Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

খুশির বেড়ানোয় অন্যরকম দিন কাটাল মিষ্টু, সঞ্জয়, আনন্দরা

কেউ ভিক্ষা করে দিন কাটায়, কেউ বা বাবা-মাকে হারিয়ে সম্পূর্ণ অনাথ। কেউ আবার দৃষ্টিহীন। কোচবিহারের জামালদহের পঞ্চপাণ্ডব সংস্থার উদ্যোগে অন্যরকম দিন কাটাতে ডুয়ার্স ঘুরে গেলেন এমনই ৬৩ জন। রবিবার জামালদহ থেকে বেরিয়ে এই দলটি ময়নাগুড়িতে আসে। সেখানে কালীপুজোর মণ্ডপ ঘুরে মূর্তি নদীর পাড়ে ধূপঝোরায় চলে আসে। সেখানেই একটি বেসরকারি রিসর্টে সারাটা দিন কাটাল মিষ্টু, সঞ্জয়, আনন্দেরা। ফি বছরই এরকম একদিনের বেড়ানো বরাদ্দ ওদের। পঞ্চপাণ্ডবের সৌজন্যে গতবছর ওঁরা গিয়েছিলেন লাটাগুড়ির জঙ্গলে। এ বছর এলেন ধূপঝোরায়।

চলছে একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া। রবিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

চলছে একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া। রবিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

সব্যসাচী ঘোষ
মালবাজার শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০১৪ ০১:৩৪
Share: Save:

কেউ ভিক্ষা করে দিন কাটায়, কেউ বা বাবা-মাকে হারিয়ে সম্পূর্ণ অনাথ। কেউ আবার দৃষ্টিহীন। কোচবিহারের জামালদহের পঞ্চপাণ্ডব সংস্থার উদ্যোগে অন্যরকম দিন কাটাতে ডুয়ার্স ঘুরে গেলেন এমনই ৬৩ জন। রবিবার জামালদহ থেকে বেরিয়ে এই দলটি ময়নাগুড়িতে আসে। সেখানে কালীপুজোর মণ্ডপ ঘুরে মূর্তি নদীর পাড়ে ধূপঝোরায় চলে আসে। সেখানেই একটি বেসরকারি রিসর্টে সারাটা দিন কাটাল মিষ্টু, সঞ্জয়, আনন্দেরা। ফি বছরই এরকম একদিনের বেড়ানো বরাদ্দ ওদের। পঞ্চপাণ্ডবের সৌজন্যে গতবছর ওঁরা গিয়েছিলেন লাটাগুড়ির জঙ্গলে। এ বছর এলেন ধূপঝোরায়।

সংগঠনের সম্পাদক মৃন্ময় ঘোষ এবং সভাপতি সঞ্জয় সরকারেরা জানান, আট বছর আগে তৈরি হয় সংগঠনটি। জামালদহের পাঁচ যুবক মৃন্ময় ঘোষ, সঞ্জয় সরকার, দোমাসু বর্মন, রামকৃষ্ণ বর্মন এবং বিদেশ সিংহের মিলিত উদ্যোগে গড়ে ওঠে এটি। নাম হয় পঞ্চপাণ্ডব। প্রতি তিন মাস অন্তর এই ভিক্ষাজীবীদের স্বাস্থ্যপরীক্ষা করান তাঁরা। অনাথ শিশু কিশোরদের খুঁজে বের করে তাঁদের পড়াশুনোর ব্যবস্থাও করেন। সে ব্যবস্থা এতটাই পাকা যে, ্য আনন্দ সরকার, প্রশান্ত বর্মন, ভিয়েনজিত বর্মন, মৃণাল বর্মন, কমল বর্মনদের মত ছাত্রেরা এক রাজ্যের বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিংং কলেজে পড়াশুনোর সুযোগ পেয়েছেন।

১০ থেকে ১২ বছরের মধ্যে বয়স সঞ্জয় বর্মন ও তাঁর ভাই ধনঞ্জয় বর্মনের। রয়েছে একমাত্র বোন বৃষ্টি। ছেলেবেলায় ওদের রেখেই মাকে খুন করে বাবা জেলে চলে যান। তারপর থেকেই অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে। তখন ওদের ছাদ হয়ে দাঁড়ায় এই সংস্থাটিই। এই পাঁচ যুবকের কাজে মুগ্ধ মালবাজারের মহকুমাশাসক জ্যোতির্ময় তাঁতি। একসময় তিনি ছিলেন মেখলিগঞ্জের মহকুমাশাসক। তখন থেকেই পঞ্চপাণ্ডবের কাজ নিয়ে ওয়াকিবহাল তিনি। মালবাজারে তারা এসেছে শুনে তিনিও দিনভর কাটালেন অভাবীদের সাহচর্যে। মহকুমাশাসকের কথায়, “পঞ্চপাণ্ডবের কাজ অভাবনীয়। ওদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি। ডুয়ার্সে বেড়াতে আসার কথা শুনেই এদিন আমি চলে এসেছি।” শিলিগুড়ির ব্যবসায়ী সমরজিত রায় জড়িয়ে রয়েছেন পঞ্চপাণ্ডবের কর্মকাণ্ডে। এদিন তিনিও ছিলেন। সমরবাবুর কথায়, “সরকারি সাহায্য ছাড়াই যে রকম কাজ করছে পঞ্চপাণ্ডব, তার তুলনা নেই।”

এক দিনের ডুয়ার্স সফরে খুশি সংস্থার সঙ্গে আসা এই মানুষগুলো। সবচেয়ে খুশি ছোটরা। ন’বথরের মিষ্টু বর্মন ছোট থেকেই দৃষ্টিহীন। তার কথায়, “ডুয়ার্সে বেশ শীত শীত করছে। আবহাওয়ার রকম ফেরেই বুঝতে পারছি যে আমি ঘুরতে এসেছি। বেলা শেষে ফের ঘরে ফেরার পালা যখন আসল, তখন অনেকটাই বিষন্নতার মেজাজ। ফের ডুয়ার্সে এসে রাত কাটানোর আবদার করতেও শোনা গেল অনেককেই। পঞ্চপাণ্ডবের মুখে তখন তৃপ্তির হাসি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

mistu sanjay anand sabyasachi ghosh malbajar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE