Advertisement
E-Paper

কার্নিভালে থমকে গেল স্কুলবাস

রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী সদ্য ঢুকেছেন হাজতে। প্রতিবাদে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী নেমেছেন রাস্তায়। সংসদ তোলপাড় করছেন দলের সাংসদরা। অবরোধ, বিক্ষোভের জন্য লোক জড়ো করতে হিমশিম কর্মী-সমর্থকরা। তখন ‘শিলিগুড়ি কার্নিভাল’-এর সূচনা করলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী তথা তৃণমূলের দার্জিলিং জেলা সভাপতি গৌতম দেব। সোমবার লাল হুডখোলা জিপ থেকে জনতার দিকে হাত নাড়লেন তিনি। সঙ্গে রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমও। শিলিগুড়ির বাসিন্দাদের পাল্টা হাত নাড়তে দেখা গেল না তেমন।

কিশোর সাহা

শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:১৪
মিছিলের জেরে থমকে স্কুলবাস। শিলিগুড়ির হিলকার্ট রোডে মাল্লাগুড়ি এলাকায় বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।

মিছিলের জেরে থমকে স্কুলবাস। শিলিগুড়ির হিলকার্ট রোডে মাল্লাগুড়ি এলাকায় বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।

রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী সদ্য ঢুকেছেন হাজতে। প্রতিবাদে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী নেমেছেন রাস্তায়। সংসদ তোলপাড় করছেন দলের সাংসদরা। অবরোধ, বিক্ষোভের জন্য লোক জড়ো করতে হিমশিম কর্মী-সমর্থকরা।

তখন ‘শিলিগুড়ি কার্নিভাল’-এর সূচনা করলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী তথা তৃণমূলের দার্জিলিং জেলা সভাপতি গৌতম দেব। সোমবার লাল হুডখোলা জিপ থেকে জনতার দিকে হাত নাড়লেন তিনি। সঙ্গে রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমও। শিলিগুড়ির বাসিন্দাদের পাল্টা হাত নাড়তে দেখা গেল না তেমন। রাজ্যের এমন দুঃসময়ে দুই মন্ত্রীর উৎসব উদ্যাপনের ধাক্কা সামলাতে পারেননি বলে হয়তো।

কিন্তু বিস্ময়ের তখনও বাকি। কার্নিভালের প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ করা হয়েছিল ‘উড়ন্ত শিখ’ মিলখা সিংহকে। সম্বর্ধনা নেওয়ার পরেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অকুণ্ঠ প্রশংসা করলেন মিলখা। চা-ওয়ালা থেকে প্রধানমন্ত্রিত্বে তাঁর উত্থানকে ‘দৃষ্টান্ত’ বলে তুলে ধরলেন তিনি। মঞ্চে বসা দুই মন্ত্রীর চোখমুখ দেখে তখন বোঝা যাচ্ছিল, ধাক্কাটা সামলাতে চেষ্টা করছেন প্রাণপণ।

শহরের প্রধান রাস্তাগুলি আটকে নাচ-গানের আয়োজনে সব চাইতে বড় ধাক্কা অবশ্য খেয়েছেন নিত্যযাত্রীরা। যার বড় অংশ স্কুলপড়ুয়া। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়াম, আটকেছিল প্রায় সব রাস্তাই। মিছিল শেষ হওয়ার প্রায় দু’ঘণ্টা পরে শহরে ঢুকেছে স্কুলবাস। বাড়ি ফেরার পথে স্কুলবাসে দু’আড়াই ঘণ্টা আটকে খিদে-তেষ্টায় তত ক্ষণে কান্নাকাটি শুরু করেছে শিশুরা। পর্যটকেরা বিমান ধরতে যাওয়ার পথে মিছিলের জটে নাকাল হয়েছেন। ধাক্কা খেয়েছে ব্যবসাও। দিনভর যান চলাচল বন্ধ রাখায় কেনাবেচা তলানিতে হিলকার্ট রোড, বিধান রোডের ব্যবসায়ীদের। তাঁদের অনেকেই নেতা-মন্ত্রীদের তুলোধোনা করেছেন।

সব মিলিয়ে, কার্নিভাল দিয়ে শহরবাসীর চোখ ধাঁধানোর চেষ্টা অনেকটাই ব্যুমেরাং হয়ে ফিরে এল প্রধান উদ্যোক্তা, উত্তরবঙ্গ মন্ত্রী গৌতম দেবের দিকে। তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতার চাইতে অব্যবস্থাটাই বড় হয়ে উঠল।

বেলা দুটোর পর বাস বন্ধ করার নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ায় অভিভাবকরা গৌতমবাবুকে ফোন করতে থাকেন। স্কুলপড়ুয়ারা ফিরবে কী করে, সেই প্রশ্ন করেন তাঁরা। এর পর বেলা ১১টা নাগাদ উত্তরকন্যায় চা শ্রমিকদের মজুরি নিয়ে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে যোগ দিতে যান মন্ত্রী। কার্নিভালের জন্য তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যেতে চাইলে কয়েক জন শ্রমিক নেতা (যাঁদের মধ্যে তৃণমূলপন্থীরাও ছিলেন) প্রশ্ন তোলেন, চা শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণের চেয়ে কার্নিভালে যাওয়া কি বেশি জরুরি?

উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় বলেন, “শিলিগুড়িকে ব্র্যান্ড হিসেবে তুলে ধরার কার্নিভাল এটা। দলমত নির্বিশেষে সবাই অংশগ্রহণ করেছেন।”

“ব্র্যান্ডই বটে,” বললেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী। “শিশুদের কাঁদিয়ে, রাস্তা বন্ধ করে সকলকে হয়রান করে এমন কার্নিভাল ভূ-ভারতে আগে কখনও হয়েছে বলে শুনিনি।”

gautam deb siliguri carnival kishore saha
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy