Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

চিবর দিয়ে গেলেন অরুণাচলের ২৪ জন

চৌ সিতং মিংলান, পিনখাপ চৌপু কিংবা ফাতিজে নাউ। অরুণাচল প্রদেশের এই বাসিন্দারা কেউই আগে বাংলায় আসেননি। তেমনই মালবাজারের তপন মুত্‌সুদ্দি বা রতন বড়ুয়ারাও কোনওদিন তাঁদের আশ্রমে পুরো দু’দিন অরুণাচলের আশ্রমিকদের সঙ্গে কাটাতে পারবেন, ভাবতে পারেননি। ডুয়ার্সের মালবাজার শহরের বৌদ্ধ সঙ্ঘাশ্রমের ‘কঠিন চিবর দান’ উত্‌সবে এত দিন দোকান থেকে কেনা গেরুয়া বসনই দান করা হত সঙ্ঘাশ্রমের সন্ন্যাসীদের।

‘কি হোক কাই’ যন্ত্রে বোনা হচ্ছে ভিক্ষুর বস্ত্র। ছবি: সব্যসাচী ঘোষ।

‘কি হোক কাই’ যন্ত্রে বোনা হচ্ছে ভিক্ষুর বস্ত্র। ছবি: সব্যসাচী ঘোষ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মালবাজার শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৪ ০১:৫৮
Share: Save:

চৌ সিতং মিংলান, পিনখাপ চৌপু কিংবা ফাতিজে নাউ। অরুণাচল প্রদেশের এই বাসিন্দারা কেউই আগে বাংলায় আসেননি। তেমনই মালবাজারের তপন মুত্‌সুদ্দি বা রতন বড়ুয়ারাও কোনওদিন তাঁদের আশ্রমে পুরো দু’দিন অরুণাচলের আশ্রমিকদের সঙ্গে কাটাতে পারবেন, ভাবতে পারেননি। ডুয়ার্সের মালবাজার শহরের বৌদ্ধ সঙ্ঘাশ্রমের ‘কঠিন চিবর দান’ উত্‌সবে এত দিন দোকান থেকে কেনা গেরুয়া বসনই দান করা হত সঙ্ঘাশ্রমের সন্ন্যাসীদের। কিন্তু এবার অরুণাচল প্রদেশের চিন সীমান্তের ২৪ জন বাসিন্দাকে মালবাজারের ওই সঙ্ঘাশ্রমে নিয়ে এসে তৈরি করা হয়েছে গেরুয়া বসন। ‘কি হোক কাই’ অনেকটাই তাঁত বোনার যন্ত্রের মতো দেখতে। সেই যন্ত্রে সুতো পরিয়ে টানা ২১ ঘণ্টা কাজ করে তৈরি করা হয়েছে চীবর।

গত সোমবার বিকেল ৪টে থেকে শুরু করে মঙ্গলবার বেলা ১টায় শেষ করা হয়েছে চিবর। নিয়ম অনুযায়ী, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই বস্ত্র তৈরি করতে হয়। তবে তার আগেই অরুণাচলের ওই বাসিন্দারা ওই চীবর তৈরি করে ফেলেন। ১৪জন মহিলা এবং ১০জন পুরুষ রয়েছেন ওই দলটিতে। তাঁরা অরুণাচল প্রদেশের চৌখাম এলাকার বাসিন্দা। সেখানে বৌদ্ধ মঠে চীবর দান অনুষ্ঠানে প্রতি বছর তাঁরাই বস্ত্র তৈরি করে সন্ন্যাসীদের দিতেন। চৌখাম জেলার বৌদ্ধ ভিক্ষু প্রজ্ঞাশীলের সঙ্গে বুদ্ধগয়ায় যোগাযোগ হয় মালবাজারের সুগত ভিক্ষুর। প্রজ্ঞাশীলের কাছ থেকেই এই নতুন নিয়মের কথা জানতে পারেন সুগত। তাঁর আমন্ত্রণেই মালবাজারে আসেন অরুণাচলের ওই বাসিন্দারা। নিয়ম অনুযায়ী, আশ্বিন পূর্ণিমার পর থেকে কার্তিক পূর্ণিমার মধ্যে যে কোনও দিন বৌদ্ধ ভিক্ষুদের চিবর দেওয়া যায়। সেই বস্ত্র পরেই এক বছর কাটাতে হয় তাঁদর।

মালবাজারের বৌদ্ধ সঙ্ঘাশ্রমের প্রধান ভিক্ষু ধর্মসেন মহাস্থবিরের জন্যেই অরুণাচলের আশ্রমিকেরা পাঁচটি ‘কি হোক কাই’ যন্ত্র দিয়ে তৈরি করেন বস্ত্র। রাতভর বস্ত্র তৈরির এই দৃশ্য দেখতে ভক্ত সমাগমও প্রচুর হয়। দেড় হাজারেরও বেশি ভক্তদের মালবাজারের মঠেই খাবারের আয়োজনও করা হয়েছে বলে জানালেন বৌদ্ধ সঙ্ঘাশ্রমের যুগ্ম সম্পাদক তপন মুত্‌সুদ্দি। আর যারা পুরো অনুষ্ঠানের কুশীলব সেই চৌ সিতং মিংলান, পিনখাপ চৌপুরা বললেন, ডুয়ার্সের আবহাওয়া অনেকটাই আমাদের সঙ্গে মেলে। এখানেও যে আমাদের মতই পাহাড়ি উপত্যকা দেখতে পাব, তা বুঝিনি। দু’দিন থেকে মনে হচ্ছে যেন বাড়িতেই রয়েছি।”

আজ, বুধবারই মালবাজার থেকে বুদ্ধগয়ার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন এঁরা। সেখানে কিছুদিন থেকে তারপর ফিরে যাবেন অরুণাচল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

arunachal malbajar chibar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE