Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

জল নেমে রোদ উঠতেই বইখাতা শুকোল পড়ুয়ারা

রোদ উঠতে বই খাতা বিছিয়ে দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল রাখি সাহানা। রাস্তার ধারে ঘাসের উপরে অঙ্ক খাতা মেলে দিয়েছে দ্বিতীয় শ্রেণির পড়ুয়া নীরজ, টুটুল। খাতার লেখা জলে মুছে গিয়েছে দেখে ওদের আশঙ্কা, পরদিন থেকে স্কুলে বকুনি না খেতে হয়।

পড়তে হবে। বইখাতা শুকোতে দিয়েছে দুই খুদে। জলপাইগুড়ির পরেশ মিত্র কলোনিতে বুধবার ছবিটি তুলেছেন সন্দীপ পাল।

পড়তে হবে। বইখাতা শুকোতে দিয়েছে দুই খুদে। জলপাইগুড়ির পরেশ মিত্র কলোনিতে বুধবার ছবিটি তুলেছেন সন্দীপ পাল।

বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৪ ০২:২৪
Share: Save:

রোদ উঠতে বই খাতা বিছিয়ে দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল রাখি সাহানা। রাস্তার ধারে ঘাসের উপরে অঙ্ক খাতা মেলে দিয়েছে দ্বিতীয় শ্রেণির পড়ুয়া নীরজ, টুটুল। খাতার লেখা জলে মুছে গিয়েছে দেখে ওদের আশঙ্কা, পরদিন থেকে স্কুলে বকুনি না খেতে হয়।

সোমবার রাত থেকে করলা নদীর জলে ভেসেছে জলপাইগুড়ি শহরের ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিস্তীর্ণ এলাকায় ফি বছরই বৃষ্টির সময় করলার জলে বন্দি হয়ে যায় ওয়ার্ডের বেশিরভাগ এলাকা। মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে ফের বৃষ্টি না হওয়ায় পরেশ মিত্র কলোনির বাসিন্দারা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেও, বুধবারও সবাই ঘরে ফিরতে পারেননি। এ দিন দুপুরেও হাঁটু সমান জল দাঁড়িয়ে ছিল এলাকায়। এলাকার পড়ুয়াদের বই খাতা ছাড়াও জলে ভিজে নষ্ট হয়েছে বাসিন্দাদের বিছানা, ভেসে গিয়েছে অনেকের বাসনপত্রও। যেখানে জল নেই, সেখানে গোড়ালি ডোবা প্যাচপেচে কাদা। বুধবার রোদ ওঠার পরে নদীর জলে ভেসে আসা নোংরা জমে দুর্গন্ধ ছড়িয়েছে বলে অভিযোগ। ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলার পরিমল মালোদাস বলেন, “কিছু জায়গায় এখনও জল দাঁড়িয়ে আছে। কাদায় ভরে গিয়েছে গোটা এলাকা। কিছু মানুষ এখনও উঁচু রাস্তায় অস্থায়ী শিবির করে আছেন। এলাকায় ব্লিচিং ছড়ানো হচ্ছে।”

মঙ্গলবার দুপুর থেকে এলাকায় খিচুড়ি বিলি হয়েছে। রূপা দাস, শ্যামলী সরকার, মনোজ সরকারের মতো বাসিন্দাদের খাটের পায়া জলে ডুবে ছিল। রান্না ঘরের উনুন জলের তোড়ে ভেঙে গিয়েছে। কংগ্রেস ও তৃণমূলের বিলি করা খিচুড়ি খেয়ে মঙ্গলবার দিনভর কাটাতে হয়েছে তাঁদের। বৃষ্টির আশঙ্কায় মঙ্গলবার রাতেও অনেক বাসিন্দাই দু’চোখের পাতা এক করতে পারেননি বলে জানিয়েছেন। এ দিন দুপুরেও বিপুল সাহা, মনোরমা দাসেরা বললেন, “রাত ভর বৃষ্টির আশঙ্কায় কেটেছে। আরও বৃষ্টি হলে বাড়ি ঘরের যতটুকু ঠিকঠিকা ছিল সেগুলিও ভেসে যেত।” মনোরমা বলেন, “রাতে বাবা মায়ের সঙ্গে রাস্তার ধারে দোকানে আশ্রয় নিয়েছিলাম। ভয়ে ঘুমাতে পারিনি। ভোরে উঠে দেখি জল নেই।”

জল নেমে যাওয়ায় বুধবার এলাকায় খিচুড়ি বিলি হয়নি। তবে এদিনও তৃণমূলের তরফে চিড়ে গুড় বিলি করা হয়। এদিকে মহামায়াপাড়া, কংগ্রেসপাড়া, পানপাড়া, অরবিন্দ নগর, ইন্দিরা কলোনি, নিউ টাউন, নেতাজি পাড়া, আনন্দপাড়া, নিউ সার্কুলার রোডের মতো জলমগ্ন এলাকা মঙ্গলবার বিকেলের পর থেকে স্বাভাবিক হতে শুরু করে। এ দিন নতুন করে বৃষ্টি না হওয়ায় নতুন করে আর এলাকায় জল জমেনি। বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, প্রতি বছর অল্প বৃষ্টিতেই এলাকা জলবন্দি হয়। প্রতিবারই আশ্বাস মিললেও কোনও পদক্ষেপ হয় না। পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পঞ্চাশ বছরের সমস্যা তড়িঘড়ি মেটানো অসম্ভব। বিক্ষিপ্তভাবে কাজ করে ওই সমস্যা মিটবে না। পুরসভার পক্ষ থেকে রাজ্য সরকারের মাধ্যমে ১৩৫ কোটি টাকার যে নিকাশি প্রকল্প কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন মিললে নিকাশি সমস্যার পাকাপাকি সমাধান হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

flood biswojyoti bhattacharya jalpaiguri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE