তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর বিবাদে দলের দখলে থাকা তুফানগঞ্জের বলরামপুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েতে স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান আর্জিনা খাতুন বেগমের সঙ্গে ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সুচিত্র রায়ের অনুগামীদের মধ্যে প্রায় চার মাস ধরে মতবিরোধ চরমে উঠেছে। অভিযোগ, পঞ্চায়েতের কাজকর্মের কর্তৃত্ব নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ওই বিবাদের জেরে সংশ্লিষ্ট গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান দফতরে আসছেন না। উপপ্রধানের আর্থিক বিল অনুমোদনের ক্ষমতা নেই। ফলে একশো দিনের কাজ প্রকল্প, রাস্তা উন্নয়ন কাজ সহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ বাস্তবায়নে সমস্যা তৈরি হয়েছে। বাসস্থানের শংসাপত্র সংগ্রহেও বাসিন্দাদের অনেকে হয়রানির মুখে পড়ছেন। ঠিকাদারদের একাংশের পাওনা বরাদ্দ মেটান যাচ্ছে না। গোটা ঘটনায় এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
যুযুধান দুই গোষ্ঠীই অবশ্য উদ্ভুত পরিস্থিতির জন্য পরস্পরের দিকে অভিযোগের তির ছুঁড়েছেন। ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানা আর্জিনা খাতুন বেগম বলেন, “দলের কিছু লোক আমাকে দিয়ে মর্জিমাফিক কাজ করাতে চাইছেন। সে সবের আপত্তি করাতেই আমাকে গ্রাম পঞ্চায়েত দফতরে ঢুকতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। একাধিকবার চেষ্টা করেও দফতরে ঢুকতে পারিনি।” বলরামপুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সুচিত্র দাস বলেন, “এলাকার ১০ জন পঞ্চায়েতের সবাই তৃণমূলের। ৯ জন প্রধানের স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে অনাস্থা এনেছিলাম। এলাকার মানুষ ওঁকে প্রধান হিসাবে চাইছেন না। কিন্তু আড়াই বছর পূর্ণ না হওয়ায় তা গৃহীত হয়নি। কিন্তু অফিসে আসতে বাধা দেওয়ার কথা ঠিক নয়।”
স্থানীয় স্তরের ওই বিবাদের রেশ পড়েছে দলের জেলা স্তরেও। তৃণমূল যুব কংগ্রেসের কোচবিহার জেলা সভাপতি রানা বসু প্রধানের পাশে দাঁড়িয়েছেন। রানাবাবু বলেন, “কিছু সমাজবিরোধী প্রধানকে কাজ করতে দিচ্ছেন না। প্রশাসন থেকে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব সবাইকে বিষয়টি জানাতে প্রধানকে পরামর্শ দিয়েছি।” তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ অবশ্য বলেন, “প্রধান নিজেই কাউকে না জানিয়ে একবার ইস্তাফাপত্র জমা দেন। তা নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়েছে। সে জন্যই উনি অফিসে যেতে পারছেন না বলে শুনেছি। তা ছাড়া এলাকার বিধায়কের সঙ্গেও তিনি যোগাযোগ রাখতেন না।”
বিধানসভা ভোটের কথা মাথায় রেখে দলের গোষ্ঠী কোন্দল এভাবে প্রকাশ্যে এসে পড়ায় অস্বস্তি বেড়েছে স্থানীয় নেতাকর্মীদের অনেকেরই। তাঁদের বক্তব্য, গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে ১০টি আসনের সব ক’টিতেই মানুষ দলের প্রার্থীদের জেতান। তারপরেও প্রায় চার মাস ধরে নিজেদের বিবাদে পঞ্চায়েতের স্বাভাবিক কাজ ব্যাহত হয়ে যে অচলাবস্থার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তাতে ভোটারদের কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে। তৃণমূলের বলরামপুর ২ অঞ্চল কার্যকরী সভাপতি সামিউল ইসলাম বলেন, “বিভিন্ন কাজে সমস্যা হচ্ছে। অডিটও বাতিল হয়েছে। নেতৃত্বকে সব জানিয়েছি।”