ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদির মৃত্যুর পর বৃহস্পতিবার রাত থেকে উত্তাল বাংলাদেশ। দেশের প্রথম সারির বাংলা সংবাদপত্র প্রথম আলো এবং ইংরেজি সংবাদপত্র ডেলি স্টার-এর অফিসে রাতে তাণ্ডব চালানো হয়েছে। উত্তেজিত জনতা দুই সংবাদপত্রের দফতরে ঢুকে যথেচ্ছ ভাঙচুর চালায় এবং আগুন লাগিয়ে দেয়। প্রথম আলো-র চারতলা ভবন প্রায় পুরোটাই ভস্মীভূত। পাশে ডেলি স্টার-এর ভবনের নীচের দু’টি তলা আগুনে পুড়ে গিয়েছে। কী ভাবে অফিসের ছাদে বসে আতঙ্কের প্রহর কাটিয়েছেন, পরে তার বর্ণনা দিয়েছেন ডেলি স্টার-এর সাংবাদিকেরা।
সংবাদপত্রের দফতরের সামনে রাতভর বিক্ষোভ, অগ্নিসংযোগ। ছবি: রয়টার্স।
ডেলি স্টার-এর দফতর রয়েছে ঢাকার কারওয়ান বাজার এলাকায় একটি ১০তলা ভবনে। তার অদূরেই প্রথম আলো-র দফতর। রাত ১২টা নাগাদ আগে সেখানে যায় উত্তেজিত জনতা। ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয় ওই ভবনে। পরে বিক্ষুব্ধেরা এগিয়ে আসেন ডেলি স্টার-এর দিকে। বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই সময় ডেলি স্টার-এর এক সাংবাদিক ছাদে ছিলেন। স্লোগান দিতে দিতে উন্মত্ত জনতাকে এগিয়ে আসতে দেখে তিনি সহকর্মীদের সতর্ক করে দেন। রাতে দফতরে যে ক’জন ছিলেন, ছাদে উঠে পড়েন। কেউ কেউ অবশ্য নীচে নামার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তত ক্ষণে ভবনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কালো ধোঁয়ায় ঢেকে গিয়েছে চারপাশ। ফলে তাঁরাও ছাদে উঠে যান। এর পর শুরু হয় আতঙ্কের প্রহর।
আরও পড়ুন:
ডেলি স্টার ভবনের ১০ তলার ছাদে অন্তত ২৮ জন কর্মী আটকে পড়েছিলেন। নীচে তাঁদের দফতরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। চলে যথেচ্ছ ভাঙচুর। প্রাণের ভয়ে ক্যান্টিনের এক কর্মী পাইপ বেয়ে নীচে নামার চেষ্টা করেছিলেন। তাঁকে নাগালের মধ্যে পেয়ে গণধোলাই দেয় উন্মত্ত জনতা। সেই দৃশ্য সহকর্মীরা ছাদে বসে দেখেন। আর কেউ বেরোনোর চেষ্টা করার সাহস পাননি। এ ভাবে চার ঘণ্টারও বেশি সময় তাঁরা ছাদে বসে ছিলেন।
উন্মত্ত জনতার তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত ডেলি স্টার-এর ভবন। ছবি: রয়টার্স।
দমকলের কর্মীরা দফতরের নীচের তলার আগুন নেবানোর চেষ্টা করছিলেন। তাঁদের মধ্যে থেকে জনা চারেক ছাদে পৌঁছোন। কিন্তু তাতে আর এক বিপদ! বিক্ষোভকারীরাও ছাদে পৌঁছে যান। কোনও রকমে দরজা বন্ধ করে তাঁদের আটকানো গিয়েছে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকেরা জানিয়েছেন, ছাদের বড় বড় গাছের টব দরজার সামনে রেখে ব্যারিকেড তৈরি করা হয়েছিল, যাতে সহজে দরজা না-ভাঙা যায়। বেশ কিছু ক্ষণ ছাদের দরজায় ধাক্কাধাক্কি করে উন্মত্ত জনতা। পরিস্থিতি সামাল দিতে নামে বাংলাদেশের সেনা।
উদ্ধারকারী সেনা জওয়ানেরা ভোর পৌনে ৪টে নাগাদ আপৎকালীন সিঁড়ির বন্দোবস্ত করে ছাদ থেকে সাংবাদিকদের উদ্ধার করেন। তারও অনেক পরে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসে ভবনের আগুন। বহু গুরুত্বপূর্ণ নথি, ছাপার যন্ত্রপাতি, সরঞ্জাম এবং সংরক্ষিত কাগজ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। বিক্ষোভকারীদের শান্ত করতে গিয়ে মার খেয়েছেন সম্পাদক পরিষদের সভাপতি নুরুল কবীর এবং চিত্রসাংবাদিক শহিদুল আলম। ডেলি স্টার-এর সাংবাদিক জ়াইমা ইসলাম রাতেই সমাজমাধ্যমে লিখেছিলেন, ‘‘আমি আর নিশ্বাস নিতে পারছি না। প্রচণ্ড ধোঁয়া। আপনারা আমাদের মেরে ফেলছেন।’’
প্রথম আলো এবং ডেলি স্টার— উভয় দফতরেই কার্যক্রম সাময়িক ভাবে স্থগিত রয়েছে। তারা শুক্রবার সকালে বিবৃতি জারি করে পরিস্থিতির কথা জানিয়েছে এবং সহযোগিতার আবেদন জানিয়েছে সাধারণ মানুষের কাছে।