Advertisement
E-Paper

গাছ-পুকুর কমে ফ্ল্যাট বেড়েছে বালুরঘাটে

মেড়ার মাঠের বেলতলা পার্ক থেকে হাইস্কুলের মাঠ। সেই মাঠ হয়ে টাউন ক্লাব ও ফেন্ডস ইউনিয়নের মাঠও। অন্যদিকে, রঘুনাথপুর, চকভবানী এলাকা থেকে প্রাচ্যভারতী, বঙ্গি, বিশ্বাসপাড়া থেকে খাদিমপুর হয়ে সাহেবকাছারী ও খিদিরপুর পর্যন্ত বিস্তৃত বালুরঘাট পুর এলাকা। একসময় এই এলাকা ছিল ঘন শালবাগান ও গাছগাছালিতে ভরা। ফাঁকে ফাঁকে পুকুর দিঘি। এখন সব যেন উবে গিয়েছে। জলাজমি বুজিয়ে গড়ে উঠছে ফ্ল্যাটবাড়ি।

অনুপরতন মোহান্ত

শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৪ ০২:৪১
আরও ঘিঞ্জি হচ্ছে শহর। ফ্ল্যাটবাড়ির সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে বালুরঘাটে। অমিত মোহান্তের তোলা ছবি।

আরও ঘিঞ্জি হচ্ছে শহর। ফ্ল্যাটবাড়ির সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে বালুরঘাটে। অমিত মোহান্তের তোলা ছবি।

মেড়ার মাঠের বেলতলা পার্ক থেকে হাইস্কুলের মাঠ। সেই মাঠ হয়ে টাউন ক্লাব ও ফেন্ডস ইউনিয়নের মাঠও। অন্যদিকে, রঘুনাথপুর, চকভবানী এলাকা থেকে প্রাচ্যভারতী, বঙ্গি, বিশ্বাসপাড়া থেকে খাদিমপুর হয়ে সাহেবকাছারী ও খিদিরপুর পর্যন্ত বিস্তৃত বালুরঘাট পুর এলাকা। একসময় এই এলাকা ছিল ঘন শালবাগান ও গাছগাছালিতে ভরা। ফাঁকে ফাঁকে পুকুর দিঘি। এখন সব যেন উবে গিয়েছে। জলাজমি বুজিয়ে গড়ে উঠছে ফ্ল্যাটবাড়ি।

ইদানীং শহরের খেলার মাঠেও নজর পড়েছে একশ্রেণির নির্মাতাদের। ফাঁকা জমি পেলেই যেন ফ্ল্যাটবাড়ি গড়া হবে। ঐতিহ্যমণ্ডিত ‘চ্যাটার্জী বাড়ি থেকে হাইস্কুলের মাঠ’, সব জায়গায় এখন অট্টালিকা। সেই চ্যাটার্জীবাড়িতে একদা সুভাষচন্দ্র বসু এসেছিলেন। ঐতিহ্যবাহী জেলার হাইস্কুলের মাঠ এলাকায় ‘দখল’ করে মার্কেট কমপ্লেক্স হচ্ছে। পুরসভার সে দিকে খুব একটা হেলদোল নেই। প্রশ্ন করলে পুরসভার অফিসারদের কয়েকজন জানান, শহরের লোকসংখ্যা ১লক্ষ ৫১ হাজার ১৮৩ জন হয়ে গিয়েছে। তাঁদের মতে, থাকার জায়গার প্রয়োজন প্রতিদিনই বাড়ছে বলে ফ্ল্যাটবাড়ি হচ্ছে।

ভোগান্তি আরও আছে। তা হল যানজট। সকালে অফিসের ব্যস্ত সময়ে শহরের পথে নামলেই সকলকে হোঁচট খেতে হয়। বাসস্ট্যান্ড থেকে মোটর কালীবাড়ি হয়ে একদিকে বালুরঘাট কলেজ ও অন্যদিকে সিএমওএইচের অফিস, প্রশাসনিক ভবন অন্যদিকে বিশ্বাসপাড়া থেকে সাড়ে তিন নম্বর মোড়, ডানলপ মোড়, জেলা আদালত হয়ে পুলিশ সুপারের অফিস, সর্বত্রই যানজট যেন বাড়ছে। প্রশাসনিক ভবন ও থানার রাস্তায় রিকশা, অটো, ট্রাক্টর, ছোটগাড়ির ভিড়ে নিত্য যানজটে জেরবার।

বাসিন্দাদের অনেকেরই অভিযোগ, বেআইনি রিকশা, লাইসেন্সবিহীন ছোট গাড়ি যানজটের অন্যতম কারণ। কিন্তু, পরিবহণ দফতরের পক্ষ থেকে যানজট কমাতে কেউ উদ্যোগী হন না কেন তা নিয়েই নানা বিতর্ক রয়েছে। পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান রাজেন শীলের যুক্তি, “বালুরঘাট শহরের মূল বাজার এলাকায় পার্কিংয়ের কোনও ব্যবস্থা নেই। জায়গাও নেই। বাম আমলে সে সবের পরিকল্পনা হয়নি।” ভাইস চেয়ারম্যানের অভিযোগ, সে জন্যই শহরে দখলদারের সংখ্যা বেড়েছে।

তবে বাসিন্দারা কিন্তু আশাবাদী। কারণ, শহরে বেশ কিছু উন্নয়নের কাজকর্ম শুরু হয়েছে। প্রতি বাড়িতে পরিশ্রুত পানীয় জল সরবরাহের কাজ শুরু হয়েছে। বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের বালুরঘাট শহরের দক্ষিণ দিকে ডাঙ্গি সীমান্তে সরকারি স্তরে চেকপোস্ট খোলার প্রক্রিয়া চলছে। তাতে বাংলাদেশের সঙ্গে বহির্বাণিজ্যের নতুন সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে। ধানের তুষ থেকে তেল এবং অত্যাধুনিক বড় বড় চালকল গঙ্গারামপুরে হয়েছে। বালুরঘাটেও তা হতে পারে।

তবে এ শহরের সংস্কৃতিচর্চার কথা না বললেই নয়। বালুরঘাটের নাট্যচর্চার ঐতিহ্যের কথা কলারসিক মাত্রই জানেন। সেই বালুরঘাটে একটা নাট্য অ্যাকাডেমি গড়ার দাবি উঠেছিল বহু আগে। বাম আমলে তা হয়নি। তৃণমূল জমানায় সেই কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু, তিন বছর পেরোলেও সেই কাজ ঢিমেতালে চলছে। কবে শেষ হবে তা কেউই ঠিকঠাক বলতে পারছেন না। অথচ বালুরঘাটে নাট্য অ্যাকাডেমি, নাট্যগ্রাম গড়ে তোলার মতো রসদ কম নেই বলেও মনে করেন নাট্যপ্রেমীরা।

রয়েছে পর্যটন প্রসারের অনেক সুযোগও। আত্রেয়ী খাড়ির দুপাশে বাঁধ দেওয়া হলেও প্রস্তাবিত পার্কিং জোন, বোটিংয়ের ব্যবস্থা ও মার্কেট কমপ্লেক্স-এর পরিকল্পনা রূপায়ণের কোনই উদ্যোগ চোখে পড়ে না বাসিন্দাদের। বরং সেই বাঁধ জুড়েই অপরিকল্পিত ভাবে গড়ে উঠেছে দোকান। তবে পর্যটনের সব সম্ভাবনাই একদিন বাস্তবে রূপ পাবে, সেই আশাতেই রয়েছেন বাসিন্দারা।

(শেষ)

amar shohor greenary building anupratan mohanty
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy