Advertisement
E-Paper

ছোট্টু খুনে মূল অভিযুক্ত অধরা, ক্ষোভ

তক্ষক পাচারের মামলায় অভিযুক্ত দীপঙ্কর রায় ওরফে ছোট্টু খুনের পরে দুদিন কেটে গেলেও ফেরার মনকুমার রাই সহ ৪ জনকে পুলিশ ধরতে না-পারায় ভক্তিনগর এলাকায় ক্ষোভ দানা বাঁধছে। ছোট্টু খুনের প্রতিবাদে জাতীয় সড়ক অবরোধ ও অভিযুক্তের বাড়ি ও কার্যালয়ে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার ঘটনাতেও মঙ্গলবার পর্যন্ত দুষ্কৃতীদের কাউকে চিহ্নিত করতে পারেনি পুলিশ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:৫৪
শালুগাড়ার লিম্বুবস্তিতে পুলিশ পাহারা।

শালুগাড়ার লিম্বুবস্তিতে পুলিশ পাহারা।

তক্ষক পাচারের মামলায় অভিযুক্ত দীপঙ্কর রায় ওরফে ছোট্টু খুনের পরে দুদিন কেটে গেলেও ফেরার মনকুমার রাই সহ ৪ জনকে পুলিশ ধরতে না-পারায় ভক্তিনগর এলাকায় ক্ষোভ দানা বাঁধছে। ছোট্টু খুনের প্রতিবাদে জাতীয় সড়ক অবরোধ ও অভিযুক্তের বাড়ি ও কার্যালয়ে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার ঘটনাতেও মঙ্গলবার পর্যন্ত দুষ্কৃতীদের কাউকে চিহ্নিত করতে পারেনি পুলিশ। তা নিয়েও পুলিশের বিরুদ্ধে গড়িমসির অভিযোগ উঠেছে। ছোট্টু ও তাঁকে খুনে অভিযুক্ত মনকুমারের পরিবারও পুলিশের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ। ভক্তিনগর থানা ও কমিশনারেটের পুলিশের একাংশ ওই দুষ্কৃতীদের সঙ্গে লেনদেনে যুক্ত বলে অভিযোগের বিভাগীয় তদন্তও শুরু করেছে পুলিশ। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার জগমোহন বলেন, “ধৃতদের জেরা করা হচ্ছে। দ্রুত অপরাধীদের গ্রেফতার করা হবে।” সোমবার গাড়ি সিন্ডিকেটের অফিস পুড়িয়ে দেওয়ার পরে এদিন সিকিমের গাড়ি স্ট্যান্ডে শিলিগুড়ির কোনও গাড়ি না চললেও সিকিমের কিছু গাড়ি চলেছে। তবে সিন্ডিকেট না থাকায় গাড়িতে লাভের সবটাই চালকদের পকেটে ঢুকবে বলে খুশি গাড়ি চালকেরা।

পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার পরে এদিন সকাল থেকে ধৃতদের জেরা শুরু করেছে শিলিগুড়ি পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। সিআইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁরাও বিষয়টি নিয়ে আলাদা করে তদন্ত করছে। রক্তমাখা জামাকাপড় উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের সন্দেহ, অভিযুক্তেরা কাছাকাছি কোথাও গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে। এসিপি (ডিডি) তপনআলো মিত্র বলেন, “ধৃতদের কাছ থেকে বেশ কিছু সূত্র পাওয়া গিয়েছে। তবে তা তদন্তের স্বার্থে গোপন রাখা হচ্ছে।” পুলিশের যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ হয়েছে, তা গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।

সোমবারের ঘটনায় পুলিশ অবশ্য জাতীয় সড়ক অবরোধ ও আগুন লাগানোর মামলা করলেও তাতে কাউকে চিহ্নিত করতে পারেননি। তবে সরকারপাড়ার বাসিন্দা প্রকাশ ভাণ্ডারি নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে তাঁদের বাড়িতে আগুন লাগানোর অভিযোগ দায়ের করেছেন মনকুমারের স্ত্রী সুনীতাদেবী। পুরোনো শত্রুতার জেরেই তাঁদের বাড়িতে আগুন লাগানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। ঘর পুড়ে যাওয়ার পর থেকে তিনি বাইরে সারা দিন কাটাচ্ছেন। রাতে পাশের ধনমায়া মাঝির বাড়িতে আশ্রয় মিললেও পাশের বাড়ির বেড়ায় আধপোড়া ও অল্প কিছু জামা কাপড় নিয়ে বাইরেই রয়েছেন তিনি। কেউ তাঁকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেননি বলে জানান তিনি।

এলাকার প্রাক্তন কাউন্সিলর সিপিএমের দিলীপ সিংহ তাঁদের ঘর পরিষ্কার করে থাকার মতো ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে বলে জানান। সুনীতাদেবী বলেন, “ঘর পুড়িয়ে দেওয়ার পরেও অভিযুক্তকে ধরছে না পুলিশ। আমার স্বামী কী করেছে, আমি জানি না। কিন্তু সবার সামনে যে ঘটনা ঘটল, তাদের ধরতে পুলিশের গড়িমসি কেন?” অভিযুক্তরা সরকারি দলের সমর্থক বলে কী এই টালবাহানা? অন্য দিকে, পুলিশের প্রতি গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন নিহত দীপঙ্করের দাদা দেবাশিসও। তিনিও অভিযোগ করেন, “এত বড় ঘটনার পরেও পুলিশের ভূমিকা ঠিক নয়। পুলিশ সবই জানত। আর একটু সক্রিয় হলে ভাইকে বাঁচানোও যেত।” থানার সামনে থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে খুনের ঘটনা মানতে পারছেন না পাড়ার লোকজনও। এদিনও ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের একাংশ থানায় গিয়ে খুনের ঘটনায় অধরা গৌতম তামাঙ্গ, অমিত থাপা, বিহারি রাজু, মিঠুন রাই এবং মনকুমারকে গ্রেফতারের দাবি জানান। এঁরা সকলেই তৃণমূলের কর্মী সমর্থক বলে জানা গিয়েছে।

সিন্ডিকেটের সবাই পালিয়ে যাওয়ায় এবং কার্যালয়টি তৃণমূলকর্মী সমর্থকদের হাতে পুড়ে যাওয়ায় এলাকা ছিল সুনসান। এদিন সকাল থেকে শালুগাড়া মোড় ট্যাক্সি স্ট্যান্ড থেকে সিকিমগামী গাড়ির সংখ্যা অনেক কম ছিল। শিলিগুড়ির কোনও গাড়ি সিকিমে যায়নি। সিকিমের কিছু গাড়ি যাত্রী নিয়ে এসেছিল। ফেরার পথে তাঁরা এদিকের কিছু যাত্রী নিয়ে গিয়েছেন। তা অবশ্য প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। যাত্রীদের লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। তবে ‘সিন্ডিকেট’ অফিস না-থাকায় স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন গাড়ি চালকদের অনেকেই। এক চালকের দাবি, “মনকুমারদের দাপটে প্রতিটি গাড়ির মালিককে রোজ দু’শো টাকা করে দিতে হত। যতদিন ‘সিন্ডিকেট’ বন্ধ থাকে তত দিন এই টাকা দিতে হবে না।”

রবিবার রাতে ভক্তিনগর থানার সামনে থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে খুন করা হয় শিলিগুড়িরই সরকার পাড়ার বাসিন্দা ছোট্টুকে। ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ উদ্ধার হয় লিম্বুবস্তি লাগোয়া মহানন্দা নদীর ধার থেকে। উত্তাল হয়ে ওঠে এলাকা। পুলিশের সামনে তাণ্ডব চালায় তৃণমূলের একটি গোষ্ঠী। ভক্তিনগর থানার সামনে জাতীয় সড়ক অবরোধ করে আগুন লাগিয়ে দেয় তৃণমূল সমর্থকরা। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় মনকুমারের নিয়ন্ত্রণাধীন সিন্ডিকেট অফিস, তাঁর বাড়িও। পুলিশ তিনজন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করলেও সন্ধ্যা পর্যন্ত উত্তেজনা ছিল।

ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

dipankar roy murder siliguri
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy