উত্তরবঙ্গের দুই বাংলোয় বিদ্যুৎ বিভ্রাটের তদন্ত করতে দু’জন অভিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ারকে আলিপুরদুয়ারে পাঠাল রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা। বুধবার রাতে মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন মাদারিহাটে রাজ্য পর্যটন দফতরের অতিথি নিবাসে। সেখানে রাত ৮টা থেকে চার দফায় লোডশেডিং হয়। প্রতি বারই জেনারেটর চালাতে কিছু ক্ষণ সময় লাগে। অদূরে হলংয়ের বাংলোয় ছিলেন মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র। সেখানেও জেনারেটর ঠিকঠাক চলছিল না। কী কারণে এই বিদ্যুৎ বিভ্রাট, দুই ইঞ্জিনিয়ার তা খতিয়ে দেখবেন। বিভ্রাট এড়াতে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল, সেই তদন্তও করবেন তাঁরা। পাঁচ দিনের মধ্যে বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার কর্তৃপক্ষের কাছে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে তাঁদের।
প্রাথমিক ভাবে যে রিপোর্ট বিদ্যুৎ ভবনে পৌঁছেছে, তাতে ওই রাতে মাদারিহাটে ৪ দফায় মোট ১৯ মিনিট এবং হলং বাংলোয় কয়েক দফায় মোট ১ ঘণ্টা ১৯ মিনিট লোডশেডিং হয়। এর জেরে গত বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার আলিপুরদুয়ারের ডিভিশনাল ম্যানেজার সৌমেন দাসকে সাসপেন্ড করা হয়। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদ ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন এর প্রতিবাদ জানিয়ে বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছে। সংগঠনের সভাপতি কমলেশ চৌধুরী শনিবার এ কথা জানিয়েছেন। তাঁরাও পৃথক ভাবে ওই ঘটনার তদন্ত করে দেখবেন বলে জানান তিনি।
সৌমেনবাবু নিজে এ নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া জানাতে রাজি হননি। তবে ওই ডিভিশনের কোনও কোনও অফিসারের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী জয়ন্তীতে সরকারি বাংলোয় থাকবেন বলেই খবর ছিল ডিভিশনাল ম্যানেজারের কাছে। সেখানে বিদ্যুৎ সরবরাহের লাইন আগাম পরীক্ষা করে দেখেছিলেন তিনি। অতিরিক্ত ট্রান্সফর্মারের ব্যবস্থাও করে রাখেন সৌমেনবাবু। যাতে একটি ট্রান্সফর্মার বিকল হলে অন্যটি কাজে লাগে। কোনও যান্ত্রিক ত্রুটি হলে যাতে চটজলদি সারিয়ে ফেলা যায়, তার জন্য কিছু কর্মীর সঙ্গে সৌমেনবাবু নিজেও জয়ন্তীতে চলে গিয়েছিলেন। তাঁর ডিভিশনের অনেকের দাবি, জয়ন্তীর মতো মাদারিহাট বাংলোতেও বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা পরীক্ষা করে দেখেছিলেন সৌমেনবাবু। তবে জয়ন্তীর বিদ্যুৎ পরিষেবা ঠিক রাখার দিকেই তাঁর নজর ছিল বেশি।
বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার একাধিক ইঞ্জিনিয়ার ও অফিসার কিছুটা আক্ষেপের সঙ্গেই বলেছেন, ইদানীং মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর সফরসঙ্গীরা কে, কোথায় থাকবেন, সে সম্পর্কে আগাম তথ্য তাঁরা অনেক সময় জানতে পারেন না।
তা ছাড়া, ভিভিআইপি-র যেখানে থাকার কথা, সেখানে না থেকে রাতে অন্যত্র থাকলে বিভ্রাট ঠেকাতে নানা জায়গায় যে কর্মী ও সুরক্ষা ব্যবস্থা রাখা হয়, তা সরাতেও সময় লাগে। ওই রাতে মুখ্যমন্ত্রীর থাকার কথা ছিল জয়ন্তীতে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের বাংলোয়। পরে মত বদলে তিনি মাদারিহাটে যান।
বিদ্যুৎ বণ্টন কর্তৃপক্ষের অবশ্য বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী যেখানে খুশি থাকতে পারেন। কিন্তু তিনি যখন ওই ডিভিশনাল ম্যানেজারের পরিষেবা এলাকার মধ্যে রয়েছেন, তখন সেই এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক রাখার দায়িত্ব তাঁরই। বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটলে ভিআইপিদের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উপরেও প্রভাব পড়তে পারে। তবে এই প্রশ্ন উঠেছে যে, বাংলো দু’টিতে জেনারেটর ঠিকঠাক চালানোর দায়িত্ব যাঁদের, তাঁরাই বা দায় এড়াবেন কী করে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy