Advertisement
E-Paper

বিধায়কের বিরুদ্ধে রক্ষীকে মারধরের অভিযোগ

দলবল নিয়ে ওয়ার্ডে ঢোকার সময় উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এক নিরাপত্তা রক্ষী তাঁদের কিছু ক্ষণ দাঁড়াতে বলেছিলেন। সে কারণে তাঁকে বেধড়ক মারধর করার অভিযোগ উঠেছে মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির কংগ্রেসের বিধায়ক শঙ্কর মালাকারের বিরুদ্ধে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৫ ০২:৩৪

দলবল নিয়ে ওয়ার্ডে ঢোকার সময় উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এক নিরাপত্তা রক্ষী তাঁদের কিছু ক্ষণ দাঁড়াতে বলেছিলেন। সে কারণে তাঁকে বেধড়ক মারধর করার অভিযোগ উঠেছে মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির কংগ্রেসের বিধায়ক শঙ্কর মালাকারের বিরুদ্ধে।

গত শনিবার দুপুরে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এই ঘটনার পরে শঙ্করবাবু মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, ওই কর্মী মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন। দলের এক অসুস্থ কর্মীকে দেখতে গেলে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ওই রক্ষী তাঁকে হেনস্থা করতে চেষ্টা করেন। তিনি তখনই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফাঁড়িতে ফোন করে পুলিশ ডাকেন। পুলিশ গিয়ে ওই রক্ষীকে আটক করেছে। ঘটনার দু’দিন পরে সোমবার ওই নিরাপত্তা কর্মী শঙ্করবাবুর বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ করলেন। তিনি ওই হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন।

এই ঘটনায় হাসপাতালের কর্মী-আধিকারিকদের একাংশের মধ্যে অসন্তোষ দানা বেঁধেছে। পুলিশ শনিবার শঙ্করবাবুর অভিযোগ মতো ওই কর্মীকে গ্রেফতার করে তাঁকে রাতে ছেড়ে দেন। মারধরে চোটে গুরুতর অসুস্থ বোধ করায় রবিবার সকালে ওই নিরাপত্তাকর্মী নেপালচন্দ্র দাসকে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। কর্তব্যরত অবস্থায় ওই ব্যক্তিকে মারধর করা হলেও হাসপাতালের তরফে কেন পুলিশে কোনও অভিযোগ জানানো হয়নি, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নিরাপত্তার কাজে যুক্ত ব্যক্তিরা। বিধায়ক ঘটনায় জড়িত বলেই বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে বলেও অভিযোগ।

তা ছাড়া শঙ্করবাবু ওই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতিরও সদস্য। শঙ্করবাবুর অবশ্য পাল্টা অভিযোগ, “মদ্যপ অবস্থায় একজন নিরাপত্তা কর্মী কাজ করছেন, এটা দুর্ভাগ্যজনক। সঙ্গে থাকা লোকজন তা নিয়ে ওই কর্মীকে বলতে গেলে তিনি সে কিছু শুনতে চায়নি। তাঁকে আমাদের কেউ মারধর করেনি। সেখান থেকে পুলিশকে ফোন করেছি। পুলিশ এসে ব্যবস্থা নিয়েছে।” উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী তথা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান গৌতম দেব জানান, বিষয়টি তাঁর জানা নেই। তিনি বলেন, “কেউ এ ব্যাপারে কিছু জানাননি। খোঁজ নিচ্ছি।” হাসপাতালের সুপার সব্যসাচী দাস বলেন, “ওই কর্মী মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন বলে জানতে পেরেছি। বিধায়ককে সে হয়তো চিনতে পারেনি। খবর পেয়ে সেখানে গিয়েছিলাম। তবে তত ক্ষণে পুলিশ ওই কর্মীকে ধরে নিয়ে যায় বলে জানতে পারি।”

হোলির দিন গোলমাল, মারধরে গুরুতর জখম হল অর্জুন হেলা নামে এক কংগ্রেস কর্মী। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শল্য বিভাগে ওই রোগী ভর্তি রয়েছেন। শনিবার তাঁকে দেখতে গিয়েছিলেন শঙ্করবাবু। দোতলায় শল্য বিভাগে যেতে মেডিসিন বিভাগের করিডর দিয়েই ঢুকতে হয়। করিডরের সামনে গ্রিলের দরজায় সে সময় নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন নেপালবাবু। হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে নেপালবাবু জানান, বিধায়ক ২০-২৫ জন লোক নিয়ে ঢুকছিলেন। সে সময় এক রোগীকে ট্রলিতে করেও আনা হচ্ছিল। নেপালবাবু বলেন, “ওই রোগীকে ঢোকার জায়গা দিতেই বিধায়কের লোকদের দাঁড়াতে বলেছিলাম। তাতে অসন্তুষ্ট হয়ে ‘কি রে বিধায়ককে চিনিস না’ বলে ওনার লোকজন ধাক্কা দেয়। আমি তাঁকে চিনতে পেরেছি। রোগীর জন্য দাঁড়াতে বলেছিলাম বলে ক্ষমাও চাই। কিন্তু ওরা কিছু শুনতে চায়নি। বিধায়ক হাতে কিছু একটা নিয়ে তা দিয়ে আমার মুখে মারে। এর পর ওদের লোকজন আমাকে বারান্দা থেকে টেনে নামিয়ে পেটায়। পুলিশ ডেকে আমি মদ্যপ বলে অভিযোগ করে।” পুলিশ তাঁকে ধরে নিয়ে যায় মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফাঁড়িতে। সেখানে রাত পর্যন্ত বসিয়ে রাখে। রাত সাড়ে ৯ টা নাগাদ তাঁকে ছাড়া হলে নেপালবাবু শরীরে প্রচণ্ড যন্ত্রণা নিয়ে বাড়ি যান। এ দিন সকালে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। নেপালবাবুর দাবি, “আমি মদ্যপ ছিলাম না। মদ্যপ থাকলে কাজ করব কী করে। বিধায়কের লোকজনকে ঢুকতে না দেওয়ায় আমি মদ্যপ বলে তাঁরা মিথ্যে অভিযোগ করছে।” তিনি জানান, অসুস্থ ছিলেন বলেই শঙ্করবাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে তাঁর দেরি হল।

নিরাপত্তা বিভাগের দায়িত্বে থাকা সুপারভাইজার কার্তিকচন্দ্র দে বলেন, “ওই কর্মীকে বিধায়কের সামনেই মারধর করা হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। তা নিয়ে কর্মীদের মধ্যেও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। হাসপাতালের তরফে এ ব্যাপারে অভিযোগ করা দরকার। অন্যথায় কর্মীরা মিলে অভিযোগ করবেন বলে ঠিক করেছেন।” কর্মীদের অভিযোগ, পুলিশ কি পরীক্ষা করে দেখেছে, নেপালবাবু মদ্যপ ছিলেন কি না? তা ছাড়া, নেপালবাবু মদ্যপ থাকলে তা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানাতে পারতেন বিধায়ক। তা না করে মারধর করা ঠিক নয়। বিষয়টি তাঁরা কেউই মেনে নিতে পারছেন না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

siliguri north bengal medical college shankar malakar mla
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy