Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

কুলোপাড়ার কুটিরশিল্প ধুঁকছে হরিশ্চন্দ্রপুরে, ঋণ অমিল শিল্পীদের

শিলনোড়া, ঢেঁকি এরকম অনেককিছু ,যা ছাড়া গৃহস্থের হেঁসেল একসময় ভাবা যেত না আধুনিকতার সঙ্গে তাল রাখতে গিয়ে তার অনেকগুলোই এখন ব্রাত্য। তবুও এখনও ঘরের এককোনে একটা কুলোর উপস্থিতি দেখা যায় অনেক বাড়িতেই। আর এই কোনওমতে টিকে থাকা কুলোকে ঘিরেই নিজেরাও টিকে থাকার লড়াই চালাচ্ছেন মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের কুলো গ্রাম বলে পরিচিত পিপলার বাঁশ ও বেত শিল্পীরা। কুলো শিল্পী হিসেবে স্বতন্ত্র পরিচিতি না থাকায় আর্টিসান কার্ড নেই কারও।

পরিবারে কুলো বোনার কাজ করেন মহিলারাই। নিজস্ব চিত্র।

পরিবারে কুলো বোনার কাজ করেন মহিলারাই। নিজস্ব চিত্র।

বাপি মজুমদার
চাঁচল শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:১৫
Share: Save:

শিলনোড়া, ঢেঁকি এরকম অনেককিছু ,যা ছাড়া গৃহস্থের হেঁসেল একসময় ভাবা যেত না আধুনিকতার সঙ্গে তাল রাখতে গিয়ে তার অনেকগুলোই এখন ব্রাত্য। তবুও এখনও ঘরের এককোনে একটা কুলোর উপস্থিতি দেখা যায় অনেক বাড়িতেই। আর এই কোনওমতে টিকে থাকা কুলোকে ঘিরেই নিজেরাও টিকে থাকার লড়াই চালাচ্ছেন মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের কুলো গ্রাম বলে পরিচিত পিপলার বাঁশ ও বেত শিল্পীরা। কুলো শিল্পী হিসেবে স্বতন্ত্র পরিচিতি না থাকায় আর্টিসান কার্ড নেই কারও। তাই প্রয়োজনেও মিলছেনা ব্যাঙ্কঋণ। কুলো বেঁচে সংসার চালিয়ে ব্যবসার পুঁজিটুকু জোগাড় করতে তাই হিমসিম খেতে হচ্ছে প্রতিদিন।

পিপলা গ্রামের প্রায় একশোটা পরিবার ওই কুলো তৈরির পেশায় যুক্ত। কয়েক পুরুষ ধরে তাঁরা এই কাজ করছেন বলে ওই পাড়াই পরিচিতি কুলো পাড়া নামে। বাপ-ঠাকুর্দার আমল থেকে ওই পেশার দৌলতে দুবেলা অন্নসংস্থান হলেও বর্তমান প্রজন্ম রীতিমত কোনঠাসা। সরকারি উদাসীনতায় পিপলা কুলো পাড়ার কুটিরশিল্প মুখ থুবড়ে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বছরের পর বছর হন্যে হয়ে ঘুরেও ঋণের সংস্থান না হওয়ায় কতদিন আর তাঁরা ওই পেশায় টিঁকে থাকতে পারবেন তা নিয়ে সংশয়ে কুলোপাড়ার বাসিন্দারা। এমনকী পঞ্চায়েতে ঘুরে হন্যে হলেও আর্টিজান কার্ড তথা শিল্পীর পরিচয়পত্র মেলেনি বলে অভিযোগ।

হরিশ্চন্দ্রপুর কলেজ লাগোয়া পিপলায় ঢুকলেই দেখা যাবে প্রায় প্রতি ঘরে কুলো তৈরিতে ব্যস্ত পরিবারের মহিলা ও পুরষরা। বাঁশ কাটা থেকে শুরু করে চেরাইয়ের কাজ পুরুষরা করলেও বুননের কাজ মূলতঃ করেন মহিলারা। পরিবারের দুজনে মিলে মাসে গড়ে ৬০টি কুলো তৈরি করতে পারেন। একেকটি কুলো বিক্রি হয় ১১০-১২০ টাকায়। বাসিন্দারা জানান, একটি কুলো বিক্রি করে যা লাভ থাকে তা দিয়ে প্রতিদিনের সংসার কোনওমতে চলে। বাড়তি আর কিছুই থাকে না।

প্রায় এক যুগ ধরে কুলো বানিয়ে সংসার চালাচ্ছেন রাজেশ দাস। স্ত্রী মামনিদেবীও তাঁর সঙ্গে একই কাজ করেন। তাঁদের অভিযোগ, পঞ্চায়েতের কাছে পেশাগত কোনও সাহায্য মেলেনি। ঋণের জন্য নিজেরা ব্যাঙ্কে যোগাযোগ করেও লাভ হয়নি কোনও। রাজেশ দাস বলেন, “ওরা বলছে, আমরা যে কুলো শিল্পী তা বোঝাতে আগে মেলার আয়োজন করতে হবে। তারপর ঋণের বিষয়টি ভাবা যাবে।”

আলো দাস, সঙ্গীতা দাসদের মতো কুলো শিল্পীরা বলেন, “দুটো-একটা কুলো তৈরি করে তা বেঁচে কোনওক্রমে সংসার চালাই। লাভের অংশ বাদে পুঁজিটুকু দিয়ে ফের বাঁশ-বেত কিনতে হয়। পুঁজি না পেলে মেলা করার সামগ্রী কিনব কীভাবে।”

চাঁচলের মহকুমাশাসক সঞ্জীব দে জানান, বিষয়টি নিয়ে তিনি ওয়াকিবহাল নন। তবে ওরা আর্টিজান কার্ড পাওয়ার যোগ্য কিনা তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি, ওঁরা যাতে ঋণ পান সেজন্য জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE