Advertisement
E-Paper

পুজোর প্রস্তুতি রাজ-পরিবারে

পুরনো ঐতিহ্য মেনে বেনারসি শাড়ি আর নবরত্নে সজ্জিত দেবীর আরাধনার প্রস্তুতি শুরু হল জলপাইগুড়ি রাজবাড়িতে। জন্মাষ্টমীর পর দিন থেকে নন্দ উত্‌সব চলছে। যা আদতে দেবী প্রতিমা তৈরির আয়োজন। জলপাইগুড়ির বৈকুণ্ঠপুর রাজপরিবারের বংশপরম্পরায়ের প্রথা মেনে এ বারও দেবী এখানে ভারতের বিভিন্ন তীর্থস্থান থেকে আনা জলে মহাস্নান করবেন।

বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৪ ০২:০১

পুরনো ঐতিহ্য মেনে বেনারসি শাড়ি আর নবরত্নে সজ্জিত দেবীর আরাধনার প্রস্তুতি শুরু হল জলপাইগুড়ি রাজবাড়িতে। জন্মাষ্টমীর পর দিন থেকে নন্দ উত্‌সব চলছে। যা আদতে দেবী প্রতিমা তৈরির আয়োজন। জলপাইগুড়ির বৈকুণ্ঠপুর রাজপরিবারের বংশপরম্পরায়ের প্রথা মেনে এ বারও দেবী এখানে ভারতের বিভিন্ন তীর্থস্থান থেকে আনা জলে মহাস্নান করবেন।

বৈকুণ্ঠপুর রাজ পরিবারের দেবী বৈশিষ্ট্য এবং বৈচিত্র্যে স্বতন্ত্র। ইতিহাস গবেষকদের একাংশের দাবি, উত্তরবঙ্গে প্রথম দুর্গা পুজোর আয়োজন করেন কোচবিহারের মহারাজা নরনারায়ণ। তবে বঙ্গদেশে পরিচিত দেবী প্রতিমার সঙ্গে ওই দেবীর কোনও রকম মিল নেই। তিনি বড়দেবী নামে পরিচিত। ওই দেবীর আদলে প্রতিমা তৈরি করে পুজোর আয়োজন হয়।

বৈকুণ্ঠপুরে কবে নাগাদ পুজোর সূত্রপাত? রাজ পরিবারের প্রতিনিধি প্রণতকুমার বসু বলেন, এ বার পুজোর ৫০৫ বছর পূর্ণ হবে। যদিও প্রাচীনত্বের এ দাবি ইতিহাসের গবেষকরা মানছেন না। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান আনন্দ গোপাল ঘোষ বলেন, “কোচ বংশের প্রতিষ্ঠাতা বিশ্ব সিংহের অভিষেক হয় ১৫১৫ সালে। তাঁর ভাই শিশু সিংহ বৈকুণ্ঠপুরে বসতি স্থাপন করেন। ওই সময় এখানে দেবী আরাধনার সূত্রপাত হয়েছিল কি না সেই বিষয়ে প্রামাণ্য তথ্য নেই। তবে খুবই পুরনো পুজো বলা যায়।” তিনি জানান, কোচবিহারের মহারাজা নরনারায়ণ ১৫৩৩ সালে সিংহাসনে বসেন। তাঁর দেবী আরাধনা নিয়ে তথ্য এবং লোককথা থাকলেও বৈকুণ্ঠপুরের পুজো নিয়ে তেমন কিছু মিলছে না। কিন্তু এটা ঠিক, বৈকুণ্ঠপুরে দেবী আরাধনা কোচবিহারের পর শুরু হয় বলে আনন্দগোপালবাবু জানান।

তবে প্রাচীনত্ব নিয়ে বিতর্ক যাই থাকুক না কেন, ঐতিহ্যে আজও অম্লান জলপাইগুড়ি রাজবাড়ি অর্থাত্‌ বৈকুণ্ঠপুর রাজ পরিবারের দেবী দুর্গার আরাধনা। এখানে ‘তপ্ত কাঞ্চন’ বর্ণ দেবীর। তাঁর অমোঘ টানে পুজোর ক’টা দিন ধরে দূর-দূরান্তের মানুষ এখানে ভিড় করেন। রাজবাড়ি প্রাঙ্গণে পদ্মপুকুরপাড়ে রাজ পরিবার প্রতিনিধি প্রণতবাবু জানান, দেবী কনক দুর্গা নামে পরিচিত। দেবীর বাহন পাখাযুক্ত শ্বেত সিংহ এবং বাঘ। গণেশ, কার্তিক, লক্ষ্মী, সরস্বতী ছাড়াও থাকেন জয়া, বিজয়া, মহামায়া। শুধু পুজো আয়োজন নয় বংশ পরম্পরার প্রথা মেনে প্রতিমা তৈরির কাজ চলে। এখানে জন্মাষ্টমীর পর দিন নন্দ উসবের আয়োজন হয়। রাজবাড়ি প্রাঙ্গণে অবশ্য স্থানীয় মহলে নন্দ উত্‌সব কাদা খেলা নামে বেশি পরিচিত। ওই দিন কাঠামো পুজোর আয়োজন হয়। সেই সঙ্গে নন্দ উত্‌সব শেষ হলে কাদা সংগ্রহ করে রাখা হয়। মৃত্‌শিল্পী প্রতিমা তৈরির সময় ওই কাদা দেবীর শরীরে মাখিয়ে দেন। প্রতিমা তৈরি করার পরে দেবীকে বেনারসি শাড়ি, নবরত্ন আর সোনা ও রূপোর অলঙ্কারে সাজানো হয়।

এই পুজোর পুরোহিত শিবু ঘোষাল বলেন, “মহালয়ায় রাজ পরিবারের লোকজন তর্পণ করেন। প্রতিপদে ঘট বসে শুরু হয় দেবীর পুজো।” তাঁকে দুর্গা পুজো আয়োজনে সাহায্য করেন দেউরি। দেউরি থাকেন বাজনদার বা ঢাক বাদক। রাজ পরিবারের আরাধনায় সবচেয়ে আকর্ষণীয় ‘অর্ধরাত্রি বিহিত পুজো। যদিও ওই পুজো দেখার নিয়ম নেই। শিবুবাবু বলেন, “শুরুতে অষ্টমী তিথিতে পুজোয় নরবলি হত। ঐতিহ্য ধরে রাখতে এখন চালের গুড়ো দিয়ে পুতুল তৈরি করে তা বলি দেওয়া হয়। কিন্তু ওই পুজো দেখার নিয়ম নেই। পুজোর ভোগ আমিষ। এখানে দেবী কাঠামো নষ্ট করা হয় না। যুগযুগ থেকে একই কাঠামোতে পুজো চলছে।”

puja preparation jalpaiguri raj family
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy