Advertisement
০২ জুন ২০২৪

তৃণমূল নেতা খুনে স্ত্রীকে ৭ দিনের পুলিশ হেফাজত

তৃণমূল কিসান কংগ্রেসের দার্জিলিং জেলা সভাপতি রবিন কর্মকার খুনের মূল অভিযুক্ত তাঁর স্ত্রী বাবলিদেবী সহ তিনজনকে ৭ দিনের পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিল আদালত। সোমবার শিলিগুড়ি আদালতে ভারপ্রাপ্ত এসিজেএম নীলাঞ্জন মৌলিকের এজলাসে তাদের পেশ করা হয়। আরও তদন্তের জন্য এবং যে পিস্তল ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে রবিনবাবুকে খুন করা হয়েছে, তা উদ্ধারের জন্য পুলিশ অভিযুক্তদের ১৪ দিনের জন্য নিজেদের হেফাজত নেওয়ার দাবি করে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০১৪ ০১:৪০
Share: Save:

তৃণমূল কিসান কংগ্রেসের দার্জিলিং জেলা সভাপতি রবিন কর্মকার খুনের মূল অভিযুক্ত তাঁর স্ত্রী বাবলিদেবী সহ তিনজনকে ৭ দিনের পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিল আদালত। সোমবার শিলিগুড়ি আদালতে ভারপ্রাপ্ত এসিজেএম নীলাঞ্জন মৌলিকের এজলাসে তাদের পেশ করা হয়। আরও তদন্তের জন্য এবং যে পিস্তল ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে রবিনবাবুকে খুন করা হয়েছে, তা উদ্ধারের জন্য পুলিশ অভিযুক্তদের ১৪ দিনের জন্য নিজেদের হেফাজত নেওয়ার দাবি করে। দু’পক্ষের বক্তব্য শোনার পরে ৭ দিনের পুলিশি হেফাজত মঞ্জুর করেন বিচারক। মূল অভিযুক্ত বাবলিদেবী অবশ্য এদিন সংবাদ মাধ্যমের সামনে নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, “আমি কিছু করিনি। আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।”

এদিন সরকারি আইনজীবী ছিলেন দীননাথ মোহান্ত। তিনি বলেন, “অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে খুন, খুনের ষড়যন্ত্র ও তথ্য গোপন করার অভিযোগে মামলা হয়েছে। অভিযুক্তদের ফের ১৩ অক্টোবর আদালতে হাজির করানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” অভিযুক্তের আইনজীবী অভয়পদ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য দাবি করেন, “বাবলিদেবীকে সন্দেহের বশে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিচার সম্পূর্ণ হলেই আসল সত্য বেরিয়ে আসবে।” তবে বাকি দু’জন সম্পর্কে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি। এদিন মামলা চলাকালীন বিচারকের সামনেও রবিনবাবুর জমি সংক্রান্ত ব্যবসা এবং তাঁর রাজনৈতিক পরিচয়ের প্রসঙ্গও তুলে ধরেন তিনি। খুনের পিছনে এই দুই কারণও জড়িত থাকতে পারে বলে তিনি দাবি করেন। যদিও পুলিশের দাবি অনুযায়ী, রবিনবাবুর বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে কোনও কথা খরচ করেননি অভয়বাবু। গত তিন চার দিনে একাধিকবার জেরা করার পরেও কেন পুলিশি হেফাজতের দাবি করা হচ্ছে, সে নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁদের কাছে বাবলিদেবীকে সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। মূলত বাবলিদেবীর মোবাইলে অভিযুক্ত তিনজনের মোবাইল নম্বর পাওয়া গিয়েছে। ২৬ সেপ্টেম্বর রাতে বাগডোগরায় রবিনবাবুর বাড়িতে তিনজনেরই মোবাইলের টাওয়ার ধরা পড়েছে। সেই সূত্র ধরেই এঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে। শিলিগুড়ি পুলিশের ডেপুটি কমিশনার শ্যাম সিংহ বলেন, “পারিবারিক অশান্তি থেকেই খুনের পরিকল্পনা হয়েছে। এর পিছনে অন্য কোনও কারণ জড়িত থাকার সম্ভাবনা কম। তবে সব দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। খুনে ব্যবহার হওয়া অস্ত্র উদ্ধার হলে এ ব্যপারে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে।”

গত ২৬ সেপ্টেম্বর বাগডোগরায় নিজের বাড়িতেই খুন হন তৃণমূল কিসান কংগ্রেস জেলা সভাপতি রবিনবাবু। তাঁকে মাথার পাশে গুলি করে খুন করা হয়। গলা ও পেটে ধারাল অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়। সেই সময় রবিনবাবুর স্ত্রী পুলিশকে জানিয়েছিলেন, ওই রাতে তিন জন বাড়িতে এসেছিল। দুই মেয়ে অন্য ঘরে শুয়েছিল। বাড়ির পিছনের অংশে একটি ঘরে সকলে বসেছিলেন। লোডশেডিংয়ের কারণে অন্ধকার ছিল। বৃষ্টিও হচ্ছিল। তাই ঠিক কারা এসেছিল, তা তিনি দেখতে পাননি। তা ছাড়া, দলের কাজে প্রায়ই লোকজন এসে ওই ঘরে বসত বলে তিনি ভাল করে বিষয়টি খেয়াল করেননি বলে দাবি করেছিলেন। সকালে ডাকতে গিয়ে স্বামীকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান বলে বাবলিদেবী পুলিশকে জানান। যদিও প্রথম থেকেই তাঁর কথাবার্তায় খটকা লেগেছিল তদন্তকারী অফিসারদের। ধৃতেরাই সেদিন রাতে ওই বাড়িতে এসেছিল বলে পুলিশের দাবি।

রবিবার রায়গঞ্জ থেকে অন্য দুই অভিযুক্ত প্রসেনজিৎ সেন এবং বিকি সরকারকে গ্রেফতার করে বাগডোগরা থানার পুলিশ। বাবলিদেবীকে বাগডোগরায় নিজের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়। বাবলিদেবীর অনুরোধে তার ভাগ্নে-জামাই ওই দুই ভাড়াটে খুনিকে খুনের জন্য নিযুক্ত করে বলে জানা গিয়েছে। ওই ব্যক্তি পলাতক। তাঁর বিরুদ্ধে কয়েক মাস আগে শিলিগুড়ির ভক্তিনগর থানা এলাকার একটি খুনের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

tmc leader murder rabin karmakar siliguri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE