চয়নিকা লাহা। —নিজস্ব চিত্র।
দক্ষিণ দিনাজপুরে তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল থানা পুলিশ পর্যন্ত গড়ালো। বালুরঘাট পুরসভার তৃণমূল চেয়ারপার্সন চয়নিকা লাহার স্বামীর মোবাইলে ফোন করে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠল এক তৃণমূল কর্মীর বিরূদ্ধে। থানার দ্বারস্থ হওয়ায় চয়নিকা দেবীর স্বামীর বিরুদ্ধে পাল্টা পোস্টার ছেঁড়া, ছিনতাই ও হুমকি দেওয়ার অভিযোগ দায়ের করেছেন পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলার ব্রতময় সরকার। সপ্তাহ ধরে এই টানাপড়েন চলার পর শনিবার দুপুরে বৈঠক করে চেয়ারপার্সনের বিরুদ্ধে দলেরই সংখ্যাগরিষ্ঠ কাউন্সিলার অনাস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিলেন। পুরসভার ক্ষমতাসীন ১৪ জন তৃণমূল কাউন্সিলারের মধ্যে ১৩ জন কাউন্সিলার লিখিতভাবে ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পরে সাংবাদিক বৈঠক করে পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান রাজেন শীল অভিযোগ করেন, “চেয়ারপার্সনের একক সিদ্ধান্ত ও অসহযোগিতায় পুরসভার কাজকর্ম ব্যাহত হয়ে পড়েছে। এতে দল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে সর্বসম্মতিক্রমে চেয়ারপার্সনের অপসারণ ও তার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পেশের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
এই ঘটনাকে ঘিরে তৃণমূলের জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্র ও রাজ্যের মন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তীর দুই শিবিরের দ্বন্দ্ব ফের প্রকাশ্যে এসে পড়ল। কারণ, দলকে না জানিয়ে কাউন্সিলারেরা ওই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন কি না, তা নিয়ে সরব হয়েছেন চেয়ারপার্সন চয়নিকা লাহা। তিনি বলেন, “দলীয় নেতৃত্বই চেয়ারম্যান এবং ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছেন। ফলে নেতৃত্বকে না জানিয়ে ওঁরা এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না।” চয়নিকাদেবীর পাল্টা অভিযোগ, দীর্ঘ এক বছর ধরে নানাভাবে দলীয় কাউন্সিলারদের একাংশ অসযোগিতা করে আসছেন। হেনস্থা করছেন তাঁকে। ওয়ার্ডে কাজের নমুনা দেখতে গেলে তাঁরা ক্ষেপে যাচ্ছেন। এমনকী দলের জেলা সভাপতি বিপ্লবদার (বিপ্লব মিত্র) বাড়িতে বিজয়া করতে গেলে ওঁরা শিবির বদলের অভিযোগ তুলে কুত্সা রটাচ্ছেন। ওঁদের ওই ধারাবাহিক অসহযোগিতার বিষয়ে বিপ্লবদাকে দেখতে বলেছি।”
২৫ আসনের বালুরঘাট পুরসভায় ক্ষমতাসীন তৃণমূলের ১৪ জন কাউন্সিলর রয়েছেন। দল সূত্রের খবর, মূলত বালুরঘাটের বিধায়ক তথা পূর্তমন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তীর সুপারিশেই পুরসভার চেয়ারপার্সন হিসাবে চয়নিকা লাহা মনোনীত হন। তার পর থেকে মন্ত্রী ঘনিষ্ঠ চয়নিকাদেবীর সঙ্গে নানা বিষয়ে দলের বিপ্লব মিত্র অনুগামী কাউন্সিলারদের মধ্যে বিরোধ শুরু হয় বলে অভিযোগ। সাম্প্রতিক কালে মন্ত্রীপুত্রকে পুরসভার আইনজীবী করা নিয়োগ নিয়ে চেয়ারপার্সনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন দলীয় কাউন্সিলররা। তাঁদের তীব্র বিরোধিতায় মন্ত্রীপুত্রকে আইনজীবী হিসেবে নিয়োগের সিদ্ধান্ত বদল করতে হয় চেয়ারপার্সনকে।
এই অবস্থায়, গত বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) রাত ১১টা নাগাদ চেয়ারপার্সনের স্বামীর মোবাইলে ফোন করে দুজনকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে অপরিচিতের ফোন আসে। শুক্রবার সকালে চয়নিকাদেবীর স্বামী শ্যামলবাবু বালুরঘাট থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ তদন্ত করে রাতে এক জনকে গ্রেফতার করে। পাড়ার তৃণমূল সমর্থককে ফাঁসানোর পাল্টা দাবি তুলে এর বিরুদ্ধে চেয়ারপার্সনের স্বামী ও এক তৃণমূল কর্মীর বিরুদ্ধে পাল্টা ছিনতাইয়ের অভিযোগ দায়ের করা হয় বলে অভিযোগ। দলের দুই গোষ্ঠীর ওই অন্তর্দ্বন্দ্বের জেরেই এদিন চেয়ারপার্সনের অপসারণ দাবি করে অনাস্থা প্রকাশের সিদ্ধান্ত বলে অভিমত বিরোধীদের।
এদিন নিজের বাড়িতে বসে চেয়ারপার্সন চয়নিকাদেবী বলেন, “আমি ওদের কথায় পদত্যাগ করব কেন? দল যা সিদ্ধান্ত নেবে আমি মেনে নেব।”
এ সম্পর্কে পুরসভার তৃণমূল দলনেতা তথা ভাইস চেয়ারম্যান রাজেনবাবু বলেন, “দলের কাউন্সিলারেরা মিলে ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দলের জেলা সভাপতিকে ওই সিদ্ধান্ত জানানো হবে।” তবে বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে তৃণমূল জেলা সভাপতি তথা আইন পরিষদীয় সচিব বিপ্লব মিত্র বলেন, “এমন খবর আমাকে কেউ জানাননি। আর কাউন্সিলরেরা ওই সিদ্ধান্ত নিয়ে ঠিক করেননি। কেননা দল থেকে তাঁরা নির্বাচিত হয়েছেন। ফলে চেয়ারম্যানের বিষয় নিয়ে দলই সিদ্ধান্ত নেবে।”
এদিন মন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তীকে একাধিকবার ফোন করে পাওয়া যায়নি। বিষয়টি নিয়ে বক্তব্য জানতে এসএমএস করেও মন্ত্রী উত্তর দেননি। তবে দলীয় সূত্রের খবর, ঘটনার কথা জেনে তিনি চয়নিকাদেবীকে চুপ করে শান্ত হয়ে থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন। জেলার সাংসদ অর্পিতা ঘোষকে ফোন ও এসএমএস করে প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy