পরিচালন সমিতির নোটিস খাতা ছেঁড়ার অভিযোগে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছিলেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। ওই অভিযোগ প্রত্যাহারের দাবিতে শিক্ষকদের একাংশের ক্লাস বয়কট করে আন্দোলনের জেরে পঠনপাঠন ব্যাহত হল মালদহের চাঁচলের ঐতিহ্যবাহী সিদ্ধেশ্বরী ইনস্টিটিউশনে।
সোমবার স্কুলে রোলকল করার পর ওই শিক্ষকেরা ক্লাস বয়কট করে আন্দোলনে নামেন। টিফিন পর্যন্ত ক্লাস না হওয়ার পরে বাড়ি ফিরে যায় ছাত্রছাত্রীরা। জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) আশিস চৌধুরী বলেন, “ক্লাস বয়কট করে শিক্ষকরা ঠিক করেননি। পরিচালন সমিতির সঙ্গে বিবাদে শিক্ষকরা স্কুলে ক্লাস কেন করবেন না, এটা ঠিক নয়। দ্রুত যাতে সমস্যা মেটে তা দেখছি।”
শিক্ষকরা ক্লাস না করায় তাদের একদিনের বেতন কাটা হবে বলে পরিচালন সমিতি সিদ্ধান্ত নেওয়ায় দুপুরে ফের উত্তেজনা ছড়ায়। শিক্ষক ও পরিচালন সমিতির হইহট্টগোলে দুপুরে স্কুলেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন নোটিস খাতা ছেঁড়ায় অভিযুক্ত শিক্ষক দীপঙ্কর দাস। তাঁকে চাঁচল মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী ১৬ অগস্ট স্কুলের প্রতিষ্ঠা দিবসের পাশাপাশি ১২৫ বছর পূর্তি উৎসবের সমাপ্তি অনুষ্ঠান নিয়ে আলোচনার জন্য গত শনিবার স্কুলে পরিচালন সমিতির সভা হয়। কিন্তু সেই সভা ভণ্ডুল হয়ে যায়। শিক্ষকদের আগাম না জানিয়ে সভা ডাকা ছাড়াও উৎসবের খরচ নিয়ে অস্বচ্ছতার অভিযোগ তুলে স্কুলের এক শিক্ষক পরিচালন সমিতির সদস্যদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল দেন বলে অভিযোগ। পরিচালন সমিতির ক্ষুব্ধ সদস্যরা এরপর প্রধান শিক্ষকের ঘরে গিয়ে আলোচনায় বসেন। ৫ অগস্ট জরুরি সভা ডাকা হল বলে পরিচালন সমিতি সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর ৩ শিক্ষক প্রতিনিধি ফের প্রধান শিক্ষকের ঘরে এসে প্রতিবাদ জানানোয় তুমুল বচসা শুরু হয়। ওই সময় শিক্ষক প্রতিনিধি দীপঙ্কর দাস নোটিস খাতা ছিঁড়ে দেন বলে অভিযোগ।
গত ১০ জানুয়ারি স্কুলের ১২৫ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানের উদ্বোধনে চাঁচলে এসেছিলেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। তারপর শতবর্ষপ্রাচীন এই স্কুলে এ দিনের ঘটনার জেরে বাসিন্দাদের পাশাপাশি অভিভাবকদের মধ্যেও উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ প্রত্যাহার করা না হলে লাগাতার ক্লাস বয়কট চলবে বলে হুমকি দিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষকরা। তবে অভিযোগ প্রত্যাহারের প্রশ্ন নেই বলে পরিচালন সমিতির তরফে জানানো হয়েছে।
আন্দোলনকারী শিক্ষকদের অভিযোগ, শনিবার পরিচালন সমিতির সভায় আগাম না জানিয়ে কয়েকটি বিষয়ে আলোচনা করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় প্রতিবাদ জানান শিক্ষক প্রতিনিধিরা। সেখানে দু’পক্ষের কার্যত ধস্তাধস্তি বেধে যায়। তাঁরা জানান, ওই সময় নোটিস খাতা পড়ে গিয়ে ছিঁড়ে যায়। পরিচালন সমিতির সদস্যরা এরপর মোবাইলে ফোন করে বাইরের কিছু লোকজন ডেকে নিয়ে এসে শিক্ষকদের হুমকি দেওয়ান বলে অভিযোগ।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক আসরারুল হক বলেন, “পরিচালন সমিতির সিদ্ধান্ত মেনেই কাজ করেছি। ওঁরা অন্যায় করবেন আবার ক্লাস করবেন তা মানা যায় না।” পরিচালন সমিতির সম্পাদক দেবজ্যোতি দাস বলেন, “কয়েকজন শিক্ষক উৎসবের খরচ নিয়ে অস্বচ্ছতার অভিযোগ তোলায় সভা ডাকা হয়েছিল। কিন্তু সেখানে ওরা আমাদের অশালীন ভাষায় আক্রমণ করায় গোলমাল হয়।”
পরিচালন সমিতির শিক্ষক প্রতিনিধি প্রিয়জিত সরকার বলেন, “দীপঙ্করবাবুর বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছিলেন। এ দিন প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে আমরা আলোচনায় বসতে চাইলেও তিনি তাতে আমল না দিয়ে উল্টে কোনও আলোচনা হবে না বলে জানিয়ে দেন। প্রধান শিক্ষক শিক্ষকদের পাশে না দাঁড়িয়ে পরিচালন সমিতির কথামতো চলছেন। বাধ্য হয়েই আমাদের ক্লাস বয়কট করে আন্দোলনে নামতে হয়েছে।”