চোখের সামনে আত্রেয়ীকে শুকিয়ে যেতে দেখে স্থির থাকতে পারেন না ৮৩ বছরের মুরারী। একসময়ের ভরা আত্রেয়ীর বিস্তর মাছের যোগানেই চলত পূর্ববঙ্গ থেকে ছিন্নমূল হয়ে আসা এই সারা এলাকার মৎস্যজীবীদের জীবন সংসার। আজ শীর্ণরূপ আত্রেয়ীর শ্মশানঘাটের বুড়ো বটের তলায় দীর্ঘসময় বসে থেকেও নদীতে মাছ কেন একটি জলপোকাকেও ঘাই দিতে দেখলেন না মুরারী। চোখের সামনে পেটের টানে ধীবরের পেশা বদলে কলোনির বাসিন্দারা কেউ তেলকলের শ্রমিক, কেউবা নাপিতের পেশা আঁকড়ে বাঁচার চেষ্টায়। পরিবার-পরিজনদের বাঁচাতে আত্রেয়ীকেও বাঁচাতে হবে ভেবে অস্থির হয়ে ওঠা প্রবীণ মুরারী উপায় খুঁজে না পেয়ে শেষে আত্রেয়ীর জলে আত্মঘাতী হলেন। পরদিন মহালয়ার ভোরে দহঘাটে বৃদ্ধ মুরারীর ভেসে থাকা দেহটা দেখে প্রতিবেশিরা চমকে ওঠেন। ঠিক যেন জলপোকার মতো বুড়োর দেহটা.....
দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট শহরের তূণীর নাট্যগোষ্ঠী দীর্ঘ ১৫ বছর পর এবার পুজোয় নতুন নাটক মঞ্চস্থ করতে চলেছে। নাটকের নাম জলপোকা। নদীকে ঘিরে বেঁচে থাকা একটা জনসমাজ কী ভাবে নদীর নাব্যতা হারানোর সঙ্গে হারিয়ে যেতে বসেছে, জলপোকা নাটকের লেখক শহরের নাট্যকর্মী যিষ্ণু নিয়োগী তা তুলে ধরতে চেয়েছেন।
পুজোর আর হাতে গোনা মাত্র কটা দিন বাকি। উত্তরবঙ্গের নাটকের শহর বালুরঘাটের নাট্যমহলেও তাই নতুন-পুরনো নাটকের মহলা তুঙ্গে। কুশমন্ডি থেকে বালুরঘাট নাটককে ভালোবেসে প্রতিকূলতাকে ঠেলে এগোচ্ছে দলগুলি।
নিখোঁজ এক সিবিআই অফিসারকে মৃত বলে দফতর থেকে ঘোষণার পর এক মেয়েকে নিয়ে তাঁর স্ত্রী অথৈ জলে পড়েন। ওই সিবিআই অফিসারের বন্ধু সুবিনয় তাঁর পাশে দাঁড়ান, তাঁকে বিয়ে করেন। তাঁদের একটি ছেলেও হয়। কিন্তু দীর্ঘ ৩০ বছর পরে সুবিনয়রা জানতে পারেন, ওই সিবিআই অফিসার বেঁচে আছেন এবং তিনি ফিরে আসছেন। ত্রিতীর্থের নাট্যকার হরিমাধব মুখোপাধ্যায় রচিত ও পরিচালিত বাণপ্রস্থ নামে মানবিক টানাপড়েনের ওই নতুন নাটকটি ইতিমধ্যে নিজস্ব গোবিন্দাঙ্গন মঞ্চে মঞ্চস্থ হতে শুরু করেছে।
বালুরঘাটের নাট্যমন্দির, নাট্যকর্মী, সমবেত নাট্যকর্মী, সৃজন, নাট্যতীর্থ, শপথ নাট্যদল, কুশমন্ডির ঊষাভানু এবং দিনাজপুর থিয়েটার কোম্পানি দলগুলি পুজোর মরসুমে নতুন নাটক নামাতে তৎপরতা বাড়িয়েছে। কুশমন্ডির দিনাজপুর থিয়েটার কোম্পানির কর্ণধার সুনির্মলজ্যোতি বিশ্বাস বলেন, “এবারে মাউসট্র্যাপ (ইঁদুর কল) নামে একটি বিদেশি নাটক মঞ্চস্থ করার উদ্যোগ চলছে। নাটকটি বাংলায় অনুবাদ করছেন নাট্যকর্মী তথা এ জেলার সাংসদ অর্পিতা ঘোষ।” আগামী ৭ নভেম্বর থেকে ১১ নভেম্বর স্থানীয় নাট্যমন্দির মঞ্চে পাঁচদিনের উত্তরের নাট্য উৎসবে মেতেছে বালুরঘাটের শপথ নাট্যদল। তাঁদের নিজেদের পরিচালনায় রক্তকরবী নাটক তো থাকছেই। এই নাট্যোৎসবে থাকছে শিলিগুড়ির সৃজনসেনা নাট্যদল, জলপাইগুড়ির আনর্ত, কালিয়াগঞ্জের অনন্যা নাট্যদল ও নাট্যমন্দির সংস্থা।
একযুগের বেশি সময় পার করে এসে এই শহরে তূণীর পুজো মরসুমে নতুন নাটক জলপোকা-র হাত ধরে ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে। শহরের ডাকবাংলোপাড়া এলাকার গলির মধ্যে টিনের ছাউনি দেওয়া ছোট্ট ঘরে ১০ জন শিল্পীকে নিয়ে চলছে নাটকের রিহার্সাল। তূণীরের সম্পাদক সঞ্জয় রায় বলেন, “৬টি নাটক মঞ্চস্থের পর অর্থনৈতিক সঙ্কটে নাটক বন্ধ হয়ে যায়। নিজেদের মধ্যে চাঁদা তুলে ফের তূণীর ঘুরে দাঁড়াতে লড়াইয়ে নেমেছে। কোনও সরকারী সহায়তা এখনও জোটেনি।”
শহরের নাট্যকর্মী এবারে হাসির নাটক নিয়ে মঞ্চে নেমেছে। নাটকের নাম শিক্ষামেব জয়তে। নাট্যকর্মীর অমিত সাহা বলেন, “হাসির আড়ালে কঠিন বাস্তবের সামনে দাঁড় করানো শিক্ষামেব জয়তে নাটকের বিষয়বস্তু।”
ঊষাভানু নাট্যদলের নতুন নাটকের নাম ফাঁকা ডাব। কুশমন্ডির নাট্যকার ও অভিনেতা সৌরভ রায়ের কথায়, “সরকার ও গরিব ঘরের পড়ুয়া দু’তরফেই এই নাটকে একটি বার্তা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। এই নাটকটি এবারে কুশমন্ডি ও হরিরামপুরের পুজো মন্ডপে সপ্তমী থেকে দশমী তিন দিন মঞ্চস্থ হবে।
আবার পুজো মরসুমে বাঙালীদের ভ্রমণ প্রবণতার কথা ভেবে নতুন নাটক করতে দ্বিধাও রয়েছে কয়েকটি দলের। যেমন বালুরঘাট নাট্যমন্দির সম্প্রতি ওয়াশিং মেশিন নামে একটি নাটক করেছে। নাট্যতীর্থ আবার দানসাগর নাটকে আটকে রয়েছে। সৃজন সংস্থা এক আহাম্মকের গল্প নামে নতুন নাটক নিয়ে মহলা শুরু করেছে। সৃজনের সভাপতি রবীন্দ্র নাথ সাহা কিংবা তূণীরের সঞ্চয় রায়ের কথায়, নাটকের শহরে নাট্যদলগুলি সরকারি সহায়তা থেকে বঞ্চিত। সরকারী উদ্যোগে নাট্য উৎসব হলে দলগুলি উৎসাহ পেত। গত বছর মালদহে ওই উৎসব হয়েছে।
এ বারের শীতে সরকারি উদ্যোগে বালুরঘাটে কী নাট্য উৎসব হবে? আশায় আছেন নাট্যকর্মীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy