Advertisement
E-Paper

জাতিগত সংরক্ষণের ‘ঐচ্ছিক’ ফর্ম জমা বন্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ে

ছাত্র আন্দোলনের জেরে জাতিগত সংরক্ষণের ‘ঐচ্ছিক’ ফর্ম জমা নেওয়া বন্ধ রাখল উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়। এ দিন শুক্রবার ওই ফর্ম জমা নেওয়ার শেষ দিন ছিল। এ দিন সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে সামাজিক ন্যায় বিচার মঞ্চ নামে একটি সংগঠন প্রথম বর্ষের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে আন্দোলন শুরু করে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৪ ০২:৩৪
শিলিগুড়িতে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত ছাত্রেরা। বৃহস্পতিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

শিলিগুড়িতে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত ছাত্রেরা। বৃহস্পতিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

ছাত্র আন্দোলনের জেরে জাতিগত সংরক্ষণের ‘ঐচ্ছিক’ ফর্ম জমা নেওয়া বন্ধ রাখল উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়। এ দিন শুক্রবার ওই ফর্ম জমা নেওয়ার শেষ দিন ছিল। এ দিন সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে সামাজিক ন্যায় বিচার মঞ্চ নামে একটি সংগঠন প্রথম বর্ষের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে আন্দোলন শুরু করে। ফর্ম জমা নেওয়ার ঘরের সামনে আন্দোলনের জেরে গোটা প্রক্রিয়াটাই ভেস্তে যায়। পরে অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয় ঐচ্ছিক ফর্ম জমা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। ইতিমধ্যে জমা নেওয়া ফর্ম বাতিল বলে গণ্য করার কথাও জানিয়ে, ভর্তির সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি দল ছাত্র ছাত্রীদের বিষয়টি ভাল ভাবে বুঝিয়ে, সকলের পছন্দ জেনে নেবেন বলে ঘোষণা করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি বছর থেকে রাজ্য সরকারের নির্দেশের জেরে ঐচ্ছিক ফর্ম জমা নেওয়ার ব্যবস্থা চালু হয়েছে। তফশিলি জাতি, উপজাতি এবং অনগ্রসর সম্প্রদায়ের ছাত্র-ছাত্রীদের ওই ফর্মে জানাতে হয়, যে তাঁরা জাতিগত সংরক্ষণ নিতে চান না কি সাধারণ পড়ুয়া হিসেবে নম্বরের ভিত্তিতে ভর্তি হতে চান। সামাজিক ন্যায় বিচার মঞ্চের অভিযোগ, এই ব্যবস্থা চালু হওয়ার ফলে, যে সব তফশিলি এবং অনগ্রসর সম্প্রদায়ের পড়ুয়ারা নম্বরের ভিত্তিতেই ভর্তির সুযোগ পেতে পারতেন, তারাও জাতিগত সংরক্ষণ চেয়ে আবেদন করছেন। সাধারণ ‘ক্যাটাগরিতে’ ভর্তি হলে তাঁরা তফশিলি পড়ুয়াদের জন্য নির্দিষ্ট ভাতা পাবেন না বলে আশঙ্কার জেরেই এই প্রবণতা তৈরি হয়েছে বলে মঞ্চের অভিযোগ। এর ফলে যে সব তফশিলি এবং অনগ্রসর পড়ুয়া কম নম্বর পেয়েছেন, তাঁরা সংরক্ষিত ‘ক্যাটাগরিতে’ ভর্তির সুযোগ পাবেন না বলে অভিযোগ দেখিয়ে এ দিন সকাল থেকে বিক্ষোভ শুরু করেন মঞ্চের সদস্যরা। এই মঞ্চকে অরাজনৈতিক মঞ্চ হিসেবে দাবি করা হলেও, অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্টস অ্যসোসিয়েশন তথা আইসার নেতাদের এ দিনের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে দেখা যায়।

সাধারণ বিভাগে ভর্তি হলেও যে তফশিলি এবং অনগ্রসর পড়ুয়ারা ভাতা পাবেন, সে বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আশ্বাস দিতে হবে বলে দাবি জানান তাঁরা। আন্দোলনের জেরে ফর্ম জমা নেওয়া বন্ধ রেখে, সাধারণ এবং সংরক্ষিত যে কোনও ‘ক্যাটাগরিতে’ই ভর্তি হওয়া পড়ুয়ারা ভাতা পাবেন বলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সোমনাথ ঘোষ বলেন, “সমস্যা মিটে গিয়েছে। প্রথমে পছন্দ জানতে না চেয়ে ভর্তির সময়ে জেনে নেওয়া হবে। সরকারি নির্দেশ মেনেই ব্যবস্থা হচ্ছে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর বিভাগের ফ্যাকাল্টি কাউন্সিলের সচিব অভিজিৎ দেব বলেন, “নির্দেশ মেনেই জাতিগত সংরক্ষণের পছন্দের ঐচ্ছিক ফর্ম জমা নেওয়া শুরু হয়েছিল। ছাত্র-ছাত্রীদের দাবি মেনে সেই ফর্ম জমা নেওয়া বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে ভর্তির সময়ে পড়ুয়াদের কাছে বিষয়টি ব্যাখ্যা করে, তাঁদের পছন্দ জেনে নেওয়া হবে।”

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানানো হয়েছে, এ দিন ২০ জন শিক্ষকের একটি দল তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। ওই দলের ৭৫ শতাংশ শিক্ষকরা তফশিলি এবং অনগ্রসর সম্প্রদায়ভুক্ত হবেন। তাঁরাই ভর্তির সময়ে জাতিগত সংরক্ষণের আওতাভুক্ত পড়ুয়া, যাঁরা নম্বরের ভিত্তিতে ভর্তির সুযোগ পেতে পারেন তাঁদের ‘কাউন্সেলিং’ করবেন। সাধারণ ‘ক্যাটাগরিতে’ ভর্তি হলেও ভাতা পেতে বাধা নেই বলে তাঁদের বোঝানো হবে। তারপরেও কেউ যদি সাধারণ বিভাগের পরিবর্তে সংরক্ষিত ‘ক্যাটাগরি’তে ভর্তি হতে চান, তাহলে সেই সুযোগও মিলবে বলে জানানো হয়েছে।

এই সিদ্ধান্তে রাজ্য সরকারের নির্দেশিকার বিরুদ্ধাচরণ করা হল না বলেও জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ ক্ষেত্রে ভর্তির আগে ছাত্র-ছাত্রীদের পছন্দ না জেনে, ভর্তির সময়ে জানা হবে। স্নাতকোত্তর বিভিন্ন পাঠক্রমে ভর্তির জন্য গত ৮ অগস্ট ফর্ম জমা নেওয়ার শেষ দিন ছিল। গত ২০ অগস্ট খসড়া মেধা তালিকা প্রকাশ হয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, আগামী ২৬ অগস্ট চূড়ান্ত মেধা তালিকা প্রকাশ হওয়ার পরে ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হবে। এ দিন আন্দোলনকারী মঞ্চের সদস্য প্রদীপন গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পড়ুয়াদের কাছে বিষয়টি প্রথমে ব্যাখ্যা করে দেননি। তাই অনেকেই ভুল বুঝে নম্বর থাকা সত্ত্বেও সংরক্ষণের আওতায় ভর্তি হতে চেয়েছিলেন। তার ফলে সংরক্ষণ যাদের কাছে প্রয়োজনীয় তাঁরাই বঞ্চিত হতেন।” প্রদীপনের দাবি, মঞ্চের আন্দোলনের জেরে সেই সমস্যা মিটেছে।

student movement caste basis reservation form admission
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy