বৃষ্টির দেখা নেই। উপরন্তু, পোকার উপদ্রব শুরু হয়েছে উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকার ছোট বাগানে। সবুজ খেকো, লাল মাকড়সা সহ নানা প্রজাতির পোকামাকড় চা গাছের রস খেয়ে নিচ্ছে। উপদ্রব শুরু বুনো মশারও। ওষুধ দিয়ে কাজ হচ্ছে না। সব মিলিয়ে পঞ্চাশ হাজার চাষি বুঝতে পারছেন না কেমন করে চা গাছ বাঁচাবেন।
চা গবেষণা কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে এ বার চা বলয়ে পোকা-মাকড়ের হামলা উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে। বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত ওই সমস্যার স্থায়ী সমাধান সূত্র মিলবে না বলে তাঁদের অনুমান। উত্তরবঙ্গে এপ্রিলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ক্রমশ কমছে। ২০১২ সালে বৃষ্টি হয়েছিল ১৯২ মিলিমিটার। ২০১৩ সালে ১১৪ মিলিমিটার। এবার ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত বিক্ষিপ্ত ভাবে ছিটেফোঁটা বৃষ্টি হয়েছে। তাপমাত্রার পারদ ৩৬ ডিগ্রি থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। ওই কারণে বাগানে সবুজ পোকার উপদ্রব বাড়ছে। চা গবেষণা কেন্দ্রের উত্তরবঙ্গ শাখার মুখ্য উপদেষ্টা শ্যাম ভারগিস বলেন, “বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত কিছু করার নেই। পোকার উপদ্রব ক্রমশ বাড়বে। পাতা উৎপাদন মার খাবে।”
ওই পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়েছেন ক্ষুদ্র চাষিরা। কৃত্রিম সেচ ও ওষুধের ব্যবস্থা করে গাছ বাঁচাতে গিয়ে তাঁরা জেরবার। যাঁরা লাভের আশায় সবজি ও ধান চাষ ছেড়ে চা চাষে এগিয়েছেন, তাঁদের মাথায় হাত পড়েছে। রাজগঞ্জের কুকুরজানের বাসিন্দা বিমল রায় এই প্রসঙ্গে বলেন, “খরচের টাকা কেমন করে তুলব বুঝে উঠতে পারছি না।”
ক্ষুদ্র চা চাষি সমিতি সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর উত্তরবঙ্গের ছোট-বড় বাগান থেকে প্রায় ৩১৫ মিলিয়ন কেজি পাতা উৎপাদন হয়েছিল। ৪০ শতাংশ এসেছে উত্তর দিনাজপুর, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং ও কোচবিহার জেলায় ছড়িয়ে থাকা প্রায় ৪০ হাজার ছোট বাগান থেকে। এ বার গত বছরের তুলনায় ৫০ শতাংশ চা পাতা উৎপাদন হয় কি না তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন গবেষক ও চাষিরা।
জলপাইগুড়ি ক্ষুদ্র চা চাষি সমিতির সভাপতি বিজয়গোপাল চক্রবর্তী এই প্রসঙ্গে জানান, “গত বছর এপ্রিল মাসে ছোট বাগানে প্রায় ১২ মিলিয়ন কেজি সবুজ চা পাতা উৎপাদন হয়েছে। এ বার পাতা মিলছে না। পরিস্থিতি এতই খারাপ যে সবুজ পাতার অভাবে ১১৩টি বটলিফ কারখানার মধ্যে অন্তত ৭০টি বন্ধ হয়েছে। কৃত্রিম সেচ এবং ওষুধের ব্যবস্থা করে এক কেজি পাতা উৎপাদন করতে ৩০ টাকারও বেশি খরচ হচ্ছে। বাজারে ২০ টাকা কেজির বেশি দাম মিলছে না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy