Advertisement
E-Paper

কাজের কাজ হয়নি, হতাশ চা শ্রমিকেরা

৫ বছর আগে মালবাজারে সভা করতে গিয়ে চা শ্রমিকদের জমির অধিকারের পক্ষে নিয়ে সওয়াল করেছিলেন কংগ্রেসের সর্বভারতীয় নেতা রাহুল গাঁধী। কিন্তু, কাজের কাজ এখনও হয়নি। মঙ্গলবার সকালে সেই পাঁচ বছর আগের কথারই যেন পুনরাবৃত্তি করলেন কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সহ সভাপতি।

বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৪ ০১:১৫

৫ বছর আগে মালবাজারে সভা করতে গিয়ে চা শ্রমিকদের জমির অধিকারের পক্ষে নিয়ে সওয়াল করেছিলেন কংগ্রেসের সর্বভারতীয় নেতা রাহুল গাঁধী। কিন্তু, কাজের কাজ এখনও হয়নি। মঙ্গলবার সকালে সেই পাঁচ বছর আগের কথারই যেন পুনরাবৃত্তি করলেন কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সহ সভাপতি। তিনি বললেন, “চা শ্রমিকদের অধিকার দিতে হবে। চা শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা আমরা ভাবছি। এমন কিছু করার চেষ্টা চলছে, যেন শ্রমিকরা উন্নয়নের কাজে একাত্ম হতে পারেন। ভাবতে পারে দেশটা তাঁদেরও।”

ঘটনাচক্রে, ওই সভায় বাগানের কাজ বন্ধ রেখে হাজির হয়েছিলেন অনেক চা শ্রমিক। সকলেরই কৌতুহল তাঁদের জমির অধিকারের প্রসঙ্গে এবার নতুন কোনও কথা শোনা যায় তি না তা নিয়ে। শেষ পর্যন্ত কংগ্রেসের দেশের প্রথম সারির নেতা ফের একই কথা বলায় অনেক চা শ্রমিক সভাস্থলে দাঁড়িয়েই হতাশা প্রকাশ করলেন। অনেককেই বলতে শোনা গেল, “আমরা পাঁচ পুরুষ ধরে চা বাগানে থেকেও জমিতে বসবাসের অধিকার পাইনি। সেটা কবে হবে তা স্পষ্ট করে কোনও নেতা জানান না। আমরা ভেবেছিলাম এবার তা শোনা যাবে। কিন্তু, সেটাও হল না।”

রাহুল গাঁধীকে দেখতে কংগ্রেসের নির্বাচনী কর্মিসভায় ভিড় জমাল স্কুল পড়ুয়ারা। মঙ্গলবার সকালে ডুয়ার্সের মেটেলি এলাকার জুরন্তী চা বাগানের বীর বিরসা মুণ্ডা এমএসকে প্রাথমিক বিদ্যালয় ময়দানে ওই নির্বাচনী সভা হয়। সেখানেই প্রথম সাড়িতে বসে থাকতে দেখা গিয়েছে কয়েকশো কচিকাঁচাকে। ওই পড়ুয়ারা এলাকার জুরন্তী এডেড প্রাইমারি স্কুল, জুরন্তী শিশু বিদ্যা মন্দির এবং বীর বিরসা মুণ্ডা এমএসকে প্রাথমিক স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা। প্রত্যেকে স্কুল পোশাকে সভাস্থলে হাজির ছিস। নিকিতা ঝালা, প্রিন্স এক্কার মতো ক্লাস টু-র পড়ুয়ারা জানায়, রাহুল গাঁধীকে দেখার জন্য একটি ক্লাসের পরে স্কুল ছুটি হয়ে যায়। তাই ওঁকে দেখতে এসেছি।

মঙ্গলবার কংগ্রেস সহ সভাপতি রাহুল গাঁধী সভামঞ্চ থেকে নেমে বাঁশের বেষ্টনী টপকে কর্মীদের মধ্যে মিশে গেলেন। দৌড়ে যান নাগরাকাটা খাসবস্তির বাসিন্দা রাধিকা মাঝি। চিৎকার করে হিন্দিতে বললেন, রাহুলজি আমি দলের পঞ্চায়েত সদস্য। কিছু বলতে চাই। শুনে রাহুল ঘুরে দাঁড়ান। দলের পঞ্চায়েত সদস্যকে ডেকে নেন। রাধিকা দেবী ভুলে ভরা বিপিএল তালিকা, একশো দিনের কাজ, ইন্দিরা আবাস নিয়ে একগুচ্ছ সমস্যার কথা তুলে ধরেন। এগিয়ে যান মায়া থাপা, লক্ষ্মী শর্মার মত শতাধিক মহিলা। দশ মিনিট ধরে নেতার সঙ্গে এলাকার কর্মীদের আলোচনা চলে।

বস্তুত, অনেক আশা নিয়েই রাহুল গাঁধীকে বরণ করেছিলেন রীনা ছেত্রী, দিলকুমারি তামাঙ্গ, মায়া ছেত্রীরা মঞ্চ ও আশপাশে ছড়িয়ে থাকা মণি ডারনাল, বাবলু মুখোপাধ্যায়, মোহন শর্মারা। শ্রমিক নেতাদের মুখেও তখন খুশির ঝিলিক। কিন্তু ১২ মিনিটের বক্তব্যে তাঁরা কেউই খুব একটা খুশি হতে পারেননি।

ন্যাশনাল ইউনিয়ন অব প্ল্যানটেশন ওয়ার্কার্সের যুগ্ম সচিব মণি ডারনাল দাবি করেন, “আগে থেকে ঠিক মতো রাহুল গাঁধীকে চা বাগানের আশা-আকাঙ্খা নিয়ে বিশদে হয়তো জানানো হয়নি। তাই এদিন বিষয়টি নিয়ে কিছু বলেননি।” একই বক্তব্য মোহন শর্মারও। তবে তিনি বলেন, “বনবস্তির মতো চা বাগানেও শ্রমিকদের জমির অধিকার প্রতিষ্ঠা সম্ভব। এটা রাজ্য সরকারকে করতে হবে।” তাঁর মতে, শ্রমিক কলোনির জমি শ্রমিকদের লিজে দেওয়া হলে চা বাগান কর্তৃপক্ষের খরচ কমবে। সরকারি প্রকল্পে কাজ করতে অনেক সুবিধা হবে। বারবার ছাড়পত্রের জন্য মালিকপক্ষের কাছে ছোটাছুটি করতে হবে না। চা বাগান কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের মজুরি বাড়াতে পারবেন।

সিপিএম এবং আরএসপি নেতৃত্ব জলপাইগুড়ি জেলা সিপিএম নেতা তথা চা শ্রমিক নেতা কৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায় অবস্য সহমত হতে পারেননি। তাঁদের বক্তব্য, “শুনতে ভাল লাগে। প্রশ্ন হল, কোন জমিতে চা শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা হবে? ফাঁকা পড়ে থাকা জমিতে? নাকি শ্রমিক কলোনিতে? স্পষ্ট ব্যাখ্যা দরকার।’’

ডুয়ার্স চা বাগান ওয়ার্কার্স ইউনয়নের সাধারণ সম্পাদক মনোহর তিরকি জানান, সরকার তো শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য অনেক কিছু করতে পারে। তাঁর কথায়, “ওঁরা (কংগ্রেস) আগে স্পষ্ট করুক কী চাইছে?” চা বাগান কর্তৃপক্ষ প্রশ্ন তুলেছেন, বাগানের ভিতরে শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠা কেমন করে সম্ভব?

জুরান্তি চা বাগানের ম্যানেজার তথা ডুয়ার্স ব্রাঞ্চ অব ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশনের চালসা সাব ডিভিশনের চেয়ারম্যান তাপস দাস বলেন, “চা বাগানের জমি পুরোটাই লিজে নেওয়া। লিজে নেওয়া জমি শ্রমিকদের সাব লিজে দেওয়া সম্ভব?”

congress biswajyoti bhattacharya meteli
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy