মালদহের কালুয়াদিঘির কাছে দুর্ঘটনাগ্রস্ত বাস।
জাতীয় সড়কে কাজ হচ্ছে। তাই বাধ্য হয়েই মালদহ থেকে চাঁচলগামী একটি বেসরকারি বাস রাস্তার ডান দিকের লেন ধরে এগোচ্ছিল। বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে তিনটে নাগাদ মালদহ থানার কালুয়াদিঘির কাছে উল্টো দিক থেকে একটি বড় ট্রাক এসে সেই বাসে ধাক্কা দিলে মোট ৮ জন মারা গিয়েছেন। জখম হয়েছেন ২৪ জন। জখমদের মধ্যে ১৮ জন মালদহ জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বাকিরা বেসরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রে ভর্তি রয়েছেন। রাজ্য সরকার জানিয়েছে, নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে ওই দুর্ঘটনায় মৃতদের পরিবারকে ২ লাখ টাকা করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। গুরুতর জখমদের দেওয়া হবে ১ লাখ টাকা করে। অন্য আহতেরা পাবেন ৫০ হাজার টাকা করে। পুলিশ জানায়, দুর্ঘটনায় নিহতদের নাম চাঁচলের জালালপুর গ্রামের বাসিন্দা আনারুল হক (১১), চাঁচলের ভগবানপুর গ্রামের বাসিন্দা কৌশিক বর্মন (১৫), মুড়িকুণ্ডের বাসিন্দা মেসের আলি (৫০), চাঁচলের কানোয়ার বাসিন্দা মহম্মদ ফারুক (২৭), কালিয়াচকের আলিপুর গ্রামের সাকানুর বিবি (৩৫) ও তাঁর মেয়ে নাজিয়া খাতুন (১২)। মৃতদের মধ্যে দু’জনের পরিচয় রাত পর্যন্ত জানা যায়নি। বেশ কয়েকদিন ধরেই ওই সড়কের এক দিকের লেন বন্ধ করে কাজ হচ্ছে। অন্য লেনটি দিয়েই তাই দু’পাশের গাড়ি যাতায়াত করছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেসরকারি বাসটি ভিড়ে ভর্তি ছিল। তবে বাসটি সাবধানে রাস্তার ধার ঘেঁষেই যাচ্ছিল বলে দাবি। হঠাৎই উল্টো দিক থেকে দশ চাকার বড় একটি ট্রাক এসে পড়ে। বাসের ডান দিকটি প্রায় পুরো ভেঙে ঢুকে যায় ট্রাকটি। তারপরে ট্রাকটি উল্টে যায়। ট্রাকের চালক পলাতক। মালদহের পুলিশ সুপার রাজেশ যাদব বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, বাসের ডানদিকের চাকাটি ফেটে গিয়েছিল। তার উপরে বাস ও ট্রাকটি একই লেনে থাকায় দুর্ঘটনা ঘটেছে। ট্রাকের চালক ও খালাসিকে ধরতে পুলিশ তল্লাশি শুরু করেছে।” মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি বাসের চালক রঞ্জিত শীল অবশ্য দাবি করেছেন, তাঁর বাসের চাকা ফাটেনি। তিনি বলেন, “আমার বাস ঠিকই ছিল। জাতীয় সড়কের ডান দিকের লেনের বাঁ দিক ঘেঁষে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ দেখি ওই একই লেন দিয়ে উল্টো দিক থেকে একটি ট্রাক মাথা কাঁপতে কাঁপতে এসে সোজা বাসে ধাক্কা মারে। আমি ট্রাকের হাত থেকে বাসের যাত্রীদের বাঁচাতে বাসটি ডিভাইডারের উপরে তুলে দিই। কিন্তু তাতেও বাঁচাতে পারিনি।” ঘটনাস্থলে মারা যান ৫ জন। ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে হাসপাতালে।
মালদহে জাতীয় সড়কের
দুর্ঘটনাস্থলে চলছে উদ্ধারকাজ।
দুর্ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার
করা হয়েছে এক মহিলাকে।
বুধবার রাতে বৈষ্ণবনগর থানার ১৭ মাইলে জাতীয় সড়কের উপরে একটি ছোট গাড়ির সঙ্গে ট্রাকের ধাক্কায় মারা যান মিনু মন্ডল (৩৫), জুলি মন্ডল (১৪), সব্যসাচী মন্ডল (১১) নামে তিন জন। তাঁদের বাড়ি বৈষ্ণবনগরেই।
কিছু দিন আগে পুরাতন মালদহে ধূমাদিঘির কাছে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে একটি ছোট গাড়ির সঙ্গে ট্রাকের সর্ংঘষে ১৬ জন বরযাত্রীর মৃত্যু হয়। ফের দু’দিনে ১১ জনের মৃত্যু হওয়ায় উদ্বিগ্ন জেলা প্রশাসন। জেলাশাসক শরদ দ্বিবেদী বলেন, “চার লেনের জাতীয় সড়কের কাজের সময় দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। এটা খুবই উদ্বেগজনক। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ দুর্ঘটনা যাতে না হয়, সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছেন কি না জানতে চেয়ে শুক্রবার জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিদের ডেকে পাঠানো হয়েছে। জাতীয় সড়কে দুর্ঘটনা রুখতে রাস্তার কোথায় কাজ চলছে, সেখানে গাড়ি কিভাবে কোনদিকে যেতে হবে, তা বড় বড় করে রাস্তায় টাঙানোর জন্য জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে বলা হবে।”
ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy