Advertisement
E-Paper

টোটোপাড়ার কমলা চাষ বাঁচানোর দাবি

বাতাসে হিমেল রেশ লাগতেই বাজারে ভিড় করে কমলালেবু। ডুয়ার্সের বাসিন্দারা একটা সময় কমলালেবু বলতেই এক ডাকে চিনতেন টোটোপাড়ার কমলালেবুকে। সরকারও কয়েক বছর আগে কমলালেবু চাষে সাহায্য করেছিল দেশের অন্যতম ক্ষুদ্র জনজাতি টোটো সম্প্রদায়ের লোকজনদের। তবে সাহায্য-অনুদানের অভাবে আজ টোটোপাড়ার সেই কমলালেবু চাষ উঠে যাওয়ার মুখে। বাজার দখল করেছে ভুটানের কমলা।

নিলয় দাস

শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৪ ০২:৫০
এমন দৃশ্যই ফের দেখতে চায় টোটোপাড়া। নিজস্ব চিত্র।

এমন দৃশ্যই ফের দেখতে চায় টোটোপাড়া। নিজস্ব চিত্র।

বাতাসে হিমেল রেশ লাগতেই বাজারে ভিড় করে কমলালেবু। ডুয়ার্সের বাসিন্দারা একটা সময় কমলালেবু বলতেই এক ডাকে চিনতেন টোটোপাড়ার কমলালেবুকে। সরকারও কয়েক বছর আগে কমলালেবু চাষে সাহায্য করেছিল দেশের অন্যতম ক্ষুদ্র জনজাতি টোটো সম্প্রদায়ের লোকজনদের। তবে সাহায্য-অনুদানের অভাবে আজ টোটোপাড়ার সেই কমলালেবু চাষ উঠে যাওয়ার মুখে। বাজার দখল করেছে ভুটানের কমলা।

উত্তরবঙ্গের বক্সা, জলঢাকা, সামসিং, গরুবাথান, লোলেগাঁও, তাকদা, মিরিকের মতো এলাকায় বহু বছর ধরে কমলালেবুর চাষ করে আসছেন সেখানকার চাষিরা। মূলত শীতকালে ওই লেবু ফলিয়েই এক সময় সারা বছরের জীবিকা নির্বাহ করতেন ওই সব এলাকার বাসিন্দারা। বাদ ছিল না টোটোপাড়াও। টোটোদের বাগানের কমলা লেবুর সুমিষ্ট স্বাদ আজও মুখে লেগে রয়েছে ডুয়াসের্র অনেক বাসিন্দার। কমলালেবুকে ভর করেই খানিক হাল ফিরছিল দুর্গম এলাকার বাসিন্দা ওই দরিদ্র জনজাতির।

প্রায় দুই দশক আগে থেকেই অবশ্য কমলা-চাষের ক্ষতি শুরু হয়। পরিচর্যার অভাবে লেবুর বাগানগুলি নষ্ট হয়ে যায়। মুখ থুবড়ে পড়ে গোটা এলাকার অর্থনীতি। ২০০৭ সালে টোটোপাড়ার বাসিন্দাদের দাবি মেনে রাজ্য সরকার তিন হাজার কমলালেবুর চারা তুলে দেন এলাকার ২০ জনের হাতে। পাঁচ বছর পরে সেগুলিতে ফল ধরলেও গত বছর থেকে সমস্ত গাছে মড়ক ধরে। মাথায় হাত পড়ে টোটো চাষিদের।

বাসিন্দাদের ক্ষোভ, চারা আর এক বছরের জন্য সারের যোগান দিয়েই দায় সেরেছিল রাজ্য সরকার। গাছগুলি যে বেঁচে রয়েছে তার প্রমাণ রাখতে এক বছর বাদে ছবি তুলে দায় সেরেছেন কৃষি দফতরের কর্মীরাও। তারপর আর কোনও রকম খোঁজও নেননি বলে অভিযোগ টোটোপাড়ার বাসিন্দাদের। গোবিন্দ টোটো, শঙ্কর টোটো, সন্দেশ টোটোদের কথায়, “গাছে ফল ধরতে শুরু করায় আমরা ঘুরে দাঁড়ানোর রাস্তা খুঁজে পেয়েছিলাম বলে আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠি। এখন তো সব শেষ। ফের চারা দিলে ফলের জন্য পাঁচ বছরের প্রতীক্ষা করতে হবে। সরকারের লোকজন নজর দিলে আমাদের অবস্থা এমন হত না।” কমলালেবু না ফলিয়ে পরবর্তীতে টোটোরা সে সমস্ত বাগানে সুপুরির চাষ শুরু করেন। তবে তা কমলালেবুর স্থান পূরণ করতে পারেনি। বাগানে কমলা না ফললেও টোটোপাড়ার নাম করে ভুটানের কমলা বাজার দখল করে ফেলেছে বলে ক্ষোভ বাসিন্দাদের।

গত এক দশকে কমলালেবুর চাষ ৮০ শতাংশ কমে যায় বলে দাবি করেছেন অ্যাসোসিয়েশন ফর কনজারভেশন অ্যান্ড ট্যুরিজমের উদ্যোক্তা রাজ বসু। টোটোপাড়ার মত উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় কমলালেবুর চাষের পুরনরুজ্জীবনের জন্য রাজ্য সরকার-সহ কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন তাঁরা। রাজ বসুর কথায়, “কমলালেবু চাষির ঘরের ছেলে-মেয়েরা আর্থিক অনটনের মুখে পড়ে আজ ভিন্ রাজ্যে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।” তিনি জানান, ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে কলকাতায় উত্তরবঙ্গের কমলালেবু নিয়ে হিমালয়ান অরেঞ্জ অ্যান্ড রুরাল ট্যুরিজম ফেস্টিভ্যাল করতে উদ্যোগী হয়েছেন তাঁরা। সেখানেই তাঁরা কমলালেবু বাঁচানোর দাবি তুলবেন বলে জানান রাজবাবু। এলাকার তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য রূপচাঁদ টোটোর কথায়, “বাপ-ঠাকুরদারা কমলা চাষ করতেন। বাজারে যে দামে কমলা আজ বিক্রি হয়, গাছ বেঁচে থাকলে সেই দাম পেয়ে অভাব অনেকটা দূর হত। সরকারের কাছে আমরা ফের চারা দেবার জন্য আবেদন করব।”

তবে টোটোপাড়ার কমলালেবু চাষের অবনতির বিষয়টি জানেন না রাজ্যের উদ্যানপালন দফতরের মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী। তিনি বলেন, “টোটোপাড়ার বাগানে কমলালেবুর গাছ মরে যাবার বিষয়টি আসলে আমার জানা নেই। আমার কাছে টোটোরা একবার বিষয়টি জানালে আমি ফের ওঁদের বাগানে কমলালেবু চাষ করার জন্য চারা দেব। গাছগুলি যাতে তাঁরা বাঁচিয়ে রাখতে পারে সে বিষয়ে আমার দফতরের কর্মীরা সব সময় সাহায্য করবে।”

orange cultivation totopara nilay das
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy