উত্তর দিনাজুরের চাকুলিয়ায় এক কিশোরীকে তুলে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণ করার অভিযোগ উঠল প্রতিবেশী তিন যুবকের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, ওই কিশোরী যাতে পুলিশে অভিযোগ না জানায়, তারজন্য তাকে ও তার পরিবারের লোকজনকে খুনের হুমকি দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে প্রতিবেশী আরও কয়েক জনের বিরুদ্ধে। অভিযুক্তদের হুমকির জেরে তিন সপ্তাহ ধরে ওই কিশোরী ও তার পরিবার ভয়ে সিটিয়ে থাকার পর অবশেষে প্রতিবেশীদের একাংশ পাশে দাঁড়ানোয় স্থানীয় ১১ জনের বিরুদ্ধে থানায় গণধর্ষণ ও খুনের হুমকির অভিযোগ দায়ের করল ওই কিশোরী। উত্তর দিনাজপুরের চাকুলিয়া থানার পাগলপীর এলাকার বাসিন্দা বছর ষোলোর ওই কিশোরী পেশায় বিড়িশ্রমিক বলে জানা গেছে। ওই কিশোরী গত ৩ অক্টোবর চাকুলিয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে। এরপর থেকেই অভিযুক্তরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছে বলে পুলিশের দাবি।
জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ ওয়াকার রেজা বলেন, “অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রিভেনশন অফ চিল্ড্রেন ফ্রম সেক্সুয়াল অফেন্স আইনে জামিন অযোগ্য ধারায় গণধর্ষণের মামলা রুজু করা হয়েছে। অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।”
পুলিশ জানিয়েছে, গত ৪ অক্টোবর চাকুলিয়া ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ওই কিশোরীর ডাক্তারি পরীক্ষা করিয়েছে পুলিশ। ওই কিশোরীর বয়সের কোনও বৈধ নথি পুলিশের কাছে জমা দিতে না পারায় আজ, শনিবার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে সে নাবালিকা কী না সেই পরীক্ষা করানোর কথা পুলিশের।
পুলিশ সূত্রের খবর, ওই কিশোরী প্রতিবেশি যুবক মহম্মদ কালা, মহম্মদ জিয়াল ও মহম্মদ হুসেনের বিরুদ্ধে গণধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেছে। এছাড়াও প্রতিবেশি আট যুবকের বিরুদ্ধে ওই কিশোরী তাঁকে ও তার পরিবারকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ করেছে। অভিযোগ, গত ৩ অক্টোবর রাতে ওই কিশোরী বিড়ি বাঁধার কাজ শেষ করে বাড়ির বাইরে শৌচাগারে গিয়েছিল। সেইসময় মহম্মদ কালা, মহম্মদ জিয়াল ও মহম্মদ হুসেন তার মুখ চেপে ধরে তুলে নিয়ে গিয়ে স্থানীয় একটি মুদিখানা দোকানের পেছনের জমিতে নিয়ে গিয়ে তাকে গণধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। এরপর অভিযুক্তরা ওই কিশোরী কে পুলিশে জানালে খুন করে ফেলা হবে বলে হুমকি দিয়ে পালিয়ে যায়। এরপর থেকেই গ্রামের কয়েকজন যুবক পুলিশে অভিযোগ জানালে ওই কিশোরী ও তার পরিবারের লোকেদের খুন করা হবে ও বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হবে বলে হুমকি দিয়ে যাচ্ছিল বলে অভিযোগ। অভিযুক্তরা প্রয়োজনে মোটা টাকা নিয়ে ধর্ষণের ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ারও পরামর্শ দেয় বলে দাবি ওই কিশোরীর। অভিযুক্তদের টানা হুমকি সহ্য করতে না পেরে গত ২ অক্টোবর কয়েকজন প্রতিবেশিকে ঘটনাটি জানায় ওই কিশোরী। তারা ওই কিশোরীর পাশে দাঁড়ানোয় পরদিন বাবাকে নিয়ে চাকুলিয়া থানায় গিয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে গণধর্ষণ ও খুনের অভিযোগ দায়ের করে সে।
প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশের দাবি, ঘটনার পর ধর্ষণে অভিযুক্ত তিন যুবক এক লক্ষ ১০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে চাইলে ওই কিশোরী ও তার পরিবারের লোকজন পুলিশে অভিযোগ না জানানোর ব্যাপারে রাজি হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু তিন সপ্তাহ অপেক্ষা করার পরেও ওই কিশোরী ক্ষতিপূরণের টাকা হাতে না পাওয়ায় প্রতিবেশিদের ঘটনাটি জানিয়ে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করে।
ওই কিশোরী অবশ্য দাবি করেছে, অভিযুক্তরা খুন ও বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে ও মোটা টাকা নিয়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু তারা টাকা নিতে চায়নি। ক্রমাগত হুমকির জেরে আতঙ্কে পুলিশে অভিযোগ জানাতে দেরি হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy