Advertisement
E-Paper

কলেজ ভোট না মাফিয়া যুদ্ধ, এখনও ত্রস্ত কালিয়াচক

এ পাশ-ও পাশ দাঁড়িয়ে কয়েকটি মোটরবাইক। মাটিতে পড়ে একটি সাইকেল। তারই মধ্যে কেউ মাটিতে ডান হাঁটু ঠেকিয়ে বসে দু’হাতে পিস্তল ধরে গুলি ছুড়ছে। মোটরবাইকে বসেই ডান হাতে পিস্তল ধরে গুলি ছুড়ছে আর এক জন। মোটরবাইকে করে বন্দুক এনে তা হাতে হাতে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে দ্রুত। সোমবার মালদহের কালিয়াচক কলেজে ছাত্র সংঘর্ষ রীতিমতো মাফিয়া গোষ্ঠীর ‘গ্যাং ওয়ার’-এর আকার নিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০১৪ ২০:৪১

এ পাশ-ও পাশ দাঁড়িয়ে কয়েকটি মোটরবাইক। মাটিতে পড়ে একটি সাইকেল। তারই মধ্যে কেউ মাটিতে ডান হাঁটু ঠেকিয়ে বসে দু’হাতে পিস্তল ধরে গুলি ছুড়ছে। মোটরবাইকে বসেই ডান হাতে পিস্তল ধরে গুলি ছুড়ছে আর এক জন। মোটরবাইকে করে বন্দুক এনে তা হাতে হাতে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে দ্রুত। সোমবার মালদহের কালিয়াচক কলেজে ছাত্র সংঘর্ষ রীতিমতো মাফিয়া গোষ্ঠীর ‘গ্যাং ওয়ার’-এর আকার নিল। আধঘণ্টা ধরে এই তাণ্ডবের ফলে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে এক ঘণ্টা যানবাহন স্তব্ধ হয়ে যায়। গোটা সুলতানগঞ্জ এলাকায় দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। গৃহস্থেরাও আতঙ্কে দরজা-জানলা বন্ধ করে দেন। গুলির লড়াইয়ে কেউ হতাহত হননি। তবে বিরোধী দল ও স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, পুলিশ ছিল নিষ্ক্রিয় সাক্ষী।সোমবারই রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ ফল ঘোষণা হয়। ২০টি আসনের মধ্যে ১৫টি জিতে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ ওই কলেজের ছাত্র সংসদ দখল করে। গোলমালের আশঙ্কায় মঙ্গল-বুধ, দু’দিন কালিয়াচক কলেজ ছুটি দিয়ে দিয়েছে কলেজ কতৃর্পক্ষ। ওই কলেজের পরিচালন কমিটির সভাপতি রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী। ঘটনার পর তিনি কলেজ ভোটে শান্তি বজায় রাখার আবেদন করেন।
ছাত্র সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ সম্প্রতি রাজ্যের বেশ কিছু কলেজেই ঘটেছে। কিন্তু কালিয়াচক কলেজের সংঘর্ষে যে ভাবে প্রকাশ্যে বেপরোয়া ভাবে গুলি ও বোমা ছোড়া হয়েছে, তা আগে কেউ দেখেনি। কালিয়াগঞ্জ কলেজের পূর্ব দিকে ৩০-৪০ মিটার দূরে জাতীয় সড়ক। প্রত্যক্ষদর্শীদের একাংশের দাবি, সকাল থেকেই প্রায় দু’তিনশো তৃণমূল সমর্থক কলেজের সামনের লিচুবাগানে জড়ো হয়েছিল। ছাত্র পরিষদ এবং এসএফআইয়ের সমর্থকরা জড়ো হয়েছিল পশ্চিম দিকে, রেল লাইন ঘেঁষে। সকাল থেকে শান্তিপূর্ণ ভাবেই ভোট হচ্ছিল। বেলা পৌনে দু’টো নাগাদ গুলি, বোমা ছোড়া শুরু হয় লিচুবাগানের দিক থেকে। তার উত্তরে কিছু বোমা পড়ার আওয়াজ আসে বিরোধীদের দিক থেকে। কিন্তু তৃণমূলের সমর্থকদের গুলি-বোমা বর্ষণের সামনে বিরোধীরা দাঁড়াতে পারেনি, বলছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। লিচুবাগানের দিক থেকে প্রায় আট-দশজন দিশি আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলি ছুড়তে শুরু করে। তাদের হাতে ছিল প্রধানত ছিল মাস্কেট এবং ৯ মিলিমিটার পিস্তল। বোমাবৃষ্টিও শুরু হয়। জনাকুড়ি লোকের এই তাণ্ডবে এলাকা ফাঁকা হয়ে যায়। গ্রামবাসীর অভিযোগ, পুলিশবাহিনী মোতায়েন থাকলেও তারা ছিল নীরব দর্শক।
সিপিএমের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্রের দাবি, “ভিডিও ফুটেজ থেকে পুলিশ দেখেছে, যারা গুলি, বোমা ছুড়েছে তারা তৃণমূল-আশ্রিত দুষ্কৃতী। তারপরেও পুলিশ জেনেশুনে অচেনা দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে লোক দেখানো মামলা করেছে।” জেলা কংগ্রেস সভাপতি মৌসম বেনজির নূরও দাবি করেন, যারা গুলি-বোমা ছুড়েছে তারা তৃণমূল-আশ্রিত দুষ্কৃতী। কালিয়াচক থানার আইসি অবশ্য ‘অজানা ব্যাক্তি’-দের বিরুদ্ধে বোমা ও গুলি চালানোর অভিযোগে জামিন-অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের করেছেন। জেলা পুলিশ সুপার কল্যাণ মুখোপাধ্যায় এ দিন বলেন, “কারা গুলি চালিয়েছে, সনাক্ত করতে ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে। তা দেখে অভিযুক্তদের শনাক্ত প্রত্যেককে গ্রেফতার করা হবে।” সুপারের দাবি, পুলিশ মোতায়েন ছিল কলেজের ভিতরে। বাইরে যখন সংঘর্ষ ঘটে, তখন পুলিশ ছুটে গিয়ে শূন্যে দু-রাউন্ড গুলি চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। কিন্তু পুলিশ থাকা সত্ত্বেও আধঘণ্টা ধরে কী করে চলল গুলি-বোমার লড়াই, এই প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান পুলিশ সুপার।

তৃণমূলের জেলা সভানেত্রী তথা রাজ্যের নারী ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র দাবি করেন, বিভিন্ন সংবাদ চ্যানেলে গুলি চালাতে যাদের দেখা গিয়েছে তারা কংগ্রেস ও সিপিএম-আশ্রিত দুষ্কৃতী। তিনি বলেন, “কালিয়াচক কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেতা নিশ্চিত ছিল। যারা জিতবে তারা কেন গোলমাল করতে যাবে?” মৌসম বেনজির নূরের পাল্টা সওয়াল, “যারা গুলি ছুড়ছিল তারা যদি কংগ্রেসের হয়, তবে পুলিশ তাদের শনাক্ত করেও কেন গ্রেফতার করছে না? দুষ্কৃতীরা তৃণমূলের বলেই পুলিশের হিম্মত হচ্ছে না গ্রেফতার করার।”

এ দিন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী বলেন, “যারা গুলি চালিয়েছে, বোমা ছুড়েছে, তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা করেছে। পুলিশি তদন্তে আমরা বাধা দেব না। দুষ্কৃতীরা যে দলেরই হোক না কেন, তদন্তে যারা ধরা পড়বে, তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।” মঙ্গলবার কালিয়াচক কলেজে গিয়ে দেখা গেল, কলেজের সদর দরজায় তালা। আশপাশের এলাকা থমথমে। অধ্যক্ষা বিজয়া মিশ্র বলেন, “নির্বাচনের পরে উৎসাহের আঁচ যাতে কলেজে এসে না পড়ে, তাই কলেজ দু’দিন ছুটি দেওয়া হয়েছে।” কৃষ্ণেন্দুবাবু অবশ্য দাবি করেন, কলেজ বন্ধ রাখার বিষয়ে অধ্যক্ষা তাঁকে কিছুই জানানি। “খোঁজ নিয়ে দেখছি,” বলেন তিনি।

college election kaliachak
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy