লোকসভা ভোটে মালদহের যে দুই মন্ত্রী প্রকাশ্যে চাপানউতোরে জড়িয়ে পড়েছিলেন, তাঁদের দুজনকেই দফতর থেকে সরিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার সরকারি ভাবে বিজ্ঞপ্তি জারি করে সাবিত্রী মিত্র ও কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী, দু’জনকেই যথাক্রমে সমাজকল্যাণ ও পর্যটন দফতর থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কৃষ্ণেন্দুবাবুকে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যান পালন দফতর দেওয়া হয়েছে। তবে সাবিত্রীদেবীকে কোনও দফতর দেওয়া হয়নি। আপাতত তিনি দফতরবিহীন মন্ত্রী হিসেবেই থাকবেন।
এই ঘটনায় মালদহে একই সঙ্গে হতাশা ও স্বস্তির নিশ্বাস পড়েছে তৃণমূলের অন্দরে। দল সূত্রের খবর, জেলায় সাবিত্রী দেবীর অনুগামীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। কৃষ্ণেন্দুবাবু অন্য দফতর পাওয়ায় তাঁর ঘনিষ্ঠরা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন। মালদহ সদরঘাটের বাড়িতে বসে সাবিত্রীদেবীর প্রতিক্রিয়া, “দল যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আমি তা মাথা পেতে নেব। দল যেটা করেছে ভালর জন্যই করেছে। আমি দলের একনিষ্ঠ কর্মী হিসাবে কাজ করছি। আগামী দিনে দলের জন্য কাজ করে যাব। আমি দল করতে এসেছি। দল করে যাব।” লোকসভায় মালদহে দলের দুই প্রার্থীর পরাজয়ের কারণেই কি আপনাকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী থেকে সরিয়ে দফতরবিহীন মন্ত্রী করা হল ? সাবিত্রী মিত্রের জবাব, “হতে পারে সেটাও কারণ। এর বেশি কিছু বলব না।” কৃষ্ণেন্দুবাবুর সঙ্গে বিরোধের প্রসঙ্গ তুলতেই সাবিত্রী দেবী বলেন, “এখন আমাদের দুই মন্ত্রীর মধ্যে কোন ঝগড়া নেই। একসঙ্গে কাজ করছি।”
কৃষ্ণেন্দুবাবু জানান, তিনি বুধবার নতুন দফতরের দায়িত্ব নেবেন। তাঁর বক্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রী যখন যে দায়িত্ব দেবেন আমি সেই দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে ও মানুষের স্বার্থে তা পালন করব। কিছুক্ষণ আগে সরকারিভাবে নতুন দফতরের দায়িত্ব নেওয়ার নির্দেশ পেয়েছি। কালকে বুধবার খাদ্য প্রক্রিয়াকরন ও উদ্যান পালন দফতরের দায়িত্ব নেব।”
জেলায় লোকসভা নিবার্চনে দলের ভরাডুবির জন্যই কি দফতর থেকে সরানো হলো? এ ব্যাপারে কৃষ্ণেন্দুবাবুর দাবি, “না, এর সঙ্গে ভোটের কোনও সম্পর্ক নেই। যদি থাকত তবে ব্রাত্য বসুকে কেন শিক্ষা দফতর থেকে সরানো হল? পার্থদাকে শিক্ষামন্ত্রী কেন করা হল? এটা সম্পূর্ণ দলীয় ব্যাপার।” সেই সঙ্গে কৃষ্ণেন্দুবাবুর যুক্তি, “মালদহ, মুশিদাবাদ-সহ গোটা উত্তরবঙ্গে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যান দফতরের কাজ করার অনেক সূযোগ রয়েছে।” তা হলে সাবিত্রীদেবীকে দফতর বিহীন করে রাখার মাধ্যমে কোনও বার্তা দেওয়া হল কি না সেই প্রশ্নে কৃষ্ণেন্দুবাবুর মন্তব্য, “আমি জানি না। এটা জানি, মুখ্যমন্ত্রী নিজে দল ও রাজ্য প্রশাসনের সর্বোচ্চ। মুখ্যমন্ত্রীই আমাদের কাছে অলমাইটি।”
ঘটনা হল, লোকসভা ভোটে গনি পরিবারের কাছে শোচনীয় পরাজয়ের ফলে দক্ষিণ মালদহ আসনের তৃণমূল প্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসেন চতুর্থ স্থানে থাকার বিষয়টি তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য নেতৃত্ব ক্ষুব্ধ হন। উপরন্তু, তৃণমূল প্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসেন অভিযোগ করেছিলেন, “মালদহে রাজনীতি হয় না। ব্যবসা হয়। আমাকে হারাতে সবাই ডালুবাবুর সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছিল।” দলের প্রার্থীর কাছ থেকে জেলার দুই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ শোনার পরে জেলার থেকে দলের একাধিক নেতা কর্মী দুই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে লাগাতার নালিশ করেন।
দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দলের জেলা সভানেত্রী সাবিত্রী মিত্র দলের আপত্তি সত্বেও সাবিত্রী মিত্রের স্বামী সিপিএম ও কংগ্রেসের একাধিক সমাজবিরোধীদের দলে ঢুকিয়েছেন বলে নেতাদের একাংশ প্রদেশ নেতাদের কাছে অভিযোগ করেছেন। কৃষ্ণেন্দুবাবুর অনুগামীদের কয়েকজন জেলা প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের চাকরি দেওয়ার নাম করে লক্ষ লক্ষ টাকা তুলেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। মালদহ মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষকে মারধর করা থেকে মালদহ কলেজে পরিচালন সমিত থেকে প্রবীণ শিক্ষাবিদ সন্তোষ চক্রবর্তীকে সরিয়ে জোর করে সভাপতি হওয়ার অভিযোগ উঠেছে কৃষ্ণেন্দুবাবুর বিরুদ্ধে। ভোটে হারের পরে দুই মন্ত্রীর কাজিয়া চরমে পৌঁছলে মুখ্যমন্ত্রী ডেকে দুজনকেই সতর্ক করে দেন বলে দল সূত্রের খবর।
পরিস্থিতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল কংগ্রেসও। মালদহের কংগ্রেস সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরীর মন্তব্য, “কথায় বলে, অতি বাড় বেড়ো না, ঝড়ে পড়ে যাবে!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy