গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে বসানো কুয়ো বা নলকূপের জল পান করা কতটা নিরাপদ, প্রশাসনের কাছে তার কোনও তথ্যই নেই বলে অভিযোগ। জেলা জুড়ে এনসেফ্যালাইটিসের সংক্রমণ চলতে থাকলেও, কুয়ো-নলকূপের জল পরিশ্রুত করতে কোনও উদ্যোগ শুরু হয়নি বলে অভিযোগ। জলপাইগুড়ি জেলার সব ব্লকেই সরকারি কুয়ো বা নলকূপ রয়েছে। তার থেকেও অন্তত তিন গুণ বেশি রয়েছে বাড়ির কুয়ো বা নলকূপ। সরকারি কুয়ো-নলকূপের জল পরীক্ষার রিপোর্ট সরকারি দফতরে থাকলেও, বাড়ির কুয়ো-নলকূপের জলে জীবাণু রয়েছে কি না, তার কোনও তথ্যই প্রশাসনের কাছে নেই বলে অভিযোগ। সরকারি জলের নমুনা পরীক্ষায় অন্তত ২৫ শতাংশ ক্ষেত্রে জলে জীবাণু মিলেছে বলে গত বছরের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। যা যথেষ্ট উদ্বেগের বলে সরকারি সূত্রেই জানানো হয়েছে। সে ক্ষেত্রে এনসেফ্যালাইটিসের সংক্রমণ শুরু হলেও বাড়ির কুয়ো বা নলকূপের জল পরীক্ষার ব্যবস্থা কেন হয়নি তা নিয়েই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, শুয়োর-মশার মাধ্যমে জাপানি এনসেফ্যালাইটিস সংক্রমিত হলেও, সাধারণ এনসেফ্যালাইটিসের সংক্রমণ হতে পারে পানীয় জল থেকেও। এনসেফ্যালাইটিস নিয়ে স্বাস্থ্য দফতর থেকে সচেতনতার যে পোস্টার, হোর্ডিং, লিফলেটে প্রচার চলছে তাতে পানীয় জল নিয়ে সর্তকও করা হয়েছে। কিন্তু জেলার গ্রামগুলির বেশিরভাগ কুয়ো বা নলকূপের জল জীবাণুমুক্ত কি না, তার তথ্য প্রশাসনের কাছে না থাকায় কতটা ব্যবস্থা হবে তা নিয়েই সন্দিহান স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলি।
জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের সভাধিপতি নূরজাহান বেগম বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, “বাসিন্দাদের বাড়ির যে কুয়ো বা নলকূপের জল খায়, সেই জল সম্পর্কে কোনও তথ্য সরকারি ভাবে আমাদের কাছে নেই। অনেক নলকূপের জল দীর্ঘ দিন পরীক্ষাও হয় না। আগামী কাল এনসেফ্যালাইটিস নিয়ে বৈঠক রয়েছে, সেখানে বিষয়টি তুলব।”
সরকারি কুয়ো বা নলকূপের জলের নমুনা নিয়ে গবেষণাগারে পরীক্ষা করে, জেলা পরিষদ এবং জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরে রিপোর্ট দেওয়া হয়। সেই রিপোর্ট অনুযায়ী গত বছর ১১ হাজার কুয়ো পরীক্ষা করে ৩ হাজারের কিছু বেশি কুয়োর জলে জীবাণু মিলেছিল। শতকরা হিসেবে ২৫ শতাংশের বেশি কুয়োর জল মোটেই নিরাপদ ছিল না বলে জানা গিয়েছে। শুধু গত বছর নয়, প্রতি বছরই ২০ থেকে ৩০ শতাংশ জলের উত্সে জীবাণু পাওয়া যায়। বর্ষার সময়ে জলে সংক্রমণের হার বেড়ে যায়। ২০১২-১৩ সালে বর্ষার সময়ে ৩৮ শতাংশ কুয়োর জলে জীবাণু মিলেছিল, তার আগের বছর ২৬ শতাংশ কুয়োর জলে জীবাণু মিলেছিল বলে জানা গিয়েছে।
চলতি বছরের জুনে যে রিপোর্ট জমা পড়েছে তা নিয়েও উদ্বেগ ছড়িয়েছে জেলা প্রশাসনে। সম্প্রতি রাজগঞ্জ লাগোয়া এলাকায় কয়েকটি গভীর নলকূপের জলে জীবাণু মিলেছে বলে জানা গিয়েছে। সম্প্রতি এক বাসিন্দার এনসেফ্যালাইটিসে মৃত্যুও হয়েছে। জলপাইগুড়ির সদর মহকুমা শাসক সীমা হালদার জানিয়েছেন, “ব্লকের জল সংক্রান্ত তথ্য নেই ঠিকই, তবে গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি বলে দেওয়া হয়েছে, সব কুয়ো এবং নলকূপের জল পরিষ্কারের ব্যবস্থা করতে। এলাকায় ব্লিচিংও চড়ানো হচ্ছে। তাই খুব একটা আশঙ্কার কারণ নেই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy