেন রায় বলেন, “টেক্সটাইল হাব গড়তে গঙ্গারামপুরের বসাকপাড়ায় ৩০ শতক এবং কালীতলা এলাকায় প্রায় ৫০ শতক জমি চিহ্নিত হয়েছে।” তবে আশ্বাস পেলেও কবে ‘টেক্সটাইল হাব’ হবে তা অবশ্য স্পষ্ট নয় গঙ্গারামপুরে জেলা হস্তচালিত তাঁত সুরক্ষা সমিতির কারও কাছেই। সংগঠনের সম্পাদক রামগোপাল বিশ্বাস বলেন, “দীর্ঘকাল সরকারি উদ্যোগ ও নজরদারির অভাবে তাঁত শিল্প মুখ থুবড়ে পড়েছে। গঙ্গারামপুরে টেক্সটাইল হাব গড়া হলে প্রকৃতই এই কুটির শিল্পের পুনরুজ্জীবন হবে। উপকৃত হবেন কয়েক হাজার তাঁত মালিক এবং শিল্পী। কিন্তু, কবে হবে তা স্পষ্ট হওয়া ভীষণ জরুরি।”

বস্তুত, গঙ্গারামপুর শহরের বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দারাও চান ভবিষ্যতের স্পষ্ট ছবি দেখানো হোক। শহরের দৈনন্দিন পরিষেবার ঘাটতি কী ভাবে পূরণ করা হবে, কতদিনে হতে পারে তা জনসমক্ষে তুলে ধরুক প্রশাসন। কারণ, অনেক ক্ষেত্রেই পুর পরিষেবা ঠিকঠাক মিলছে না।

(চলবে)

gangarampur textile anupratan mohonto
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy