উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় দেড় কোটি টাকা নয়ছয়ের মামলায় ‘সাসপেন্ড’ রেজিস্ট্রার দিলীপ সরকারের বিরুদ্ধে পুলিশ আগেই চার্জশিট দিয়েছিল। এ বার উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগীয় তদন্তেও দিলীপবাবুর বিরুদ্ধে কোটি টাকা নয়ছয়ের অভিযোগের স্পষ্ট প্রমাণ মিলেছে। মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসমিতির সভায় ওই রিপোর্ট পেশ হয়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক তথা বর্তমানে কলিঙ্গ ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির আইন বিভাগের ডিরেক্টর নির্মলকান্তি চক্রবর্তী ওই বিভাগীয় তদন্ত করেছেন।
বিধি অনুযায়ী, বিভাগীয় তদন্তের রিপোর্টের ভিত্তিতে এখন দিলীপবাবুর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়কে ব্যবস্থা নিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, কর্মসমিতি রিপোর্ট গ্রহণ করলেও এ ব্যাপারে কী পদক্ষেপ করা হবে, তা নিয়ে আইনজ্ঞদের মত নেওয়া হবে। এই ব্যাপারে দু’টি মামলা সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। সে জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে সুপ্রিম কোর্টে যিনি আইনি লড়াই করছেন, তাঁর মতামত নিয়ে পা ফেলতে চান কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সোমনাথ ঘোষ বলেছেন, “রিপোর্টটি কর্মসমিতিতে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে। এর বেশি কিছু বলছি না।”
উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে বাম আমলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘কনফিডেন্সিয়াল অ্যাকাউন্ট’-এ ফি বছর লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ হতো। ২০০৯ সালে তত্কালীন উপাচার্য অরুণাভ বসু মজুমদার ওই অ্যাকাউন্টের হিসেব নিয়ে নানা অভিযোগ পান। তিনি তিন দফায় তা নিয়ে তদন্ত করার পরে অভিযোগ যে সত্য, তার প্রমাণ পান। তিনটি তদন্তেই অভিযোগের তির যায় প্রাক্তন পরীক্ষা নিয়ামক তথা তত্কালীন রেজিস্ট্রার দিলীপবাবুর বিরুদ্ধে। তখনকার পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য থেকে শুরু করে অনেক বাম নেতা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে উপাচার্যের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগে সমালোচনা করেন। কিন্তু অরুণাভবাবু ২০১০-র মার্চে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে দিলীপবাবু-সহ কয়েক জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। দিলীপবাবু উচ্চ আদালতে আগাম জামিন পান। পরে সাসপেন্ড হন। শুরু হয় বিভাগীয় তদন্ত। সেই রিপোর্ট ২০১১-এ উপাচার্যের কাছে জমা পড়ে। দিলীপবাবু কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন করলে বিভাগীয় তদন্ত এবং সাসপেনশনের উপরে স্থগিতাদেশ পান। সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হাইকোর্টের রায়ের উপরে স্থগিতাদেশ পান।
এই অবস্থায়, ওই বিভাগীয় তদন্ত রিপোর্ট পেশ করা হয়। নানা নথিপত্র ও ১৮ জন্যের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে ৩৯ পাতার রিপোর্টের শেষে আর্থিক দুর্নীতি, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অমান্য ও একটি ছাপাখানাকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার ব্যাপারে দিলীপবাবুকে দায়ী করেছেন তদন্তকারী অফিসার। বাম আমলে পার্থ চট্টোপাধ্যায়, গৌতম দেবের মতো নেতারা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতির চার্জশিট দিতে বামেদের গড়িমসি নিয়ে সরব হন। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে তৃণমূল জমানায় পুলিশ চার্জশিট দিয়েছিল। এখন পার্থবাবু শিক্ষামন্ত্রী, গৌতমবাবু উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী। দু’জনেই জানান, দুর্নীতির সঙ্গে আপসের প্রশ্নই ওঠে না। দিলীপবাবুর দাবি, “সুপ্রিম কোর্টে যা বিচারাধীন, তা নিয়ে কর্মসমিতিতে কী ভাবে আলোচনা হল, বুঝতে পারছি না। আমি সব টাকা চেকে দিয়েছি। সব কিছু উপাচার্যের নির্দেশ মেনে করেছি। তা হলে নয়ছয়ের অভিযোগ কেন?” অশোকবাবুর দাবি, “বিষয়টি বিচারাধীন। তা সত্ত্বেও রিপোর্ট পেশ করা হল কী করে?” বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্তা জানান, আইনজ্ঞদের পরামর্শ নিয়েই পদক্ষেপ করা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy