কালিয়াচক ৩ ব্লকের ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের রাজস্ব আধিকারিক জয় মজুমদারকে দফতরে ঢুকে মারধর করার ঘটনায় ক্রমশ অস্বস্তি বাড়ছে শাসক দল তৃণমূলের। পুলিশ বৃহস্পতিবার এক তৃণমূল কর্মীকে গ্রেফতারও করেছে। ঘটনায় নাম জড়িয়ে পড়েছে স্থানীয় আরও চারজন তৃণমূল নেতা কর্মীর। তাঁদের একজন গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলা পরিষদের প্রার্থীও ছিলেন। গত বুধবার দুপুরে জয়বাবুকে মারধর করা হয়। ধৃতের নাম মিঠুন শেখ। জেলা পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পাঁচ জনের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের খোঁজা হচ্ছে।”
জেলা তৃণমূল সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, “অভিযুক্তরা যে দলের হোক না কেন, পুলিশ সুপারকে বলেছি ব্যবস্থা নিতে। আইন আইনের পথে চলবে।” তাঁর দাবি, ঘটনার সঙ্গে দলের কর্মী নেতার নাম জড়িয়ে পড়েছে ঠিকই। তবে তাঁরা নিজেদের ব্যক্তিগত কারণে ওই দফতরে গিয়েছিলেন। দলের সঙ্গে এই ঘটনার কোনও যোগ নেই।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, বুধবার জয়বাবুকে বেধড়ক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। তাঁকে মালদহ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করানো হয়। বৃহস্পতিবার তাঁর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। তবে এখনও তিনি হাসপাতালের সিসিইউ-তে ভর্তি। এদিন তাঁর স্যালাইন ও অক্সিজেন খুলে দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের বেডে শুয়ে ওই রাজস্ব আধিকারিক জানান, বৈষ্ণবনগরের তৃণমূল নেতা আতিকুর রহমান-সহ পাঁচজন দফতরে ঢুকে তিনটি জমি রেকর্ড করার জন্য চাপাচাপি করতে থাকেন। তিনি বলেন, “এত দ্রুত তা সম্ভব নয় বলি। তবে ১৫ দিনের মধ্যে তা হয়ে যাবে বলে জানাই। কিন্তু ওঁরা কোনও কথা শোনেনি। প্রথমে গালিগালাজ, পরে মারধর শুরু করে। অন্য কর্মীরা না আসলে হয়তো মরেই যেতাম।” এই প্রসঙ্গে কালিয়াচক ৩ ব্লকের ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক অসীম দাস বলেন, “ওই অফিসার যাঁদের নাম বলেছেন, তাঁদের নামেই পুলিশ অভিযোগ দায়ের করেছি।”
পুলিশ সূত্রের খবর, পঞ্চায়েত নিবার্চনে কালিয়াচক তিন ব্লক থেকে তৃণমূলের জেলা পরিষদের প্রার্থী ছিলেন আতিকুর। তিনি মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্রের অনুগামী হিসাবে জেলায় পরিচিত। বুধবার নিজের চার শতক জমি-সহ অন্য একজনের তিনটি জমির রেকর্ড করানোর জন্য গিয়েছিলেন। অভিযুক্ত আতিকুরের দাবি, “আমার একটি জমির শুনানি এবং অন্য একজনের জমির রেকর্ডের জন্য গিয়েছিলাম। ওই ব্যক্তি শুনানির পরেই কম্পিউটারের শংসাপত্র পাচ্ছিলেন না বলে অভিযোগ করছিলেন। উনি টাকা ছাড়া কাজ করেন না বলে অভিযোগ ওঠে। সরকারকে এভাবে বদনাম করবেন না বলে বার হয়ে যাই।” তিনি বলেন, “আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে। আমি চলে আসার পর না কী কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে ওই অফিসারের ধাক্কাধাক্কি হয়েছিল বলে শুনেছি।”
ঘটনার পর অভিযুক্ত নেতার পাশে অবশ্য দাঁড়িয়েছেন মন্ত্রী সাবিত্রী দেবী। তিনি বলেন, “আতিকুর ওই অফিসারকে মারধর করেননি। উনি ওই অফিসারের টাকা নিয়ে কাজ করার প্রতিবাদ করেছিলেন, সেই কারণে আক্রোশবশে তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে। আমি পুলিশ সুপারকে যথাযথ তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের ধরতে বলেছি।” তৃণমূল নেতাদের তোলা টাকা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ওই রাজস্ব আধিকারিক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy