Advertisement
E-Paper

চাঁচলের ঠাকুরবাড়ির সংস্কার শুরু হল সাজাপ্রাপ্ত বন্দির হাত ধরেই

একটি খুনের মামলায় নিম্ন আদালতের রায়ে যাবজ্জীবন সাজা হয়েছে তাঁর। উচ্চ আদালতের নির্দেশে আপাতত জামিনে রয়েছেন তিনি। এমন এক সাজাপ্রাপ্ত ব্যবসায়ীর হাত ধরেই মালদহের চাঁচলে শতবর্ষ প্রাচীন ঠাকুরবাড়ির সংস্কারের কাজ শুরু হল।

বাপি মজুমদার

শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:২১
চলছে সংস্কার।—নিজস্ব চিত্র।

চলছে সংস্কার।—নিজস্ব চিত্র।

একটি খুনের মামলায় নিম্ন আদালতের রায়ে যাবজ্জীবন সাজা হয়েছে তাঁর। উচ্চ আদালতের নির্দেশে আপাতত জামিনে রয়েছেন তিনি। এমন এক সাজাপ্রাপ্ত ব্যবসায়ীর হাত ধরেই মালদহের চাঁচলে শতবর্ষ প্রাচীন ঠাকুরবাড়ির সংস্কারের কাজ শুরু হল। মালদহের শহরের বাসিন্দা ওই ওষুধ ব্যবসায়ীর নাম স্বপন শর্মা। ভগ্নপ্রায় ভবন বা মন্দির দেখলে তা নতুন করে সাজিয়ে তোলা তাঁর কাছে নেশার মতো। এবার প্রায় ১২ লক্ষ টাকা খরচ করে ঠাকুরবাড়ির সংস্কার শুরু করেছেন তিনি। জরাজীর্ণ ওই মন্দিরকে অধিগ্রহণ করে হেরিটেজ ঘোষণার দাবিতে মুখ্যমন্ত্রীকে এক সময় চিঠি দিয়েছিলেন বাসিন্দারা। মন্দির দেখভাল ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা চাঁচল রাজ ট্রাস্ট এস্টেট পরিচালন সমিতিও আর্থিক সমস্যার কথা জানিয়ে তা সংস্কারের জন্য প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। কোনও তরফেই সাড়া মেলেনি বলে অভিযোগ। তার পর বেহাল ঠাকুরবাড়ি সংস্কার করতে চেয়ে ট্রাস্ট এস্টেট পরিচালন সমিতির কাছে আবেদন জানান স্বপনবাবু। ট্রাস্টের অনুমতি মেলার পর কাজ শুরু করেছেন তিনি।

মালদহের জেলাশাসক শরদ কুমার দ্বিবেদী অবশ্য বলেছেন, “বিষয়টি আমার জানা নেই।” জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক এই প্রসঙ্গে বলেছেন, ওই ঠাকুরবাড়ি তো সরকারি সম্পত্তি নয়, ট্রাস্টের অধীন। ফলে ট্রাস্ট কাউকে অনুমতি দিলে সংস্কার করতে বাধা কোথায়? ওই আধিকারিক বলেন, কোনও মন্দির বা মসজিদ তো চাইলেই অধিগ্রহণ করা যায় না। আর্থিক সাহায্যের ক্ষেত্রেও তার কতটা গুরুত্ব রয়েছে তা খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

ব্যবসায়ী স্বপন শর্মা

যদিও হেরিটেজ হওয়ার মতো যথেষ্ট বিশেষত্ব ঠাকুরবাড়ির রয়েছে বলে বাসিন্দাদের দাবি। দাবি ট্রাস্টেরও। ১৮৮৮ সালে দেড় বিঘা জমিতে ন’লক্ষ টাকা খরচ করে ওই মন্দির তৈরি করেছিলেন চাঁচলের রাজা শরত্‌চন্দ্র রায়চৌধুরী। মন্দিরের স্থাপত্য আজও পর্যটকদের আকর্ষণ করে। হবে নাই বা কেন? ১২০ বছর আগে ওই মন্দিরের নকশা তৈরি করেছিল ইউরোপীয় মার্টিন বার্ন কোম্পানি। জানা যায়, মন্দির তৈরির জন্য সেগুন কাঠ এসেছিল মায়ানমার থেকে। ল্যাঙ্কশায়ার থেকে আনা হয়েছিল ইস্পাত। ফরাসি স্থাপত্য আর ভারতীয় ভাস্কর্যের মিশেলে তৈরি ওই মন্দিরের দেওয়াল ও স্তম্ভে থাকা মূল্যবান ধাতু কয়েক বছর আগে থেকে খসে পড়তে শুরু করে। বিপজ্জনক ছাদ থেকে খসে পড়তে থাকে চাঙর।

চাঁচল রাজ ট্রাস্ট এস্টেট পরিচালন সমিতির সম্পাদক তথা সিদ্ধেশ্বরী স্কুলের প্রধান শিক্ষক আসরারুল হক বলেন, “বেহাল ঠাকুরবাড়ি সংস্কারের সামর্থ্য ট্রাস্টের নেই। স্বপনবাবু নিঃশর্তে মন্দির সংস্কারের আবেদন জানানোর পরে তা কলকাতায় ট্রাস্ট বোর্ডকে জানানো হয়। অবিকৃতভাবে মন্দির সংস্কার করার শর্তে ট্রাস্ট অনুমতি দিয়েছে।”

ট্রাস্টের চাঁচলের পর্যবেক্ষক পিনাকীজয় ভট্টাচার্যও বলেন, “প্রশাসন সহ অনেকের কাছে আবেদন করা হলেও সাহায্য মেলেনি। তাই স্বপনবাবুর যে অতীতই থাকুক, তার হাত ধরেই ঠাকুরবাড়ির হারানো জেল্লা ফিরছে।” কে এই স্বপনবাবু? ১৯৯১ সালে মালদহ শহরে এক ব্যক্তি খুন হন। সেই মামলায় ২০১৩ সালে নিম্ন আদালত তাকে যাবজ্জীবন সাজা দেয়। এর পরে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার পর তাঁকে জামিন দেওয়া হয়। এর আগে বক্রেশ্বরেও ছোট ছোট বেশ কয়েকটি মন্দির তিনি সংস্কার করেছেন। তারাপীঠেও কয়েকটি মন্দির সংস্কার করেছেন। বাড়িতে স্ত্রী ও দুই ছেলে রয়েছেন। তাঁরাও স্বপনবাবুর কাজে বাধা দেন না। স্বপনবাবুর কথায়, “পুরনো মন্দির শুধু নয়। পুরনো বাড়ি দেখলেও মনে হয় তা সংস্কার করে দিই। এটা আমার নেশার মতো। ওষুধের পাইকারি বিক্রির ব্যবসা থেকে উপার্জনের অর্থ দিয়েই এইসব কাজ করি।”

chanchal rajbari renovation bapi majumdar convicted prisoner
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy