Advertisement
০২ মে ২০২৪

টাকার বিনিময়ে ধর্ষণের মামলা মিটিয়ে নিতে চাপের অভিযোগ

চাকরির টোপ দিয়ে এক তরুণীকে দিনের পর দিন সহবাসে বাধ্য করানোর অভিযোগ উঠেছিল কোচবিহারের তৃণমূল নেতা সহিদুল আলম তথা কমল প্রধানের বিরুদ্ধে। সেই তরুণীর অভিযোগে সহিদুল গ্রেফতারও হয়েছেন। এ বার অভিযোগ উঠেছে, ১০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে মামলাটি আদালতের বাইরে মিটিয়ে নেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে ওই তরুণীকে।

কিশোর সাহা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০১৪ ০২:৩১
Share: Save:

চাকরির টোপ দিয়ে এক তরুণীকে দিনের পর দিন সহবাসে বাধ্য করানোর অভিযোগ উঠেছিল কোচবিহারের তৃণমূল নেতা সহিদুল আলম তথা কমল প্রধানের বিরুদ্ধে। সেই তরুণীর অভিযোগে সহিদুল গ্রেফতারও হয়েছেন। এ বার অভিযোগ উঠেছে, ১০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে মামলাটি আদালতের বাইরে মিটিয়ে নেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে ওই তরুণীকে।

দার্জিলিং জেলার ডিস্ট্রিক্ট লিগাল এড সার্ভিস অথরিটির মুখপাত্র (ডিডিএলএসএ) অমিত সরকার বলেন, “ছাত্রী ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে কথা বলে আমরা জেনেছি, ১০ লক্ষ টাকা নিয়ে মামলা মেটানোর জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে।” তিনি জানান, সমস্ত কিছু লিখিত ভাবে কোচবিহার ডিস্ট্রিক্ট লিগাল এড সার্ভিস অথরিটি (সিডিএলএসএ)-কে জানানো হয়েছে। হলদিবাড়ি পুলিশের মাধ্যমে ওই অভিযোগ নথিভুক্ত করিয়ে ন্যাশনাল লিগাল এড সার্ভিস অথরিটি ও রাজ্য ও জাতীয় মহিলা কমিশনে পাঠানো হবে। ডিডিএলএসএ প্রতিনিধিদের কাছ থেকে ওই অভিযোগ জেনেছেন কোচবিহারের জেলা ও দায়রা জজ রবীন্দ্রনাথ সামন্তও। তিনি পদাধিকার বলে সিডিএলএসএ-র চেয়ারম্যান। ছাত্রীর পরিবার যাতে আইনি সহায়তা পায় তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। কোচবিহারের পুলিশ সুপার রাজেশ যাদব জানান, অভিযোগ পেলে পুলিশ কড়া পদক্ষেপ করবে।

গত ১৭ অক্টোবর সহিদুলের বিরুদ্ধে হলদিবাড়ি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ওই তরুণী। তাঁর অভিযোগ, কলেজের পরিচালন সমিতির সদস্য তথা তৃণমূলের হলদিবাড়ির প্রাক্তন ব্লক সম্পাদক সহিদুল তাঁকে চতুর্থ শ্রেণির পদে চাকরির টোপ দিয়ে একাধিকবার সহবাসে বাধ্য করেন। তরুণীর দাবি, “ওই নেতা আমাকে ফের বাড়িতে ডাকলে কী ভাবে ফুঁসলে ধর্ষণ করেছেন, সেই দৃশ্য মোবাইলে ভিডিও রেকর্ড করে তা পুলিশকে জমা দিয়েছি।” তারপরে গ্রেফতার হন সহিদুল। এখনও তিনিজামিন পাননি। গত শনিবারও মেখলিগঞ্জ আদালতে তাঁকে হাজির করানো হয়। কিন্তু জামিনের আর্জি কেউ জানাননি। ২৯ নভেম্বর ফের মামলার শুনানি রয়েছে।

কিন্তু ওই তরুণীর বাবার দুশ্চিন্তা কাটছে না। কারণ, সামান্য জমির উপরেই নির্ভর করে চলে তাঁর ৫ ছেলেমেয়ের সংসার। তৃণমূল নেতার একান্ত ঘনিষ্ঠ অনুগামীদের একাংশ তাঁর উপরে চাপ দিয়ে চলেছেন। কিন্তু ওই তরুণী ও তাঁর বাবা-মা কী ভাবে, কোথায় অভিযোগ করবেন সেটা ভেবে পাচ্ছেন না।

তবে অভিযুক্তের স্ত্রী রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগে কর্মরতা। তাঁর বক্তব্য, “আমরা নিজেরাই মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত। দুই মেয়েকে নিয়ে কী ভাবে দিন কাটছে তা বুঝিয়ে বলতে পারব না। ওই তরুণীকে চাপ দিতে যাব কখন? কে বা কারা চাপ দিচ্ছে, তা ওঁরা পুলিশের কাছে লিখিত ভাবে জানান। আমরাও চাই তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।”

সহিদুলকে তৃণমূল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে জেলা তৃণমূল নেতারা জানান। তবে সহিদুল হলদিবাড়িতে তৃণমূল বিধায়ক অর্ঘ্য রায়প্রধানের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। সেই সুবাদেই তিনি হলদিবাড়ি কলেজের পরিচালন সমিতির সদস্যও হন বলে তৃণমূলের হলদিবাড়ির ব্লক সভাপতি গোপাল রায়ের দাবি। গোপালবাবু বলেন, “সহিদুল তো অর্ঘ্যের ছায়াসঙ্গী ছিলেন। কিন্তু পুলিশ রং না দেখে আইন মতো চলুক সেটাই আমরা চাই।” তবে অর্ঘ্যবাবুর দাবি, এখন সহিদুলের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ নেই। কলেজ পরিচালন সমিতি থেকেও সহিদুল ইস্তফা দিয়েছেন। কিন্তু ওই তরুণীকে চাপ দিয়ে টাকা নিয়ে বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে দলের কোনও নেতা জড়িত কি না, তা খতিয়ে দেখার দাবি উঠেছে তৃণমূলেরই অন্দরে। তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “সহিদুলকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে করা অভিযোগটি ১০ লক্ষ টাকা দিয়ে রফা করার চেষ্টা হচ্ছে বলেও শুনেছি। প্রদেশ নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলে পদক্ষেপ করা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE