দিল্লি থেকে আসা পর্যটক পরিবারকে ভাড়ার গাড়ি চালকরা মারধর করেছে বলে অভিযোগ। ঘটনাটি ঘটেছে শিলিগুড়ির নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন চত্বরে। ঘটনার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে নিউ জলপাইগুড়ি ফাঁড়িতে। কর্তব্যরত অফিসার প্রথমে অভিযোগ নিতে অস্বীকার করে। পরে সংবাদ মাধ্যম দেখে ও অভিযোগকারীর কথায় অভিযোগ নিতে বাধ্য হয় তারা। পুলিশ কমিশনার বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন। যদিও আইএনটিটিইউসি সমর্থিত এনজেপি স্টেশনের গাড়ি চালক সংগঠনের পক্ষ থেকে এই ঘটনায় তাঁদের কেউ জড়িত নয়, বলে দাবি করা হয়েছে। পর্যটকদের মারধরের বিষয়টি নিয়ে কড়া অবস্থান নিচ্ছেন উত্তরবঙ্গের পর্যটনের সঙ্গে জড়িত সকলেই। তাঁদের পক্ষ থেকে কমিশনারের কাছে ঘটনায় দোষীকে চিহ্নিত করে কড়া শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে। অন্যথায় এলাকায় পর্যটনের উপরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে তাঁরা মনে করছেন। পুলিশের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিরোধী দলগুলিও। মাসখানেক আগেই একই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল স্টেশন চত্বরে। তারপরেও কেন সংশ্লিষ্ট মহলগুলি সাবধান হয়নি, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিকেলে ওই গাড়ির চালক পাসাং শেরপাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মালিককেও খোঁজা হচ্ছে।
পুলিশ কমিশনার বলেন, “এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গাড়িটিকেও আটক করা হয়েছে। মালিককে খোঁজা হচ্ছে।” তবে প্রথমে অভিযোগ নেওয়া হয়নি কেন, তা খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলে জানান তিনি। পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন সকালে জলপাইগুড়ি থেকে ট্রেনে নিউ জলপাইগুড়ি এসে পৌঁছন দিল্লির বাসিন্দা তপন চক্রবর্তী ও তাঁর পরিবার। গ্যাংটক যাওয়ার উদ্দেশ্যে গাড়ি ভাড়া করতে তাঁর ছেলে তরুণ ও মেয়ে অপর্ণা তাঁদের মা বাবাকে হোটেলে বসিয়ে রেখে যান। ভাড়া খুঁজতে গিয়ে তাঁরা একটি এজেন্টের মাধ্যমে একটি গাড়ির চালকের সঙ্গে কথা বলেন। ওই গাড়ি চালক অপর্ণাকে তার গাড়িতে বসিয়ে দরজা লাগিয়ে দেন। কিছুক্ষণ বসার পর আরও লোক ওঠানো নিয়ে তাঁর সঙ্গে চালকের বচসা বাধে বলে অভিযোগ। অপর্ণাদেবী বলেন, “আমি অত লোকের সঙ্গে গাদাগাদি করে যাব না জানানোয় আমাকে জরিমানা দিতে হবে বলে দাবি করে ওই চালক। দিতে অস্বীকার করায় আমাকে ধাক্কা দেওয়া হয় এবং অকথ্য গালিগালাজ করা হয়।” তাঁর দাদা তরুণ তাঁকে বাঁচাতে এলে তাঁকেও কিল, চড় মারা হয় বলে অভিযোগ। তাঁরা ওই ঘটনা জানিয়ে ১০০ নম্বরে ফোন করেন। তাতে নিউ জলপাইগুড়ি ফাঁড়ি থেকে পুলিশের ভ্যান গিয়ে গাড়িটিকে আটক করে নিয়ে যায় থানায়। ওই চালকের হয়ে কয়েকজন তপনবাবুদের চাপ দিতে থাকে মামলা না করার জন্য। তপনবাবু বলেন, “তারা ভুল স্বীকার করে ব্যপারটি মিটিয়ে নিতে বলে। কিন্তু আমার ছেলে ও মেয়েকে মারা হয়েছে। অভিযোগ দায়ের করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থাকব বলে স্থির করেছিলাম।” ঘটনার কথা স্বীকার করেন আইএনটিটিইউসি-র ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি ব্লক সভাপতি বিজন নন্দী। তিনি বলেন, “ঘটনাটি শুনেছি। তবে আমাদের সংগঠনের কেউ তাতে জড়িত নয়। দোষীর কড়া শাস্তির দাবি জানিয়েছি।” অভিযোগের পরে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ বাহিনী। তাঁরা এলাকায় বেআইনি সমস্ত পার্কিং থেকে গাড়ি সরিয়ে দেন। যে সমস্ত গাড়ির চালকদের পাওয়া যায়নি, গাড়িগুলির চাকায় তালা মেরে দেওয়া হয়।
এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন সিকিম পর্যটনের পরামর্শদাতা রাজ বসু। ওই পর্যটকেরা যাতে সঠিক বিচার পান, সেই দাবিতে পুলিশ কমিশনারের দ্বারস্থ হবেন বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, “গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার দ্বিগুণ পর্যটক বাংলার বাইরে থেকে এসেছেন। এই ধরনের ঘটনায় পর্যটনের উপরে প্রভাব পড়বে। এটা বরদাস্ত করা যাবে না।” ঘটনার সঠিক তদন্ত দাবি করবেন বলে জানান ইস্টার্ন হিমালয়ান ট্যুর অ্যান্ড ট্র্যাভেল অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন সম্পাদক সাধন রায়ও। তিনি বলেন, “কোনও মারামারির ঘটনাই সমর্থনযোগ্য নয়। কী হয়েছে পুলিশের এটা খতিয়ে দেখা উচিত। কয়েক জনের জন্য পর্যটনে ক্ষতি হবে, তা মেনে নেওয়া যায় না।” পরে প্যাসিফিক এশিয়া ট্রাভেল্স অ্যসোসিয়েশনের ইন্ডাস্ট্রি কাউন্সিল সদস্য সম্রাট সান্যালও বিষয়টির নিন্দা করেছেন। তিনি বলেন, “পর্যটন এই অঞ্চলের অর্থনীতির মূল স্তম্ভ। তাঁদের হেনস্থা কাম্য নয়। পর্যটক মার খেলে তার প্রভাব উত্তর পূর্ব ভারতে পড়বে।”
পুলিশ এলাকায় টহল দেওয়ার কথা থাকলেও কেন তাঁরা সময় মতো গিয়ে পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে পারেনি, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। সিপিএমের ফুলবাড়ি-১ এর জোনাল সম্পাদক দিবস চৌবে অভিযোগ করেন, পুলিশি টহল থাকার কথা থাকলেও তাঁদের সময় মতো দেখা যায় না, এই ধরনের ঘটনা ঘটলে এলাকার প্রতি মানুষের একটা বিরূপ ধারণা হবে। জেলা কংগ্রেসের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক বিকাশ সরকার বলেন, “পর্যটকদের উপরে আক্রমণ পুলিশের অকর্মণ্যতার পরিচয়। তাঁদের নিরাপত্তা পুলিশকেই দিতে হবে।” বিজেপি-র যুব মোর্চার সম্পাদক বাপি পাল বলেন, “পুলিশ নিষ্ক্রিয়। দোষীর কড়া শাস্তি না হলে আন্দোলনে নামব।”