Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

পুলিশি নিষ্ক্রিয়তায় দাপট জুয়ার, উঠছে অভিযোগ

নেশার ঠেক এবং জুয়ার আসরে গোলমাল নতুন কিছু নয়। তা নিয়ন্ত্রণ না করাতেই প্রাণ হারাতে হল প্রতিবাদীকে। শুক্রবার রাতের ঘটনার পরে এমনই অভিযোগ তুলছে জলপাইগুড়ির মালকানি হাট এলাকা। ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, রাতে মালকানি হাটে ভিড় কমতে শুরু হয় দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন থেকে ওই পরিস্থিতি চললেও পুলিশ মাঝেমধ্যে তল্লাশি চালিয়ে দায় সারে।

নিহত স্বপনবাবুর স্ত্রী বাসন্তীদেবী ও ছেলে কৃষ্ণ। জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানা চত্বরে। —নিজস্ব চিত্র।

নিহত স্বপনবাবুর স্ত্রী বাসন্তীদেবী ও ছেলে কৃষ্ণ। জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানা চত্বরে। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:৩৬
Share: Save:

নেশার ঠেক এবং জুয়ার আসরে গোলমাল নতুন কিছু নয়। তা নিয়ন্ত্রণ না করাতেই প্রাণ হারাতে হল প্রতিবাদীকে। শুক্রবার রাতের ঘটনার পরে এমনই অভিযোগ তুলছে জলপাইগুড়ির মালকানি হাট এলাকা।

ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, রাতে মালকানি হাটে ভিড় কমতে শুরু হয় দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন থেকে ওই পরিস্থিতি চললেও পুলিশ মাঝেমধ্যে তল্লাশি চালিয়ে দায় সারে। স্থানীয় বাসিন্দারা তো বটেই শাসক দল তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্যও মনে করছেন, শুক্রবার রাতে জুয়ার আসর বসানোর প্রতিবাদ করতে গিয়ে দুষ্কৃতীদের হামলায় মালকানি হাট সংলগ্ন প্রামাণিক পাড়ার বাসিন্দা মুরগির মাংস বিক্রেতা স্বপন সরকারের (৪৫) মৃত্যু সেই পুলিশি নিষ্ক্রিয়তারই পরিণতি। শুক্রবার রাতে দুষ্কৃতীরা ওই ব্যবসায়ীকে লোহার রড, লাঠি দিয়ে পিটিয়ে মারে বলে অভিযোগ। রবিবার ঘটনার খবর জানাজানি হতে ক্ষোভে ফুঁসছে জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের খারিজা বেরুবাড়ি-২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা।

প্রামাণিক পাড়ার তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য পরিমল রায় বলেন, “নেশার ঠেক এবং জুয়ার আসর নিয়ে কয়েকবার পুলিশকে জানিয়েছি। কিন্তু তেমন কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। রাত নটার পরে জুয়া এবং নেশাগ্রস্তদের দখলে চলে যাচ্ছে গোটা এলাকা।” স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুলিশ কড়া ব্যবস্থা নিলে স্বপনবাবুকে বেঘোরে প্রাণ হারাতে হত না। খারিজা বেরুবাড়ি-২ সিপিএম পঞ্চায়েত প্রধান সন্ধ্যা রায় বলেন, “দুষ্কৃতীদের হাত যে কতটা লম্বা হয়েছে সেটা শুক্রবার রাতের ঘটনায় স্পষ্ট।” ঘটনাস্থলের পাশের গ্রাম নগর বেরুবাড়ি এলাকার বাসিন্দা জেলা বিজেপি সভাপতি দীপেন প্রামাণিকের অভিযোগ, “দুষ্কৃতীদের একটা দল হয়েছে। বিকেলের পর থেকেই তারা বাজারে আড্ডা জমায়। নেশা-জুয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকে। ওদের দৌরাত্ম্যে ব্যবসায়ীরা তিতিবিরক্ত হলেও মুখ খুলতে সাহস পায় না। পুলিশ ব্যবস্থা না নেওয়ায় ওই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।”

যদিও জেলা পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, “এর আগে অভিযোগ পেয়ে নেশার ঠেক ভেঙে দেওয়া হয়। এর পরে ফের দুষ্কৃতীদের তাণ্ডব হয়েছে বলে কেউ পুলিশকে জানায়নি।” এ দিকে শুক্রবার রাতের ঘটনার পর থেকে স্থানীয় বাসিন্দারা একটা হেস্তনেস্ত চাইছেন। এলাকার সব্জি বিক্রেতা রবিন রায় বলেন, “দুষ্কৃতীরা রাতে জুয়ার আড্ডা বসায়। ওখানে গিয়ে কতজন যে নিঃস্ব হয়ে বাড়িতে ফিরছে হিসেব নেই। এটাই ওদের কারবার।” ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, নিহত স্বপনবাবু ওই ঘটনা সহ্য করতে পারতেন না। তাঁর সঙ্গে ওই জুয়াড়িদের মাঝেমধ্যেই ঝামেলা বাধত।

ঘটনার পরে শোকে ভেঙে পড়েছে গোটা পরিবার। পড়শিরাও স্তম্ভিত। নিহত ব্যবসায়ীর স্ত্রী বাসন্তীদেবী বলেন, “স্বামী ঝগড়াঝাঁটি পছন্দ করতেন না। কিন্তু কী যে হয়ে গেল বুঝতে পারছি না।” তিনি কোতোয়ালি থানায় ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ছ’জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। তাঁর কথায়, “প্রত্যেক রাতে নেশাগ্রস্তরা জুয়ার আসর বসিয়ে এলাকার কত সংসার শেষ করেছে হিসেব নেই।” স্বপনবাবুর মতো আর কোনও মানুষকে যেন প্রাণ না হারাতে হয় সেজন্য প্রাথমিক শিক্ষক রাখাল রায় অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি তুলেছেন। তিনি বলেন, “এই ধরনের ঘটনা এর আগে কোনওদিন এলাকায় হয়নি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

jaipaiguri gambling
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE