Advertisement
১৮ মে ২০২৪

দোলের উৎসবে লাগল রাজনীতির রংও

ভাইচুং ভুটিয়ার সারা মুখে সবুজ আবির। নিমু ভৌমিক ঘুরলেন গেরুয়া আবির মেখে। ভোটের মুখে রঙের উৎসবের দিন দলের রং দেখানোর সুযোগ ছাড়লেন না এমন অনেকেই। কেউ আবির মাখার ফাঁকে প্রচারের কাজ সারলেন। কেউ প্রচারের ফাঁকে রং মাখিয়ে নিজেও রঙিন হলেন। রবিবার থেকে সোমবার দুপুর পর্যন্ত দোলের দুদিন উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকার ছবিটা ছিল এমনি বর্ণময়। অবশ্যই লোকসভা ভোট প্রচারের সৌজন্যে দোলটা একটু অন্যরকম ভাবেই কাটাল উত্তরের ছয় জেলা। দার্জিলিং পাহাড় থেকে ডুয়ার্সের সঙ্কোশ ঘেঁষা গ্রাম, সর্বত্রই নেতা-তারকা আমজনতার সঙ্গে মাতলেন রঙের উৎসবে।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৪ ০১:১৮
Share: Save:

ভাইচুং ভুটিয়ার সারা মুখে সবুজ আবির। নিমু ভৌমিক ঘুরলেন গেরুয়া আবির মেখে। ভোটের মুখে রঙের উৎসবের দিন দলের রং দেখানোর সুযোগ ছাড়লেন না এমন অনেকেই।

কেউ আবির মাখার ফাঁকে প্রচারের কাজ সারলেন। কেউ প্রচারের ফাঁকে রং মাখিয়ে নিজেও রঙিন হলেন। রবিবার থেকে সোমবার দুপুর পর্যন্ত দোলের দুদিন উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকার ছবিটা ছিল এমনি বর্ণময়। অবশ্যই লোকসভা ভোট প্রচারের সৌজন্যে দোলটা একটু অন্যরকম ভাবেই কাটাল উত্তরের ছয় জেলা। দার্জিলিং পাহাড় থেকে ডুয়ার্সের সঙ্কোশ ঘেঁষা গ্রাম, সর্বত্রই নেতা-তারকা আমজনতার সঙ্গে মাতলেন রঙের উৎসবে।

শিলিগুড়িতে তৃণমূলের দার্জিলিং জেলা সভাপতি তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব সস্ত্রীক সামিল হয়েছেন রঙের উৎসবে। আবার কোথাও দেখা গেল ভাইচুং ভুটিয়াকে। মালদহে হোলির দিন অনুগামী, পাড়া-পড়শিদের ভিড় উপচে পড়ল কৌতোয়ালিতে। মৌসম বেনজির নূরকে ঘিরে আবেগ-উদ্দীপনা দেখা গেল সেখানে। বালুরঘাটে বিশ্বপ্রিয় রায়চৌধুরী থেকে রায়গঞ্জে নিমু ভৌমিক, ডুয়ার্সের আলিপুরদুয়ারে মনোহর তিরকে ও দশরথ তিরকেএক কথায় বলতে গেলে অনেক প্রার্থীই চুটিয়ে হোলিতে সামিল হয়েছেন।

বালুরঘাটের বিবরণ দিয়ে শুরু করা যাক। সেখানে বিজেপির প্রার্থী বিশ্বপ্রিয় রায়চৌধুরীকে নিয়ে সাত সকালে শহরের রাস্তায় নেমে পড়েন অনুগামীরা। মালদহের বাসিন্দা বিশ্বপ্রিয়বাবু এলাকায় বালু নামেই পরিচিত। গোটা বালুরঘাট শহরে হেঁটে তিনি রাস্তার দুপাশে দোকানদার ও পথচারীদের কপালে গেরুয়া রঙের আবিরের টিপ দিয়ে হাসিমুখে নমস্কার করে ঘুরলেন। বিজেপির জেলা নেতা রঞ্জন মন্ডলের কথায়, “এতে প্রার্থীর সঙ্গে বাসিন্দাদের সরাসরি পরিচয় ঘটল।” তৃণমূল প্রার্থী, নাট্যকর্মী অর্পিতা ঘোষ অবশ্য দোলের সময়ে নির্বাচনী ক্ষেত্রে নেই। তিনি দুদিনের জন্য কলকাতায় গিয়েছেন। এদিন তিনি ফোনে বলেন, “জরুরি কিছু কাজে কলকাতায় এসেছি। রং খেলা হবে না।” জেলায় প্রার্থী নেই তো কী হয়েছে? শহরের বিশ্বাসপাড়া এলাকায় মুখ্যমন্ত্রী এবং প্রার্থী অর্পিতা ঘোষের ছবি ঝুলিয়ে তৃণমূল কর্মী সমর্থকেরা রং খেলায় মাতেন। দলের জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্রকে নিয়ে রং খেলায় মেতে ওঠেন তৃণমূল কর্মীরা।

শহরের বুড়িকালীবাড়ি এলাকা এদিন আবির ও রঙের অনুষ্ঠান সকলের নজর কাড়ে কৃত্রিম ফোয়ারা তৈরি করে রং খেলায় মাতেন বাসিন্দারা। তাতে সামিল হন তৃণমূল নেতা তথা ভাইস চেয়ারম্যান রাজেন শীল তৃণমূল কাউন্সিলর ব্রতময় সরকার, দেবজিত রুদ্ররা তো সকাল থেকে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে বাসিন্দাদের আবির মাখিয়ে জনসংযোগ জোরদারের চেষ্টা চালান। তবে দোলের ফাঁকে ভোট প্রচারের সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি কংগ্রেস। কারণ, বালুরঘাট লোকসভা আসনে এখনও প্রার্থী ঘোষণা করতে পারেনি। প্রদেশ নেতৃত্ব জেলা কংগ্রেস সভাপতি নীলাঞ্জন রায় বলেন, “নিজেদের মত করে আমরা রং খেলেছি। শীঘ্রই প্রার্থী ঘোযণা হয়ে যাবে।”

দিনের শেষে শহরের রাস্তা, পাড়ার গলির পথঘাট সবুজ আবির, নীল রঙে ঢেকে যায়। তাতে লাল রঙের আধিক্য ছিল অপেক্ষাকৃত কম। বালুরঘাটের বামফ্রন্টের আরএসপি প্রার্থী বিমল সরকার এদিনটা শহরে নেতৃত্বদের নিয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে বৈঠক করে ভোটের প্রচার প্রস্তুতির রূপরেখা তৈরিতে ব্যস্ত ছিলেন। বিমলবাবু বলেন, “আবির রঙের মধ্যে আমরা নেই। আমাদের নজর এখন কর্মী বৈঠকের উপরে।”

পাশের জেলা মালদহে সোমবার প্রচার বন্ধ রেখে কোতোয়ালির বাড়িতেই হোলি খেলায় মেতে উঠেছিলেন উত্তর মালদহের কংগ্রেস প্রার্থী। বাড়ির বাইরে পা রাখেননি। সকালে পরিবারের লোকজনদের সঙ্গে হোলি খেলার পরে প্রতিবেশীদের সঙ্গে হোলি খেলেন মৌসম বেনজির নূর। কংগ্রেসী প্রার্থী বলেন, “দোলের দিন রাজনীতি হবে না। শুধু হোলি খেলার দিন। সেই জন্য আজকের দিনে কোনও নিবার্চনী প্রচার রাখিনি। বাড়িতেই পরিবার, আত্মীয়-পরিজন ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে হোলি খেলেছি।” অবশ্য এদিন আশেপাশের বহু এলাকার মানুষের বিড় উপচে পড়ে কোতুয়ালিতে।

রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্রের বামফ্রন্ট প্রার্থী সিপিএমের মহম্মদ সেলিমও হোলির ফাঁকে প্রচার সেরেছেন। রবিবার রায়গঞ্জে নানা এলাকায় নির্বাচনী প্রচার চালান। এদিন সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত তিনি রায়গঞ্জের বাহিন এলাকায় একাধিক কর্মিসভা ও বাড়ি বাড়ি প্রচার চালান। রায়গঞ্জের কংগ্রেস প্রার্থী দীপা দাশমুন্সি হোলির জন্য দুদিন নির্বাচনী প্রচার বন্ধ রেখেছেন। রবিবার সকালে তিনি বাগডোগরা থেকে বিমানে চেপে দিল্লিতে গিয়েছেন। অসুস্থ স্বামী প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সিকে দেখার জন্য দুদিন তিনি দিল্লির একটি বেসরকারি হাসপাতালে ছিলেন। আজ, মঙ্গলবার তিনি কালিয়াগঞ্জে ফিরবেন। তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী সত্যরঞ্জন দাশমুন্সি ও সমাজবাদী পার্টির প্রার্থী সুদীপ সেন বর্তমানে দলীয় ব্যক্তিগত কাজে কলকাতায় রয়েছেন।

রায়গঞ্জের বিজেপি প্রার্থী নিমু ভৌমিক রবিবার দলীয় কর্মী সমর্থকদের সঙ্গে গেরুয়া রঙের আবির খেলায় মেতে ওঠেন। এর পর দিনভর তিনি দলের কর্মী সমর্থকদের সঙ্গে রায়গঞ্জ ও কালিয়াগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় প্রচার চালান। সোমবার সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত তিনি হেমতাবাদের বিভিন্ন এলাকায় একাধিক কর্মিসভা ও বাড়ি বাড়ি প্রচার চালান।

ডুয়ার্সের আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী দশরথ তিরকে কুমারগ্রাম চা বাগানের শ্রমিকদের সাথে দিনভর হোলিতে মেতেছিলেন। খেললেন লোকসভার বাম প্রার্থী মনোহর তিরকে থেকে শুরু করে কুমারগ্রামের বিধানসভা কেন্দ্রের প্রার্থী জোয়াকিম বাক্সলা ও বাম প্রার্থী মনোজ কুমার ওঁরাও সকলেই সামিল হন হোলিতে। শিলিগুড়িতে ভাইচুং ভুটিয়া শহরের নানা প্রান্তে দুদিন ধরে হোলির আয়োজনে যোগ দেন।

সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এলাকার কচিকাঁচাদের সঙ্গে হোলি খেললেন উত্তর মালদহ লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সৌমিত্র রায়ও। দোলে প্রতিবছর কলকাতা থেকে হরিশ্চন্দ্রপুরের বাড়িতে আসেন সৌমিত্রবাবু। যে যেখানেই থাকুন না কেন, আসেন পরিবারের প্রায় সকলেই। পুরনো রীতি মেনে হরিশ্চন্দ্রপুর জমিদারবাড়িতে দোল পালিত হয় ৫ দিন ধরে। রবিবার দেবদোল থেকে শুরু হয়ে তা চলবে ৫ দিন ধরে। ওই দোল উৎসব পঞ্চম দোল হিসেবেই পরিচিত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

dol holi election campaign loksabha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE