Advertisement
E-Paper

তৃণমূলে যোগ দিলেন প্রাক্তন বাম কাউন্সিলর

দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে এ বার তৃণমূলে যোগ দিলেন প্রাক্তন সিপিএম কাউন্সিলর তথা বরো চেয়ারম্যান জয়ন্ত মৌলিক। রবিবার শিলিগুড়ির হিলকার্ট রোডে দলীয় কার্যালয়ে তিনি এবং তাঁর স্ত্রী সঙ্গীতা দেবী উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের হাত থেকে তৃণমূলের দলীয় পতাকা নেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৪ ০২:৩০
তৃণমূলে যোগ জয়ন্ত মৌলিকের। নিজস্ব চিত্র।

তৃণমূলে যোগ জয়ন্ত মৌলিকের। নিজস্ব চিত্র।

দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে এ বার তৃণমূলে যোগ দিলেন প্রাক্তন সিপিএম কাউন্সিলর তথা বরো চেয়ারম্যান জয়ন্ত মৌলিক। রবিবার শিলিগুড়ির হিলকার্ট রোডে দলীয় কার্যালয়ে তিনি এবং তাঁর স্ত্রী সঙ্গীতা দেবী উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের হাত থেকে তৃণমূলের দলীয় পতাকা নেন। জয়ন্তবাবু দল ছাড়ায় অস্বস্তিতে পড়েছে জেলা সিপিএম। তবে পরিস্থিতি সামলাতে তড়িঘড়ি জয়ন্তবাবুকে বহিষ্কারেরর কথা ঘোষণা করেন সিপিএমের দার্জিলিং জেলা কমিটির কার্যকরি সম্পাদক জীবেশ সরকার।

উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী বলেন, “প্রাক্তন বাম কাউন্সিলর তথা বরো চেয়ারম্যান জয়ন্তবাবু এবং তাঁর স্ত্রী একসঙ্গে দলে যোগ দিয়েছেন। ওই দম্পতি এক সঙ্গে দলে যোগ দেওয়ায় তাঁদের পক্ষে কাজ করতে সুবিধা হবে। ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে মাণিক দে এবং তাঁর সঙ্গে ৪০ জন দলে যোগ দেন।”

প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে একনায়কতন্ত্র চালানোর অভিযোগ তুলেছেন জয়ন্তবাবু। এ দিন জয়ন্তবাবু বলেন, “দলে একনায়কতন্ত্র চালাচ্ছেন অশোকবাবুর মতো নেতারা। দলে বাকি যাঁরা রয়েছেন সকলকে তাঁদের জয়গান গাইতে হবে। অথচ আমাদের মতো নেতাদের তাঁরা কখনই সম্মান দেবেন না। এটা দীর্ঘসময় চলতে পারে না।” জয়ন্তবাবুর ক্ষোভ, সিপিএম তাঁকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার করেছে অথচ দলের কাছ থেকে তিনি মর্যাদা পাননি। তা ছাড়া একনায়কতন্ত্র চলায় ওই নেতাদের কথা মেনে চলা ছাড়া উপায় থাকত না। তাতে দমবন্ধ করা, অস্বস্তিকর পরিবেশের মধ্যে কাটাতে হচ্ছিল। জেলা সিপিএম নেতৃত্ব তরুণ প্রজন্মকে সুযোগ দিতে চান না বলে অভিযোগ। বর্তমানে ওই সিপিএম নেতারা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। তাঁদের সঙ্গে থেকে নিজেকে হতাশাগ্রস্ত করতে চান না জয়ন্তবাবু। তাঁর অভিযোগ, “সিপিএম জেলা নেতৃত্ব পার্টি অফিসে বসে কেবল দলবাজি করছেন। দলে থাকতে হলে অন্যদের সেটা মেনে নিয়ে চলতে হচ্ছে।”

পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের এক সময়ের অন্যতম সিপিএম নেতা ছিলেন মাণিকবাবু। শেষ পুর নির্বাচনে সিপিএম নেতৃত্ব তাঁদের সঙ্গে আলোচনা না করে প্রার্থী দেওয়ায় মাণিকবাবু নির্দল হয়ে ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন। পরে দল তাঁকে বহিষ্কার করে। অশোকবাবুদের বিরুদ্ধে একনায়কতন্ত্র চালানোর অভিযোগ মানিকবাবুরও।

তাঁর বিরুদ্ধে একনায়কতন্ত্র চালানোর অভিযোগ নিয়ে প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোকবাবুর প্রতিক্রিয়া, “অভিযোগ কেউ করতেই পারেন। আসলে নীতিহীন, দুর্বৃত্তপরায়ণ একটা দলে গিয়ে জয়ন্তবাবু নিজেকেও সেই সমকক্ষ করলেন। এ ধরনের নেতারা আরও আগে দল থেকে চলে গেলেই ভাল হত।”

অশোকবাবুর দাবি, প্রাপ্যের বেশিই সম্মান তাঁরা জয়ন্তবাবুকে দিয়েছেন। তিনি বলেন, “দলে থেকে জয়ন্তবাবু আমাদের ক্ষতি করছিলেন। বিরোধীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিল। আমরা বুঝতে পারিনি। ওঁকে প্রাপ্র্যের চেয়ে বেশি সম্মান দেওয়াটাই ভুল হয়েছিল।”

মুখে এ কথা বললেও শেষ পর্যন্ত জয়ন্তবাবুকে দলে ধরে রাখতে সচেষ্ট ছিলেন অশোকবাবুরা। জয়ন্তবাবুর দল ছড়ার অভাস পেয়েছিলেন তাঁরা। এ দিন সকালেও তাঁর বাড়িতে গিয়েছিলেন অশোকবাবু। জয়ন্তবাবু বাড়িতে ছিলেন না। তাঁর পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমেও জয়ন্তবাবুর সঙ্গে কথা বলতে চেষ্টা করেছিলেন। তবে জয়ন্তবাবু আগ্রহী না-হওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। অশোকবাবু বলেন, “ও দল ছাড়বে বলে অভাস পেয়েছিলাম। সেটা ঠিক কি না সেটা পরিষ্কার হতেই ওঁর বাড়িতে গিয়েছিলাম।”

শুধু অশোকবাবু নন, নাম না করে দলের জেলা নেতৃত্বের কয়েক জন শীর্ষনেতার বিরুদ্ধেও তোপ দেগেছেন জয়ন্তবাবু। তাঁর অভিযোগ, শিলিগুড়ির বাইরে বাসিন্দা হয়েও তাঁরা জেলা নেতৃত্বের শীর্ষস্থানে বসে আখের গুছিয়েছেন। দিনহাটা থেকে শিলিগুড়িতে আসা প্রথমসারির তেমনই এক সিপিএম নেতার প্রসঙ্গে জয়ন্তবাবু জানান, উনি আজও দিনহাটা গেলে বলেন ‘বাড়ি’ যাচ্ছেন। শিলিগুড়িতে তাঁর বাড়ি বলে তিনি এখনও ভাবতে পারেন না। অথচ ভূমিপুত্র হলেও জয়ন্তবাবুদের তাঁরা প্রথমসারির জেলা নেতৃত্বের মধ্যে জায়গা দিতে নারাজ।

জয়ন্তবাবুর বিরুদ্ধে এক সময় সুবিধাবাদী রাজনীতি করার অভিযোগ উঠেছিল। বিশেষ করে অজানা জ্বরের সময় তিনি শহরের মানুষের কথা না ভেবে কাউকে কিছু না জানিয়ে শিলিগুড়ি ছেড়ে চলে যান বলে অভিযোগ। জয়ন্তবাবু বলেন, “আমি বাসিন্দাদের ফেলে, কাউকে কিছু না বলে কখনই যাইনি। আমার ছেলে তখন শিশু। দলকে জানিয়েই অসুস্থ শিশুকে নিয়ে চিকিৎসা করাতে বাইরে যাই। আমি তাঁদের বলে গিয়েছি বলে দলীয় নেতৃত্বের একাংশ পরে অস্বীকার করে বদনাম করতে সচেষ্ট হয়।”

জয়ন্তবাবুর মতো মাণিকবাবুও ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, অশোকবাবুরা পার্টি অফিসে বসে যা বলে দেবেন সেটাই সকলকে মেনে নিতে হত। এই একনায়কতন্ত্র, জুলুম বেশি দিন চলতে পারে না।

tmc left councilor siliguri
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy