পানীয় জল প্রকল্পের সরকারি টাকা তছরুপের অভিযোগের প্রশাসনিক তদন্তে প্রাথমিক সত্যতা মেলায় উত্তর দিনাজপুরের চাকুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের কংগ্রেস প্রধানের বিরুদ্ধে গোয়ালপোখর-২ ব্লকের বিডিওকে পুলিশে অভিযোগ জানানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন জেলাশাসক। কিন্তু তার পরে দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও বিডিও প্রধানের বিরুদ্ধে চাকুলিয়া থানায় অভিযোগ জানাননি বলে অভিযোগ। তার জেরে প্রধান ও বিডিও-র মধ্যে যোগসাজস রয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন চাকুলিয়ার ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক আলি ইমরান রমজ। অবিলম্বে প্রধানের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ জানানো না হলে দলের তরফে অনির্দিষ্টকালের জন্য ব্লক অফিসও ঘেরাও করার হুমকিও দিয়েছেন তিনি।
জেলাশাসক স্মিতা পান্ডে বলেন, “অত্যন্ত গুরুতর ব্যাপার। আমার নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও চাকুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানের বিরুদ্ধে বিডিও কেন এখনও এফআইআর করলেন না, তা খোঁজ নিয়ে দেখে উপযুক্ত পদক্ষেপ করব।” গোয়ালপোখর-২ ব্লকের বিডিও নাথালিয়ান সুব্বা অবশ্য বলেন, “এই ব্যাপারে যা বলার জেলা প্রশাসনই বলবে।” তবে জেলা প্রশাসনের এক কর্তার দাবি, রাজনৈতিক চাপের কারণে প্রশাসনিক কাজকর্ম অচল হওয়ার আশঙ্কায় বিডিও এখনও পর্যন্ত প্রধানের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ জানাতে পারেননি। অভিযুক্ত কংগ্রেস প্রধান কালিপদ ঘোষের মোবাইল বন্ধ থাকায় তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
প্রশাসন সূত্রের খবর, সরকারি নির্দেশে চাকুলিয়া পঞ্চায়েতের বিভিন্ন সংসদে ২০০টি নলকূপ বসানোর জন্য প্রধান কালীপদবাবু জুনের প্রথম সপ্তাহে চাকুলিয়ার একটি গ্রামীণ বিকাশ ব্যাঙ্কের পঞ্চায়েতের অ্যাকাউন্ট থেকে ৬ লক্ষ ৮৬ হাজার টাকা তোলেন। তারপরেই ৯ জুন প্রধানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে দিনভর চাকুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান ফরওয়ার্ড ব্লকের কর্মী সমর্থকেরা। বিধায়ক আলি ইমরান রমজের দাবি, ‘চাপে পড়ে’ ওইদিনই বিডিও নাথালিয়ান সুব্বা বিষয়টির তদন্ত করতে ওই পঞ্চায়েতের গুদামে অভিযান চালান। সেখানে ২০০টি নলকূপ থাকার কথা থাকলেও মাত্র ৪৫ টি নলকূপ মেলে। বাকি ১৫৫টি নলকূপের কোনও হদিস না পেয়ে বিডিও ওই গুদাম সিল করে দেন। ওই দিনই পঞ্চায়েতের ফরওয়ার্ড ব্লকের বিরোধী দলনেতা মোখতার আলম প্রধান-সহ পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিডিওর কাছে লিখিতভাবে সরকারি টাকা তছরুপের লিখিত অভিযোগ জানান। বিধায়কের অভিযোগ, পর দিনই কালিপদবাবু ও তাঁর অনুগামীরা বেআইনিভাবে সিল করা গুদামের তালা ভেঙে বাকি নলকূপগুলি ঢোকানোর চেষ্টা করেন। খবর পেয়ে বিডিওর নেতৃত্বে ব্লক প্রশাসনের কর্তারা ফের ওই গুদামে গিয়ে তাঁদের হাতেনাতে ধরে ফেলেন। ১৭ জুন বিধায়কের নেতৃত্বে বিডিওর কাছে যায় ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রতিনিধি দল। তখন বিডিও তাঁদের কাছে লিখিতভাবে দাবি করেন, প্রধান-সহ ওই পঞ্চায়েতের সচিব ও নির্মাণ সহায়ককে ১১ জুন শো-কজ করা হয়েছে। পুরো ঘটনাটি ইসলামপুরের মহকুমাশাসকের মাধ্যমে জেলাশাসককে জানানো হয়েছে।
এর পরে জেলাশাসক বিডিওকে প্রধানের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ জানানোর নির্দেশ দেন। ঘটনার সঙ্গে পঞ্চায়েতের কোনও আধিকারিক বা কর্মী জড়িত থাকলে, তাঁদের বিরুদ্ধেও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। কিন্তু তার পরেও সেই অভিযোগ এখনও করা হয়নি। তবে কংগ্রেস সভাপতি মোহিত সেনগুপ্তের দাবি, “ফরওয়ার্ড ব্লক রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র করে প্রশাসনকে চাপ দিয়ে প্রধানকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসিয়েছে। তদন্ত হলেই প্রধান নির্দোষ প্রমাণিত হবেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy