Advertisement
E-Paper

ছ’টি ওয়ার্ডে জলকষ্ট শহরে

বাড়ি থেকে অন্তত ২ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে জল আনতে যেতে হয় জ্যোতিনগরের বাসিন্দা অধীর পালকে। একটি হার্ডওয়ারের দোকানের কর্মী অধীরবাবু প্রতিদিন সকালে সাইকেলের হ্যান্ডেলের দু’দিকে বাজারের ব্যাগে জ্যারিকেন ভরে পানীয় জল নিয়ে আসেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৪ ০২:০৪
সংযোজিত এলাকা থেকে জল নিতে হায়দরপাড়ায়। —নিজস্ব চিত্র।

সংযোজিত এলাকা থেকে জল নিতে হায়দরপাড়ায়। —নিজস্ব চিত্র।

বাড়ি থেকে অন্তত ২ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে জল আনতে যেতে হয় জ্যোতিনগরের বাসিন্দা অধীর পালকে। একটি হার্ডওয়ারের দোকানের কর্মী অধীরবাবু প্রতিদিন সকালে সাইকেলের হ্যান্ডেলের দু’দিকে বাজারের ব্যাগে জ্যারিকেন ভরে পানীয় জল নিয়ে আসেন। বিকেল বেলায় ফের কাজ ফেলে পানীয় জল পৌঁছে দিতে হয় তাঁকে।

গীতালপাড়ার দুলাল দে’র ২৫ বছর বয়সী ছেলে সম্প্রতি জন্ডিসে আক্রান্ত হয়েছেন। কুয়োর জল খাওয়ার ফলেই রোগ সংক্রমণ হয়েছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। বাড়ির আশেপাশে পানীয় জল পাওয়ার উপায় নেই, জল আনতে অন্তত আড়াই কিলোমিটার দূরে যেতে হয়।

অধীরবাবু ও দুলালবাবু দু’জনেই শিলিগুড়ির পুর এলাকার বাসিন্দা। দু’জনের বাড়িতেই পানীয় জলের লাইন রয়েছে। তবে সপ্তাহ দু’য়েক ধরে পানীয় জল সরবরাহ বন্ধ হয়ে রয়েছে বলে অভিযোগ। শিলিগুড়ি পুরসভার অন্তত ৬টি ওয়ার্ডে সপ্তাহখানেক ধরে জল সঙ্কট চলছে বলে অভিযোগ। কয়েকটি ওয়ার্ডে অবশ্য দু’মাস ধরেই পানীয় জল মিলছে না বলে অভিযোগ। জলসঙ্কটের জেরে অনেক বাসিন্দাই নলকূপ অথবা কুয়োর জল খেতে করতে বাধ্য হওয়ায় রোগও ছড়িয়ে পড়ছে পুরসভা এলাকায়। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ৩৯, ৪০, ৪১, ৪২ নম্বর সহ লাগোয়া ওয়ার্ডগুলিতে জল সরবরাহ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত। শিলিগুড়ির পুর কমিশনার সোনম ওয়াংদি ভূটিয়া বলেন, “নতুন পাম্প বিকল হয়ে যাওয়ায় সমস্যা হয়েছে। স্থানীয় কর্মীরা পাম্প সারানোর কাজ শুরু করতে পারেননি। সরবরাহকারী সংস্থার বিশেষজ্ঞেরা শহরে এসেছেন। দ্রুত পাম্প সারিয়ে জল সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।”

শিলিগুড়ি পুরসভার সংযোজিত ওয়ার্ডগুলিতে পানীয় জলের সমস্যা নতুন নয় বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। ওয়ার্ডগুলির জল সঙ্কট মেটাতে মাসখানেক আগে নতুন পাম্প বসায় পুর-কর্তৃপক্ষ। সেই পাম্প বিকল হয়ে যাওয়াতেই নতুন করে জল সঙ্কট শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ। ৪০ নম্বর ওয়ার্ডে সপ্তাহখানেক ধরে জল সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে রয়েছে বলে অভিযোগ। পাশের ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের অভিযোগ, অন্তত দু’মাস ধরে এলাকায় জল সরবরাহ হচ্ছে না। শাস্ত্রীনগর এলাকার বাসিন্দা রেখা শর্মা, স্বরূপা সাহারা বলেন, “বাড়িতে নলকূপ রয়েছে, সেই জল দিয়ে জামা কাপড় ধোয়া, স্নানের কাজ করলেও, খাওয়ার জন্য জল আনতে হচ্ছে দেড় কিলোমিটার দূরে হায়দারপাড়া থেকে। সেখানেও জলের লাইনে দাঁড়ানো নিয়ে প্রতিদিন ঝগড়াঝাটি হয়।”

জল সঙ্কট তীব্র আকার নিয়েছে ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে। এলাকার কাউন্সিলর দেবশঙ্কর সাহার কথায়, “সপ্তাহখানেক ধরেই ওয়ার্ডে জল সরবরাহ বন্ধ। বাসিন্দারা প্রতিনিয়ত ক্ষোভ জানাচ্ছেন। পুর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহ থেকেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।”

শাস্ত্রীনগর, গ্রিন পার্ক, ইসকন মন্দির রোড, জ্যোতিনগর, আসরফ নগর, গীতাল পাড়া সর্বত্রই পানীয় জল নিয়ে হাহাকার শুরু হয়েছে বাসিন্দাদের। এলাকার সব মোড়েই ট্যাপকল থাকলেও, দিনের কোনও সময়েই জল মিলছে না। হায়দারপাড়া, নেতাজি সরণী এলাকায় জল সরবরাহ হলেও, ট্যাপকলগুলি থেকে শীর্ণ ধারায় জল পড়ছে বলে অভিযোগ। সকালে একঘণ্টার বেশি জল পাওয়া যাওয়া না বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। গোটা এলাকার মধ্যে ভিন্নচিত্র হায়দারপাড়া প্রাথমিক স্কুলের সামনে। স্কুলের সামনে দু’টি কল দিয়ে দিনভর জল পড়ছে। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই কল দু’টি জল সরবরাহের মূল পাইপ লাইনের সঙ্গে সংযুত্ত বলে দিনের সব সময়েই জল পাওয়া যায়। আশেপাশের বাসিন্দারা পানীয় জলের জন্য এই দুই কলের সামনেই লাইন দিচ্ছে। লাইন যত দীর্ঘ হচ্ছে, ততই ঝগড়াঝাটি, বিবাদ চলছে বলে অভিযোগ। মঙ্গলবার বিকেলে জলের লাইনে হাতাহাতিও হয়েছে বলে অভিযোগ।

এলাকার ব্যবসায়ী সুনীল দত্ত বলেন, “সকাল থেকে শুরু হয় জলের লাইন। মধ্যরাত পর্যন্ত কলের সামনে বাসিন্দাদের ভিড় থাকে। কখনও লাইন রাস্তায় এসে যানজট পর্যন্ত হয়ে যায়।”

water crisis six wards siliguri
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy