Advertisement
০২ মে ২০২৪

কমে যাচ্ছে বোরোলি মাছ, সতর্ক করতে উত্‌সবের প্রস্তুতি

সাতপদে সাজানো বোরোলিকে ঘিরে এবার আস্ত একটা উত্‌সবের পরিকল্পনা। মত্‌স্যরসিকদের রসনা তৃপ্তির জন্যে। সৌজন্যে কোচবিহার জেলা মত্‌স্য দফতর। সবকিছু ঠিক থাকলে ১২ই মার্চ থেকে এই দফতরের উদ্যোগে শুরু হবে বোরোলি মাছের উত্‌সব। ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে প্রস্তুতি। সাগরদিঘি পাড়ের মুক্তমঞ্চ চত্বরে এর আয়োজন করা হবে বলে ঠিক করে রেখেছেন দফতরের কর্তারা।

মাছের বাজারে বোরোলি। নিজস্ব চিত্র।

মাছের বাজারে বোরোলি। নিজস্ব চিত্র।

অরিন্দম সাহা
কোচবিহার শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৩৬
Share: Save:

সাতপদে সাজানো বোরোলিকে ঘিরে এবার আস্ত একটা উত্‌সবের পরিকল্পনা। মত্‌স্যরসিকদের রসনা তৃপ্তির জন্যে। সৌজন্যে কোচবিহার জেলা মত্‌স্য দফতর। সবকিছু ঠিক থাকলে ১২ই মার্চ থেকে এই দফতরের উদ্যোগে শুরু হবে বোরোলি মাছের উত্‌সব। ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে প্রস্তুতি। সাগরদিঘি পাড়ের মুক্তমঞ্চ চত্বরে এর আয়োজন করা হবে বলে ঠিক করে রেখেছেন দফতরের কর্তারা। এমজেএন স্টেডিয়ামের মত বড় মাঠ পেলে অবশ্য শেষ মুহূর্তে জায়গা পরিবর্তনের সম্ভাবনার কথাও আগাম জানিয়ে রেখেছেন তাঁরা।

খোদ জেলা মত্‌স্য আধিকারিক রান্না চেখে দেখে উত্‌সবের মেনু ঠিক করেছেন। তালিকায় জায়গা করেছে ভাঁপা বোরোলি, বোরোলি সরষে, দই বোরোলি, বোরোলি কালিয়া, বোরোলি ঝাল, বোরোলি পকোড়া, বোরোলি টক। তালিকায় বিশেষ আকর্ষণ হিসাবে নতুন কোনও পদ নিয়ে আসা যায় কিনা চিন্তাভাবনা চলছে তা নিয়েও।

উত্তরবঙ্গের এই অলিখিত মাছের রাজাকে নিয়ে বাঙালীর স্বাদ ও আহ্লাদ দুটোই বেশ উঁচু তারে বাঁধা। রাজ পরিবারের অন্দর থেকে আম আদমির হেঁসেল বা রাজনীতিবিদদের বারদুয়ার, সর্বত্রই রয়েছে বোরোলির কদর। রাজাদের আমলে মহারাণি ইন্দিরা দেবী বম্বে বা কলকাতা থাকলে বিমানে করে তোর্সার বোরোলি মাছ পাঠানো হতো বলে জানিয়েছেন কোচবিহার রাজপরিবারের দুয়ারবক্সি অমিয় বক্সি। আবার রাজ্যের প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু উত্তরবঙ্গে এলেই বোরোলি মাছের রকমারি পদ থাকত তাঁর জন্যে সাজানো ডাইনিং টেবিলে। পর্যটক থেকে বাসিন্দাদের মধ্যেও সুস্বাদু বোরোলির ব্যাপক পরিচিতি। কোচবিহারের বিভিন্ন হোটেলে বোরোলির ঝোলের চাহিদা তাই রীতিমতো তুঙ্গে। অথচ তোর্সার সম্পদ ওই রুপোলি মাছের অস্তিত্ব এখন সঙ্কটে। তোর্সায় আর সেভাবে মিলছে না পর্যাপ্ত বোরোলি মাছ। তাই বোরোলি সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা বোঝাতেই, এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মত্‌স্য দফতরের কর্তারা।

পরিবেশ প্রেমী সংস্থা ন্যাস-এর সম্পাদক অরূপ গুহ বলেন, “কীটনাশক প্রয়োগ, জল দূষণ এবং ব্যাটারির মাধ্যমে বিদ্যুতের শক দিয়ে অনিয়ন্ত্রিতভাবে তোর্সায় মাছ ধরার প্রবণতা বেড়েছে। বর্ষায় নেট ব্যবহার করে ডিম ভর্তি মাছ ধরা হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই বোরোলির সংখ্যা ক্রমশ কমছে। নজরদারি বাড়ানোও দরকার।” মত্‌স্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত কয়েক বছরে যোগান কমে যাওয়ায় বাজারে বোরোলির দামও ঊর্ধ্বমুখি। বড় আকারের বোরোলি গড়ে ৮০০-১০০০ টাকা পর্যন্ত কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি ও ছোট আকারের বোরোলির দর তুলনামূলকভাবে অবশ্য খানিকটা কম।

জেলা মত্‌স্য দফতরের কর্তারা জানান, বোরোলি মাছ রক্ষা নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে বোরোলি উত্‌সবে কর্মশালা ও আলোচনা সভাও হবে। সেইসঙ্গে থাকবে রকমারি পদ চেখে দেখার সুযোগ। কোচবিহার জেলা মত্‌স্য দফতরের সহকারি আধিকারিক অলোকনাথ প্রহরাজ বলেন, “গড়ে ৫ কেজি করে প্রতিদিন প্রতিপদের বোরোলি মাছ রান্না করা হবে। আগ্রহীরা আগে এলে আগে ভিত্তিতে ন্যূনতম খরচে পছন্দের পদ চেখে দেখার সুযোগ পাবেন।” চাপলা, নেদস, কাজলি, মৌরালার মত নদীয়ালি প্রায় বিলুপ্ত সুস্বাদু মাছের সংরক্ষণ নিয়েও ওই উত্‌সবে কর্মসূচি থাকছে বলে জানা গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

arindam saha cooch behar boroli fish
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE