আলোচনার ফাঁকে হালকা মেজাজে। নিজস্ব চিত্র।
অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা, শিক্ষা, পানীয় জলের সমস্যা সমাধানে চা বাগান মালিকদের চিঠি লেখার কথা জানিয়ে শ্রমিকদের মন জয়ের চেষ্টা করলেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক’ও ব্রায়েন। বৃহস্পতিবার সকালে শিলিগুড়ির উপকণ্ঠে লাগোয়া গুলমা চা বাগানে গিয়েছিলেন তিনি। চা শ্রমিকদের কাছে লোকসভা ভোটে দার্জিলিঙের লোকসভা কেন্দ্রে দলের প্রার্থী ভাইচুং ভুটিয়াকে ভোট দেওয়ার আবেদন করেন তিনি। যদিও, চা বাগানের সভা পুরোদস্তুর রাজনৈতিক মোড়কে হয়নি। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তরফে সকাল থেকেই বাগানের শ্রমিক রিক্রিয়েশন ক্লাবে আশেপাশের ২০টি চা বাগানের শ্রমিকদের জড়ো করা হয়েছিল। তাঁদের কাছে চা বাগানের সমস্যা শোনেন ডেরেক। শ্রমিকদের অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা, রেশনে নিম্নমানের চাল, আটা সরবারহ, পানীয় জল, স্কুলের সমস্যা নিয়ে তাঁকে অভিযোগ জানান শ্রমিকরা।
এ দিন সকাল ১১টা নাগাদ গুলমা বাগানে একাই গিয়েছিলেন ডেরেক। বাগানের শ্রমিক রিক্রেয়শন ক্লাবে ঢোকার সময়ে তাঁর হাতে জল ঢেলে, কপালে চন্দনের টিপ দিয়ে প্রথাগত কায়দায় বরণ করে নেন মহিলা চা শ্রমিকরা। রিক্রিয়েশন ক্লাব বলতে, কাঠের একটি দোচালা ঘর। দেওয়াল ভর্তি অসংখ্য ছিদ্র। দু’টি সিলিংফ্যানের একটি বিকল। মেঝে ধুলোমাখা। ডেরেককে বসার জন্য প্লাস্টিকের চেয়ার এগিয়ে দিলেও, ধবধবে সাদা কুর্তা-পাজামা পরে মেঝেয় বসে পড়েন ‘ক্যুইজ মাস্টার’ সাংসদ। প্রথমেই তার প্রশ্ন, “মমতাদিদিকে (মুখ্যমন্ত্রী) চেনেন তো?” সকলে সমস্বরে সম্মত জানানোর পরে, তিনি বলেন, “দিদি-ই আমাকে আপনাদের কাছে পাঠিয়েছেন। দিল্লি থেকে সোজা আপনাদের বাগানে চলে এসেছি। আপনাদের সমস্যার কথা বলুন, আমি শুনতে চাই।” শুরুতে অবশ্য চা শ্রমিকরা কিছুটা ইতস্তত করলে, ডেরেক নিজেই একটি করে সমস্যার কথা তোলেন। তার পরে একে একে অভিযোগ জানান শ্রমিকরা।
দার্জিলিং আসনে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার বিজেপিকে সমর্থন, বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি সুরিন্দর সিংহ অহলুওয়ালিয়ার প্রার্থী হওয়ায় এই কেন্দ্রটি ইতিমধ্যেই চর্চার বিষয়। সে কারণেই এই আসন ঘিরে তৃণমূল বাড়তি তত্পরতা নিয়েছে। সম্প্রতি রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম শিলিগুড়িতে এসে অবাঙালি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ঘরোয়া সভা করেছেন। একই কারণে অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রও আসবেন। এবার চা শ্রমিকদের মন জয়ের চেষ্টাতেই রাজ্যসভার সাংসদ চা বাগানের শ্রমিকদের সঙ্গে ঘরোয়া আলোচনা করছেন বলে দলীয় সূত্রের খবর।
বৃহস্পতিবার অবশ্য রাজ্যসভার সাংসদকে কাছে পেয়ে নিজেদের যাবতীয় সমস্যা তুলে ধরেন চা শ্রমিকরা। রীনা টপ্পো অভিযোগ করে বলেন, “স্যার, অসুস্থ কাউকে চা বাগানের বাইরে কোনও হাসপাতালে নিয়ে যেতে হলে, নিজেদের অ্যাম্বুল্যান্সের তেল জোগাড় করে দিতে হয়। টাকা জোগাড় করতে ধার দেনা করতে হয়।” পাশের একটি বাগানের বাসিন্দা মঞ্জু টোপ্পোর অভিযোগ, “বাগানের হাসপাতালে ভাল চিকিত্সকই নেই। কিছু করুন।” সীতা ছেত্রী, বীণা সামাধরা একসঙ্গে বলেন, “যে চাল আর আটা বাগান থেকে পাই, তা পোকায় ভরা।” এলাকার একটি কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রীর লুসিয়া কেরকাট্টা সাংসদকে জানান, “তফশিলি উপজাতি শংসাপত্র পেতে অনেক সময় লেগে যাচ্ছে। ভাতা পেতেও দেরি হচ্ছে, পড়াশোনায় সমস্যা হচ্ছে।”
সাংসদ বলেন, “আমি নিজে সাংসদ হিসেবে আপনাদের সব বাগানের মালিককে চিঠি লিখব। আপনারাও এলাকার প্রশাসনকে জানান। আমিও জানাব।” এক ঘণ্টার আলোচনার আগাগোড়া রসিকতা দিয়ে সহজেই চা শ্রমিকদের সঙ্গে মেশার চেষ্টা করেন তিনি। নিজের স্ত্রীর পরিচয় দিয়ে তাঁর মন্তব্য, “ও তো ছোটবেলা থেকে ডুয়ার্সের চা বাগানের পরিবেশে বেড়ে উঠেছে। এখন অবশ্য চা বাগানে থাকে না। তবে চা খুব ভাল বানায়।” সকলেই হেসে ওঠেন।
ক্লাব থেকে বেরিয়ে মঙ্গরা ওঁরাও এসে, অভিযোগ জানান, বাগান থেকে অনেক দূরে রেশন দোকান হওয়ায় দুর্ভোগে পড়তে হয়। গাড়িতে ওঠার আগে, ডেরেক বলেন, “নিশ্চই কর্তৃপক্ষকে জানাব। আপনারা ভোট দিয়ে রাজ্যে পরিবর্তন এনেছেন। এবার দিল্লিতে দিদির প্রার্থী ভাইচুংকে কাজ করার একবার সুযোগ দিন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy