Advertisement
E-Paper

দলবল নিয়ে মারধরে অভিযুক্ত কৃষ্ণেন্দু

সারদা-কাণ্ড নিয়ে ‘ফেসবুক’-এ তাঁকে কটাক্ষ করা হয়েছে, এই দাবি তুলে জমজমাট স্টেশন চত্বরে দলেরই এক প্রাথমিক শিক্ষককে কটূক্তি করে অনুগামীদের দিয়ে বেধড়ক পেটানোর অভিযোগ উঠেছে রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যান পালন দফতরের মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরীর বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ মালদহ স্টেশন চত্বরে ঘটনাটি ঘটেছে। ওই শিক্ষকের নাম কাজল গোস্বামী। তিনি ইংরেজবাজারের কালীতলার বাসিন্দা। ঘটনার সময় কাজলবাবু দলের জেলা সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেনকে ট্রেনে তুলে ফিরছিলেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৫৩
মালদহে আহত কাজল গোস্বামী।

মালদহে আহত কাজল গোস্বামী।

সারদা-কাণ্ড নিয়ে ‘ফেসবুক’-এ তাঁকে কটাক্ষ করা হয়েছে, এই দাবি তুলে জমজমাট স্টেশন চত্বরে দলেরই এক প্রাথমিক শিক্ষককে কটূক্তি করে অনুগামীদের দিয়ে বেধড়ক পেটানোর অভিযোগ উঠেছে রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যান পালন দফতরের মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরীর বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ মালদহ স্টেশন চত্বরে ঘটনাটি ঘটেছে। ওই শিক্ষকের নাম কাজল গোস্বামী। তিনি ইংরেজবাজারের কালীতলার বাসিন্দা। ঘটনার সময় কাজলবাবু দলের জেলা সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেনকে ট্রেনে তুলে ফিরছিলেন।

সেই সময়ে স্টেশনে ছিলেন কৃষ্ণেন্দুবাবুও। কাজলবাবুর দাবি, মন্ত্রীকে তাকে ডেকে হঠাৎ বলতে শুরু করেন, ‘ফেসবুকে কেন এমন মন্তব্য করছ?’ নিগৃহীতের অভিযোগ, জবাব দিতে না দিতেই মন্ত্রী অশ্রাব্য গালিগালাজ করে ‘কী ভাবে পেটাব দেখাচ্ছি’ বলে চেঁচান। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই মন্ত্রীর অনুগামীরা কাজলবাবুকে বেধড়ক মারধর করে স্টেশনের বাইরে ফেলে পুলিশে জানালে ফের দেখে নেওয়া হবে হুমকি দিয়ে চলে যান। এলাকার লোকজন তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যান। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ঘরদোরে তালা দিয়ে সপরিবারে এলাকা ছেড়ে এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন কাজলবাবু। তিনি বলেন, “মন্ত্রী কী ভাবে গালি দিয়ে মার খাইয়েছেন তা জেলা সভাপতিকে সব জানিয়েছি। তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে জানাবেন বলেছেন। আমি পুলিশকে জানালে বিপদ বাড়বে। কারণ, আমাকে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন মন্ত্রীর অনুগামীরা। তাই প্রাণভয়ে বাড়ি ছেড়ে অন্য জায়গায় রয়েছি।”

এ ব্যাপারে ফোন করা হলে কৃষ্ণেন্দুবাবু বলেন, “আমি ব্যস্ত রয়েছি। পরে কথা বলব।” কিন্তু, দলের জেলা সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “আমি কাজলকে গালি দেওয়া, মারধর করানোর অভিযোগ শুনেছি। দলের শীর্ষ নেতানেত্রীদের সব জানাব। দল যেমন নির্দেশ দেবে, সেই মতো পদক্ষেপ করা হবে।” পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, অভিযোগ না জমা পড়লে তাদের পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়। মালদহের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এমন কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি। অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখা হবে।”

তৃণমূল সূত্রের খবর, কাজলবাবুর ফেসবুক-এ একটি সারদা-কাণ্ড বিষয়ক সংবাদ কেউ জুড়ে দেওয়া নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত। ওই সংবাদে সারদা-কাণ্ডে কৃষ্ণেন্দুবাবুকে ডাকা হতে পারে বলে লেখা হয়েছে। তৃণমূলের অন্দরে মোয়াজ্জেম হোসেনের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত প্রাথমিক শিক্ষক নেতা কাজলবাবুর ফেসবুক প্রোফাইলে ওই বিষয়টি থাকায় দলে সমালোচনা হয়।

এই অবস্থায়, ওই রাতে দলের সভাপতিকে কলকাতার ট্রেনে তুলতে যান কাজলবাবু। ঘটনাচক্রে, স্টেশনে ছিলেন কৃষ্ণেন্দুবাবুও। তাঁকে ঘিরে ছিলেন কয়েকজন অনুগামী। কাজলবাবু যে এলাকার বাসিন্দা, সেই ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কৃষ্ণেন্দুবাবুই। তিনি ইংরেজবাজার পুরসভার চেয়ারম্যানও। অভিযোগ, তাঁর এলাকার একজনের ‘এতটা সাহস’ কী ভাবে হল সেই প্রশ্নেই স্টেশনে ক্ষোভে ফেটে পড়েন মন্ত্রী। বেশ কিছুক্ষণ ওই প্রাথমিক শিক্ষককে তুমুল গালি দেন বলেও অভিযোগ। এর পরেই মার দেওয়ার হুমকি দেন। কাজলবাবুর অভিযোগ, “আমি বোঝানোর চেষ্টা করি সংবাদটি কেউ আমার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ‘ট্যাগ’ করেছে। ছবি যে কেউ ট্যাগ করতে পারে। কিন্তু, উনি টানা গালি দিয়ে মার দেওয়ার হুমকি দেন। তখনই মন্ত্রীর সঙ্গে থাকা ৮-১০ জন আমাকে ঘিরে বেধড়ক মারে। রাস্তায় ফেলেও পেটা তারা।” তিনি জানান, তার পরে স্থানীয়েরা তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যান। অভিযোগ, এর পরেই কাজলবাবুর বাড়িতে গিয়ে পরিবারের লোকেদের অভিযোগ জানালে বাড়ি ছাড়া করার হমকি দেন। তাঁর কথায়, “আমি স্ত্রী-ছেলেকে নিয়ে আতঙ্কে আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি। ভয়ে থানায় যেতে পারছি না। আমি পুরো ঘটনাটি মোয়াজ্জেম হোসেনকে জানিয়েছি।”

কাজলবাবুর স্ত্রীও আতঙ্কিত। তিনি বলেন, “আমাদের বাড়িতে রাত থেকে বেশ কিছু ছেলে এসে হুমকি দিচ্ছে। বাড়িতে এসে বলছেন আমার স্বামী বড় নেতা হয়ে গিয়েছে। আমরা অভিযোগ করলে এলাকা ছাড়া করবে। আমরা খুবই আতঙ্কে রয়েছি। থানায় যেতেও পারছি না। যারা বাড়ি গিয়েছিল সবাই মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ।”

কৃষ্ণেন্দুবাবুর বিরুদ্ধে হুমকি দেওয়া ও মারধরের অভিযোগ অবশ্য নতুন কিছু নয়। ইংরেজবাজার শহরে ৯ নম্বর ওর্য়াডের বালুচরের বাসিন্দা আইনজীবী সঞ্জয় শর্মাকে ২০১৪ সালের মার্চ মাসে ফোনে দুই কোটি টাকা চেয়ে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে মন্ত্রীর বিরুদ্ধে। ওই আইনজীবী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এই ঘটনার পর ফের তাকে অভিযোগটি প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য বাড়িতে ঢুকে হুমকি দেন মন্ত্রী ও তার অনুগামীরা। ফের অভিযোগ করেন ওই আইনজীবী। থানায় অভিযোগ হলেও পুলিশ এখনও কোনও মামলা রুজু করেনি।

malda krishnendu narayan choudhury beaten tmc
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy