শহরের অধিকাংশ রাস্তা জুড়েই অবৈধ পার্কিং বাস আর অটোর। ফলে দুর্ঘটনার আশঙ্কায় থাকেন পথচারীরা। ছবিটি তুলেছেন অমিত মোহান্ত।
ঘণ্টা দু’য়েক টানা বৃষ্টি হলেই নর্দমার জল উপচে ভাসতে থাকে রাস্তা। কোথাও জল উপচে ঢুকে পড়ে বাড়ির উঠোনেও। গঙ্গারামপুরে বিস্তীর্ণ এলাকার নিকাশির এমনই বেহাল দশা বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। সুষ্ঠু নিকাশি গড়ার ব্যাপারে পুরসভার পক্ষ থেকে পরিকল্পনার কথা ঘটা করা বলা হয় বহু বার। বাস্তবে যে কিছু হয়নি, তা হাড়ে হাড়ে টের পান বাসিন্দারা।
কী বলছেন ভুক্তভোগীরা?
গঙ্গারামপুরে স্কুলপাড়ার বাসিন্দা, ব্যাঙ্কের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী জ্যোতিরিন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বললেন, “একটা সময়ে শহরের রাস্তা বন্যায় ডুবে যেত। এখন বন্যা হয় না, বৃষ্টি বেশি হলে রাস্তা ডুবে যায়। কখনও জল এতটাই বাড়ে যে ঘরে ঢুকে পড়ে অনেক এলাকায়। সুষ্ঠু নিকাশির ব্যবস্থা না হলে এই দুর্ভোগ বাড়বে বই কমবে না।”
দত্তপাড়ার বধূ দীপিকা দত্ত আরও কয়েকটি সমস্যার কথা জানালেন। তা হল, সারা বছর শহরে পরিস্রুত জলের সমস্যা রয়েছে। তাঁর কথায়, “অনেক জায়গায় পাকা নর্দমা থেকে জল গড়ায় না। জমে থাকে। তাই মশা বেড়েছে। পানীয় জল সরবরাহের পরিস্থিতিও পর্যাপ্ত নয়। অনেক দূর থেকে বালতি বয়ে আনতে হয়। বাড়ি বাড়ি জলের ব্যবস্থা খুব জরুরি।”
শহরে পাড়ায়-পাড়ায় বাসিন্দাদের অভিযোগ কম নয়। বসতি বেড়েছে, তবে রাস্তা চওড়া হচ্ছে না। বাসস্ট্যান্ড থেকে নিউ মার্কেট হয়ে দুর্গাবাড়ি রোডে রিকশা, ঠেলা ও ছোট গাড়ির যথেচ্ছ পার্কিংয়ে যানজটে জেরবার বাসিন্দারা। চৌপথী থেকে নতুন বাসস্ট্যান্ডের দিকে চওড়া রাস্তা। সেখানে গাড়ির ভিড়ে চলার পথটাই হারিয়ে গিয়েছে। ওই পথে ফুটপাথ চান শহরবাসী। প্রবীণ ব্যবসায়ী দিলীপ দত্ত বলেন, “শহরের প্রধান রাস্তায় ফুটপাথ নেই। সমস্যায় পড়তে হয়।” তিনি আর একটা সমস্যার ব্যাপারে নেতা-কর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চান। তা হল, গঙ্গারামপুর স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম। তিনি বলেন, “প্ল্যাটফর্ম উঁচু করা জরুরি। বাচ্চা ও বয়স্কদের পক্ষে স্টেশন থেকে ট্রেনে ওঠা সম্ভব নয়। বাধ্য হয়ে অনেককে ১২ কিলোমিটার দূরে বুনিয়াদপুরে ট্রেনে চাপতে হয়। দশ বছর এ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।”
গঙ্গারামপুরের পুরসভার ১৮টি ওয়ার্ডে জনসংখ্যা ৫৬ হাজার। ৩৪ বছর ধরে পুরসভা বামেদের দখলে ছিল। সম্প্রতি পুরবোর্ডের মেয়াদ শেষ হয়েছে। গঙ্গারামপুরের মহকুমাশাসক প্রশাসকের দায়িত্ব পেয়েছেন। দীর্ঘ সময় শহরের দায়িত্ব হাতে থাকলেও কেন বামেরা সে ভাবে উন্নয়ন করতে পারেননি? সদ্য প্রাক্তন চেয়ারম্যান সিপিএম নেতা সুবল বসাকের দাবি, “আমরা যথাসাধ্য উন্নয়ন করেছি। বহু কাজ করতে পারিনি। প্রয়োজনীয় অর্থ মেলেনি।” তাঁর অভিযোগ, তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে পুরসভাকে সে ভাবে অর্থ বরাদ্দ না করায় অনেক প্রকল্প থমকে গিয়েছে।
তবে তৃণমূল নেতা বিধায়ক বিপ্লব মিত্র অন্য কথা বলছেন। তাঁর দাবি, “১২ কোটি টাকা ব্যয়ে শহরের ব্লক অফিসের কাছে ট্যুরিস্ট লজ তৈরির কাজ চলছে। মহকুমা হাসপাতালকে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে গড়ার কাজ চলছে। স্টেডিয়াম, সুইমিং পুল, রাস্তা, শিক্ষাক্ষেত্র থেকে পলিটেকনিক কলেজ চালুর মতো উন্নয়নের সমস্ত কাজ তিন বছরের মধ্যে হয়েছে।”
শহরের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক পার্থ মৈত্র জানিয়েছেন, শহরের সামগ্রিক বিকাশের জন্য এ বার পুনর্ভবা নদীকে হারানো গতি ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। বাণগড়কে ঘিরে যাতে পর্যটনের প্রসার হয়, সে দিকেও সরকারি কর্তাদের নজর দিতে হবে বলে তিনি মনে করেন। পার্থবাবুর মতে, “পুনর্ভবা নদীকে বাঁচাতে হবে। বাণগড়কে কেন্দ্র করে পর্যটন কেন্দ্র গড়তে হবে। তা হলে শহরের গুরুত্ব বাড়বে। কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে।”
(শেষ)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy